প্রতিনিধি ২১ আগস্ট ২০২৪ , ২:৩৪:০৩ অনলাইন সংস্করণ
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে গুলশান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়াও র্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল (অব) এম সোহায়েলকে বনানী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।
এই তিনজনের গ্রেফতারের খবরে অধিকতর তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়নি।
এদিকে কক্সবাজারের সাবেক এমপি ‘ইয়াবা ডন’ আবদুর রহমান বদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে ধরতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে অভিযান চালায় র্যাব। পরে টেকনাফের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বদি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি।
কক্সবাজারের টেকনাফের ইয়াবা সাম্রাজ্য দীর্ঘদিন ধরে বদি ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন
থেকে এমপি নির্বাচিত হন বদি। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। তবে এ দুই নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন।
মাদক চোরাকারবারে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় বদির নাম আছে। এ তালিকায় গডফাদার হিসেবে বদির চার ভাইসহ পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম রয়েছে।
গত মে মাসে নির্বাচনী বিরোধের জের ধরে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলমকে লক্ষ্য করে গুলি করার অভিযোগ ওঠে বদির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জিডি করেছিলেন নুরুল আলম।
মিয়ানমার থেকে দেশে ইয়াবা আনার অন্যতম রুট টেকনাফ। অভিযোগ রয়েছে, বদির পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবা কারবার চলত। বদির ভাই ও আত্মীয়স্বজন নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবা আনার রুট। ক্ষমতার প্রভাবে ইয়াবা গডফাদাররা সব সময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম এলেও তারা প্রকাশ্যে ইয়াবার রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইয়াবা কারবারিরা এতটাই প্রভাবশালী, আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তুলতেও কেউ সাহস করেন না।
২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন বদি। ২০০৮ সালে কক্সবাজার-৪ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জনপ্রতিনিধি হওয়ার ২৩ দিনের মাথায় টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করেন। তাঁর হাতে হেনস্তার শিকার হন টেকনাফের বন বিভাগের কর্মকর্তা। ভোটার তালিকা তৈরা করাকে কেন্দ্র করে একজন স্কুল শিক্ষক তাঁর হাতে নির্যাতনের শিকার হন। এর পর জড়িয়ে পড়েন টেন্ডারবাজি, জমি দখল, চাঁদাবাজিতে।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি। এর পর থেকে চোরাচালান, ইয়াবা কারবার, মানব পাচারসহ রোহিঙ্গা আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে জড়ান নানা অপকর্মে। ইয়াবাকাণ্ডে বদিকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে পরের নির্বাচনে ওই আসনে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
এমপি থাকার সময়ে ১০ বছর নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত নাম আবদুর রহমান বদি। ভাই, স্ত্রী, মামা, ভাগিনাসহ স্বজনদের নিয়ে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগেই বেশি সমালোচিত তিনি। এমনকি অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় সাজাও হয়। অভিযোগ আছে, টেকনাফের ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করে বদির পরিবারই। বদির পরিবারের ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা হলেন এমপি বদির আপন ভাই মো. আবদুল শুক্কুর, মজিবুর রহমান ওরফে মুজিব কমিশনার, শফিকুল ইসলাম, সৎভাই আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান, ভাগিনা আবদুর রহমান দারোগার ছেলে নিপু, শাহেদ কামাল, এমপির মামা হায়দার আলী ও এমপির মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল।
তারাই পুরো টেকনাফ স্থলবন্দর দখল করে রাজত্ব করেন। এ ছাড়া ইয়াবা পাচারে ব্যবহৃত গাড়ির তালিকায়ও রয়েছে বদি পরিবারের গাড়ির নাম।
এদিকে বদিকে গ্রেপ্তারের খবরে টেকনাফের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। মুহূর্তে এ খবর সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে টেকনাফের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বদি ইয়াবা সম্রাট।
তাঁর কারণে দেশজুড়ে মাদক ছড়িয়ে পড়ে। বদি এবং তাঁর স্ত্রী এমপি থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিশেষ করে মাদক চোরাচালান ও স্বর্ণ পাচারে জড়িত ছিলেন দীর্ঘ দিন। বদি অবৈধ টাকায় দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন।