প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৪ , ১০:০৮:১১ অনলাইন সংস্করণ
সাভারে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশের উপর্যুপরি গুলিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা গেছেন নারীসহ ৯ জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ধামরাই থানায় আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
বিকালে সাভার থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে গেলে থানার সামনে বিভিন্ন যানবাহন ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সাভার থানার দিকে অগ্রসরমান হাজারও জনতার মিছিলে পুলিশ উপর্যুপরি গুলি ছোড়ায় বেড়েই চলে নিহতদের সংখ্যা।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশুলিয়া থানার বাইপাইল থেকে সাভার থানা রোড পর্যন্ত।
উন্মুক্ত জনতা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সেখানেও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাছ ব্যবসায়ী রমজানসহ (৪০) দুইজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরে আন্দোলনকারীরা ঢাকার দিকে অগ্রসর হলে সাভার বাজারের বাসস্ট্যান্ডে সূচনা হয় সংঘর্ষের। তার আগে পরিস্থিতির বাছবিচার না করেই কারফিউ ভঙ্গ করে বাইরে কেন- এই অপরাধে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এতে গুলিবিদ্ধ হন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন্নবীসহ অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে এক তরুণীসহ তিনজন মারা যান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে ক্ষুব্ধ জনতাও তাদের ধাওয়া করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ থানা রোডের পুলিশ হাউজিংয়ের বহুতল ভবনে আশ্রয় নিলে ক্ষুব্ধ জনতা তাদের ঘিরে ফেলে।
এ সময় জনতাকে লক্ষ্য করে ভবনের ওপর থেকে গুলি ছোড়া হলে গুলির মুখেই জনতা ওই ভবনে উঠে পড়ে।
এ সময় উপর্যুপরি গুলিতে মারা যান আরও ৫ জন। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতার আরেকটি অংশ থানা অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখান থেকে গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্রোতের মতো গুলিবিদ্ধরা আসতে থাকেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ মানুষকে একযোগে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ধামরাই থানা পুড়িয়ে দেওয়া ও সাভার থানা আক্রান্ত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
থানায় আক্রান্ত একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেটা না পেয়ে এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি ট্রাকে করে পালিয়ে যান সাভার মডেল থানার কর্মকর্তারা।
এদিকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আলম সমর, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ টিপুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভার মডেল থানার ৪০-৫০ জন পুলিশ ১২টি গাড়ি নিয়ে সাভার থেকে শিমুলতলা হয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। এ সময় তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করেও গুলিবর্ষণ করতে থাকে পুলিশ। এতে কতজন হতাহত হয়েছেন জানা যায়নি। তিন থানা ভাঙচুরের পর ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইজুড়ে।