স্টালিন সরকার এর কলাম ৬ আগস্ট ২০২৪ , ১০:২২:১২ অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ এতোদিন কার্যত ভারতের ছাতার নীচে দিল্লির পুতুল সরকার ছিল। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতোই দিল্লিকে খুশি করে দেশকে কার্যত ভারতের ‘অঙ্গরাজে’ পরিণত করেছিল। মমতা ব্যানার্জী যে ভাষায় মোদীর বিরুদ্ধে কথা বলেন, সে ভাবে কথা বলাও শেখ হাসিনার সাহস ছিল না।
এ সুযোগে ভারত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সরকারে বেসরকারি প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনীর ভিতরেও নিজেদের লোক সৃষ্টি করেন। তারাই (ভারতীয় সেবাদাস আমলা ও আইন শৃংখলা বাহিনীতে থাকা সদস্য) কার্যত বাংলাদেশ পরিচালনা করেছেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তারা আগে দিল্লির স্বার্থ দেখেছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা, ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতে ব্যালটে সিল এবং ২০২৪ সালের ‘ডামি প্রার্থীর’ নির্বাচনে পর্দার আড়াল থেকে ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসে জনগণের ওপর ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৬ বছর এই নিষ্ঠুরতার পর দেশের ছাত্রসমাজের গণঅভ্যত্থানে ভারতের সেবাদাস ও মোদীর নাচের পুতুল শেখ হাসিনা রেজিমের পতন ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা এখন পালিয়ে গেছেন ভারতে। প্রশ্ন হচ্ছে এখন কি বাংলাদেশ ভারতের রাহুমুক্ত হয়েছে? উত্তর হচ্ছে ‘না’।
সরকারি প্রশাসনে আমলা, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবিতে এখনো ভারতের তাবেদার কর্মকর্তা রয়ে গেছেন এবং অপকর্মের জন্য প্রহর গুনছেন। শেখ হাসিনা পালানোর পর রাষ্ট্রীয় নানা স্থাপনায় আগুন দেয়া, মানুষকে পিটিয়ে মারা, থানায় থানায় হামলা, সংখ্যালঘুদের বাসায় আক্রমন, মন্দিরে হামলার চেষ্টা এমন কিছু অঘটন ঘটছে। এগুলো কারা করছে? অপ্রিয় হলেও সত্য যে এ অপকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের আশির্বাদপুষ্ট প্রশাসনে থাকা ওই ব্যাক্তিরা। এসব ব্যক্তি বর্তমান পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব, বিজিবি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঘাপটি মেরে রয়েছে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা কমিটির পরতে পরতে এই ভারতীয় এজেন্ট লুকিয়ে রয়েছে। তারাই মূলত শেখ হাসিনা পালানোর পর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে ভারতকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা রেজিমের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্র তৈরি করছে।
এর আগে আমরা দেখেছি চট্টগ্রামে বিআরটিসির বাসে আগুন দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতা ৫ লাখ টাকায় সন্ত্রাসী ভাড়া করেছে। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মেট্রোরেলের দু’টি স্টেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস মালিক সমিতির নেতাদের ইন্দনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মহাখালির সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কারা হামলা করেছে সে ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি।
সবকিছুই করা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায়।
গতকালও নোয়াখালির চাটখিলে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করে আগুন দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ছাত্রলীগের দুই নেতা। এখন গত ২৪ ঘন্টা থেকে দেশে যে অপকান্ডগুলো ঘটছে সেগুলোও কার্যত ভারতের র এর এদেশীয় এজেন্টরাই করেছে।
যারা সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সেক্টরে এখনো ঘাপটি মেরে রয়ে গেছেন। কারণ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোনো ধর্মীয় ইস্যু ছিল না। সব ধর্মের শিক্ষার্থীরাই কোটা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। সংগঠনের নেতারা বাব বার ভাংচুর, রাষ্ট্রীয় সম্পদে অগ্নিসংযোগ, মানুষের বাসায় আক্রমন এসব না করার আহবান জানিয়েছেন। এমনকি শেখ হাসিনা পালানোর পর ছাত্র নেতারা দেশবাসীকে হিন্দুদের বাসায় ভারতীয় এজেন্টরা আক্রমন করে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নিতে পারে সে আশঙ্কা প্রকাশ করে ‘প্রহরা’ বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম দিকে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সরকার যখন ছাত্রলীগকে অস্ত্র গোলা-বারুদসহ মাঠে নামিয়ে ওবায়দুল কাদের হুংকার দিলো ‘ছাত্রলীগই এদের শায়েস্তা করতে যথেষ্ট’। এরপর থেকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারতে শুরু করে। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, শেখ হাসিনা বোন রেহানাসহ ১৪ জনকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রথমে অবাক হয়েছে। অতপর দুই দেশের সীমান্তে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের গণঅভ্যূত্থান নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। সেখানে এমপিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার পতন, সেনাবাহিনীর পরিস্থিতি সামাল দেয়া এবং প্রতিবাদ বিক্ষোভ নিয়ে সর্বদলীয় ওই বৈঠকে ব্রিফ করেন জয়শঙ্কর। একই সঙ্গে পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন তিনি। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ। ওই বৈঠকে রাহুল গান্ধি কোনো বিদেশী শক্তির ইন্দনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে কিনা জানতে চান। তিনি এ অবস্থায় ভারত সরকারের করণীয় জানতে চান।
শেখ হাসিনার পতনে ভারতে এরই যুদ্ধংদেহি অবস্থায় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের আন্তবর্তীকালীন সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে নজর রাখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একই ভাবে বাংলাদেশের নতুন সরকার এবং সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন।
তারপরও হিন্দুত্ববাদী ভারত হচ্ছে বিষাক্ত সাপের মতো। কখন ফনা তুলে ছোঁবল মারবে কেউ জানেনা। ইতোমধ্যেই দাবি উঠেছে শেখ হাসিনা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিসিয়ে দিয়ে দিল্লির সুবিধার জন্য গত ১৬ বছরে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছেন সেগুলো ‘স্থাগিত’ করতে হবে। পরে চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কারণ শেখ হাসিনা নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের দাস হয়েছিলেন।
ইতোমধ্যেই দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি উঠেছে। দেশের সব শ্রেণির মানুষ এ দাবি জানাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহসহ বিভিন্ন সময় দেশে ৫৮ সেনা অফিসারসহ অনেককে হত্যা করেছেন। এ ছাড়া তিনি অনেকগুলো গণহত্যা করেছেন। আয়না করে বছরের পর বছর মানুষকে বন্দী করে রেখেছেন। অর্ধশত মানুষকে গুন করেছেন। বিপুল পরিমান টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানদগুলোকে ধ্বংস করেছেন। ফলে তার বিচারের দাবি উঠেছে। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের উচিত গণহত্যার হোতা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া। গতকালও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ভারতে থাকা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন,
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিন। তার নেতৃত্বে সব লুটপাট করে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে আওয়ামী নেতারা।
তারা যেন ব্যাংক থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করতে না পারে সেজন্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারপতিরা শপথ ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন তাদের বিচার করতে হবে। তবে ভারতের উচিত সবাগ্রে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া।
’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহায়তা করলেও এই দীর্ঘ ৫৪ বছরে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু প্রমাণ দিতে পারেননি। বিভিন্ন সময় দেশটি বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ নানান আগ্রাসন চালিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর ভারতের ভয়ঙ্কর আগ্রাসন শুরু হয় ২০০৮ সালে। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনীতে সে ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। ২০০৮ সালে ড. ফখরুদ্দিন-মঈন উ আহমদের নের্তৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ওপর ভারতের ওপেন দাদাগিরি শুরু হয়। ভারতের ইন্দনে ওই সময় প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল চক্রবর্তীসহ চারজন উপদেষ্টা। সে সময় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখার কৌশল নেয়। যার কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর দিল্লির সাউথ ব্লক বাংলাদেশে দাদাগিরি করেছে। পতিত শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিদেশ সফরে গেলেও ‘ভারতের অনাপত্তি পত্র’ নিয়ে যেতে হতো।
ভারত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের সময় বহু প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ভারত মনোনীত প্রার্থী। আমাদের পরাজিত করা সম্ভব নয়’। শুধু তাই নয় দেশের ভিতরেও কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিককর্মী ‘তথাকথিত জঙ্গি কার্ড’ ব্যবহার করে ভারতের দাদাগিরির পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছে। একাধিক টেলিভিশন এ কাজে সহায়তা করেছে। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক ও একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা তথাকথিত প্রগতিশীলতার ঝা-া (!) উড়িয়ে দিল্লির অনুগতদের খুশি করতে লজ্জাজনক ভুমিকা রেখেছে বছরের পর বছর ধরে।
সম্পতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভারত লম্ফঝম্ফ করেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই আগুন জ্বালানোর খবর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আগে ভারতের সাংবাদিকরা পেয়েছেন। তারা এ নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন।
আন্দোলনের সময় বিজিবির সদস্যকে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে বলতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা বিজিবির ওই সদস্যকে ধরে নাম জিজ্ঞেস করছে। গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ সময় আন্দোলনকে ‘ধর্মীয় কালার’ দিতেই আইন শৃংখলা বাহিনীর ভিতরে লুকিয়ে থাকা ভারতের কিছু এজেন্ট এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়ি, মন্দিরে হামলা করাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দেশটা আমাদের। যাতে কেউ হিন্দুদের ওপর আক্রমন করতে না পারে, কারো সম্পদের ক্ষতিসাধন করতে না পারে।
ভারতের মোদী সরকারের সর্বদলীয় জরুরী বৈঠক দেখে মনে হচ্ছে তারা দিল্লির পুতুল ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত’ ঘটনা ভালভাবে নেননি। যার কারণে জরুরী বৈঠক করে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। দুই দেশের ৪,১৫৬.৫৬ কিলোমিটার লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানায় রেড অ্যালার্ট জারী করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের দায়িত্বশীলদের আমলে নিতে হবে। তবে মোদী সরকারকেও মনে রাখতে হবে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামীদের নীরব রাখতে ভুমিকা রেখেছে বাংলাদেশ। দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরায় যে স্বাধীনতাকার্মীরা আন্দোলন করেছে তাদের ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রাখা’ বিনিময়ে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। মনিপুর স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়ে লন্ডন থেকে অনেক আগেই। মোদীকে খুশি করতে ৭ রাজ্যের স্বাধীনতাকার্মীদের ধরে ভারতের হাতে তুলে দেয়ায় তারা বাংলাদেশের শেখ হাসিনা রেজিমের ওপর বিক্ষুব্ধ ছিল। ‘সেভেন সিস্টার্স’কে ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ রাখতে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হচ্ছে ভারত কি পলাতক শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে? নাকি মোদী সরকারের সর্বদলীয় বৈঠক ও সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার প্রতিশোধের প্রস্তুতি? এই মুহুর্তে ভারত শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার সদস্য প্রহরা দিচ্ছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার সেনা পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মোতায়েন। বাকি প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরে বা ‘হিন্টারল্যান্ডে’, যারা মূলত কাশ্মীর উপত্যকা বা জম্মুতে ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি’ তথা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের কাজে নিয়োজিত।
ভারত যদি তাদের তাবেতার শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতের প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনীর ৫ লাখ সৈন্য বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়োজিত করে। সেটা তাদের জন্য হবে আত্মঘাতি। কারণ ভারত তাদের সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে মানুষও মোদীর এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত রুখে দেবে। দেশের যে দামাল শিক্ষার্থীরা কয়েকদিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনার গতি কাঁপিয়ে তুলেছিল, ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েও শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের দমন করতে পারেনি। সেই শিক্ষার্থীরা সীমান্তে ভারতীয় সৈন্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের দেশপ্রেমি সেনাবাহিনী, পুলিশসহ ১৮ কোটি মানুষ মোদীর বাহিনীকে দিশেহারা করে ফেলবে। অতএব ভারত সাবধান!
ইনকিলাব থেকে নেওয়াঃ