ভাটি বাংলা ডেস্কঃ ২১ আগস্ট ২০২৪ , ২:১৩:১৭ অনলাইন সংস্করণ
ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৮১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সারা দেশে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অধিকাংশই গুলিতে আহত হন।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন–সংক্রান্ত এক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন এইচআরএসএসের গবেষণা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে এইচআরএসএস বলেছে, নিহত ৮১৯ জনের মধ্যে ৬৩০ জনের নাম তারা জানতে পেরেছে। ১৮৯ জনের নাম জানা যায়নি। ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩১১ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫০৮ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা বিভাগে ৫০০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫ জন, খুলনা বিভাগে ৭৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন, সিলেট বিভাগে ২০ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪৬ জনের মৃত্যুর ধরন বিশ্লেষণ করতে পেরেছে এইচআরএসএস। তাতে দেখা গেছে, ৪৫৫ জন গুলিতে, ৭৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৭৮ জন পিটুনিতে ও ১০ জন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং অন্যান্য কারণে ২৪ জন মারা গেছেন।
৪৩৫ নিহত ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএস বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৩৭৫ জন, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হাতে ৩৫ জন এবং গণপিটুনিতে ২৫ জন মারা গেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের বয়সও বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। নিহত ৪৭০ ব্যক্তির বয়স বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএস বলেছে, এর মধ্যে শিশু (১৮ বছরের কমবয়সি) ৮৩ জন (১৮%), তরুণ ও যুবক ২৪০ জন (৫১%), মধ্যবয়সি ১২৬ জন (২৭%) এবং বয়স্ক ব্যক্তি ২১ জন (৪.৫%)।
আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পেশাও খোঁজা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২৯৩ জনের পেশা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ১৪৪ জন শিক্ষার্থী, ৫৭ জন শ্রমজীবী, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৫ জন সাংবাদিক এবং ৩৫ জন অন্যান্য পেশার মানুষ।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ থেকে ২২ জুলাই শুধু ঢাকা শহরের ৩১টি হাসপাতালে কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০৩ ব্যক্তি আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ তাদের হাত, পা অথবা চোখ হারিয়েছেন। ছয় শতাধিক মানুষ তাদের এক চোখ বা দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্তত ২৭০ জন সাংবাদিক আহত, হুমকি, গ্রেফতার ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সারা দেশে পাঁচ শতাধিক থানা, ফাঁড়ি ও সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আট শতাধিক ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৯৫০টি মামলায় ৬ লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় অন্ততপক্ষে ১২ হাজার মানুষ গ্রেফতার হন। শুধু রাজধানীতেই তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেফতার হন এবং সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়, প্রায় ৯০ শতাংশই অজ্ঞাতনামা আসামি।
দেশে যখনই কোনো সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার ব্যতিক্রম এবারও হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এইচআরএসএস। প্রতিবেদনে তারা বলেছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৫৩টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৪ জন।
এতে ১০টি মন্দির, ১৫৭টি বসতবাড়ি এবং ১৭৭টি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পঞ্চগড় ও রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।