প্রতিনিধি ১৩ আগস্ট ২০২৪ , ১:১৯:৪৬ অনলাইন সংস্করণ
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনকারীদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ গণ্য এবং তাদের সফল আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বিভিন্ন থানা,গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়,গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ,ডাক বিভাগ,ভূমি মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, শেখ হাসিনার স্বৈর শাসনের আপাত: পতন ঘটলেও বিচার বিভাগ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দফতরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিগত সরকারে প্রশাসন ও কর্মকর্তারা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে ‘ব্যর্থ’ করে দিতে সুকৌশলে তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, এদেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামীলীগ নেতা, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী আমলারা পুরোদমে সক্রিয় রয়েছেন। এর প্রমাণ মেলে গতকাল ১২ আগস্ট ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়য়ের প্রশাসন-১ শাখার ইস্যুকৃত একটি চিঠিতে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব খান শাহনুর আলম স্বাক্ষরিত এ চিঠিটি [(স্মারক নং-১৬.০০.০০০০.০০১.৩০.০১৩.১৮ (অংশ-১).৯৭২ ] পাঠানো হয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়’এ। খান শাহানুর আলম তার চিঠিতে ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ জুলাই,২০২৪ তারিখ হতে ২১ জুলাই,২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে কোটা-বিরোধী আন্দোলনের নামে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ,লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের লক্ষ্যে তথ্য সরবরাহ প্রসঙ্গে।’
চিঠিতে সূত্র উল্লেখ করে খান শাহানুর আলম বলেন, উপর্যুক্ত বিষয়ে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান এর নেতৃত্বে তদন্ত কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়: সুপ্রীম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার, অডিটরিয়াম ভবন (নিচতলা), সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ, ঢাকা হতে সূত্রে প্রাপ্ত পত্রে ‘কমিশন অব ইনকয়েরী অ্যাক্ট,১৯৫৬ এর ৩ ধারা বলে এসআরএ নম্বর: ২৮-০-আইন/২০২৪: তারিখ : ০১/০৮/২০২৪) মোতাবেক গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হতে ২১ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত কোটা-বিরোধী আন্দোলনের নাে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও মূল্য সম্পর্কিত তথ্য নির্ধারিত ছকে আগামি ১৪/০৮/২০২৪ তারিখের মধ্যে তদন্ত কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রেরণের অনুরোধ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, তার আওতাধীন দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও মূল্য সম্পর্কিত তথ্যাদি নির্ধারিত ছকে পূরণপূর্বক আগামি ১৩/০৮/২০২৪ তারিখের মধ্যে এ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের অনুরোধসহ প্রাপ্ত পত্রের ছায়ালিপি নির্দেশক্রমে এতদসংগে প্রেরণ করা হলো। বিষয়টি জরুরি।
এদিকে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের মন্ত্রণালয় পতিত সরকার আমলে গঠিত কথিত কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে কথিত এ তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে কি না ? কিংবা এটি অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কি না-জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, এ ধরণের চিঠির তথ্য আমার জানা নেই। আমার অগোচরে ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসনকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা চিঠি প্রত্যাহার করেছি। চিঠি ইস্যুকারীকে শো-কজ করেছি। ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ূন কবির বুলবুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। কিন্তু বিভিন্ন সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে। পতিত স্বৈরাচার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন যে ভাষায় বিভিন্ন দফতরে নোটিশ পাঠিয়েছে, সেটা চরম ধৃষ্টতার পরিচয় বহন করে। তারা কার্যত: ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। অবিলম্বে পক্ষপাতদুষ্ট তথাকথিত এ কমিশন বাতিল করা জরুরি। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্য করছি, নোবেল বিজয়ী অর্থর্নীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে নানামাত্রিক ষড়যন্ত্র চলছে। আমি মনে করি এ ধরণের কমিশনকে এখন অবধি বাঁচিয়ে রাখা এবং সেটির ভিত্তিতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সেই গুরতর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।
প্রসঙ্গত: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে গত ১৬ জুলাই কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদসহ অন্তত: ৬ জন। এ ঘটনায় গত ১৮ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। পরবর্তীতে কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৩ জন করা হয়। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট স্বৈরচার শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হয়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এ সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।