ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২৯ আগস্ট ২০২৪ , ৩:৩৫:০৪ অনলাইন সংস্করণ
গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার রিপোর্টের ভিত্তিতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা।
যে রিপোর্ট রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রাথমিক ভিত্তি। বিগত আওয়ামী সরকারের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ে দলীয় লোকের বদলি বা পদায়ন করা হয়েছে। একই সাথে সচিবালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংক পাড়া, আদালতপাড়া এমনকি সর্বোচ্চ আদালতেও গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদ্বির বা চাপ প্রয়োগ করে কাজ আদায় ছিল চোখে পড়ার মত।
সরকার পরিবর্তনের ফলে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ ও উচ্চ পর্যায়ে রদবদল হলেও মাঠ পর্যায়ের অতিদলীয় কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে।
এসব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাওয়া কখনোই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দলীয়, গোষ্ঠীগত ও সরকারের আনুগত্যের কারণে অনেক সময়ই রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে। এজন্য এখনই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে শতভাগ পেশাদারিত্ব, সততা ও রাষ্ট্র-জনগনের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিগত সরকারের সময় আয়নাঘর ও খুন-গুমের সাথে জড়িত ছিলেন বিভিণ্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায় ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ফলে মারাত্বকভাবে গোয়েন্দা সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হয়েছে দেশে-বিদেশে।
সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত অতিদলীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরিয়ে যারা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন তাদের পদায়ন করা আবশ্যক। অন্যতায় সঠিক ও নিরপেক্ষ রিপোর্ট সিদ্ধান্তগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছাবে না। এতে করে একদিকে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ব্যহত হবে। অন্যদিকে নিরাপরাধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসবির একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা অতিদলীয় তাদের দ্রুত ঢেলে সাজাতে না পারলে বিপ্লব-আন্দোলন সব বৃথা যাবে। যোগ্য ও পেশাদার কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে অতিদলীয় বা পছন্দের কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়নের কারনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ এখতিয়ারের বাইরে চলে যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার কারনেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হয়। আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি স্বৈরসরকার বিরোধী যে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, সেখানে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া অতীতে দেখা গেছে যে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গোয়েন্দা কার্যক্রমে সমন্বয় ও পেশাদারির অভাব রয়েছে।
মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক ইনকিলাবকে বলেন, যে কোন গঠনমূলক পরিবর্তনে সময় ও ধৈয্যের প্রয়োজন। সরকার কর্তৃক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অতিজরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাধারনতঃ দুটি পৃথক দায়িত্ব থাকে, অভ্যন্তরিন গোয়েন্দা কার্যক্রম ও বিদেশের গোয়েন্দা কার্যক্রম। যেমন যুক্তরাজ্যে আছে এমআই-ফাইভ এবং এমআই-সিক্স, আমেরিকার আছে এফবিআই। তবে বাংলাদেশের এমন কোন আলাদা সংস্থা নেই। সত্যিকারের গোয়েন্দা কার্যাবলি পালনের দায়িত্ব মুলত এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের। এছাড়া পুলিশেরও গোয়েন্দা সংস্থা আছে (এসবি) যাদের কাজ মুলতঃ আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত।
ডিজিএফআইয়ের অধিকাংশ কমকর্তা ও মাঠ পযার্য়ের কর্মিরা সামরিক বাহিনীর সদস্য প্রেষণে আসেন কয়েক বছরের জন্য। কিন্তুু এনএসআই এর অধিকাংশ কমকর্তা ও মাঠ কর্মিরা সংস্থার নিজস্ব্য চাকুরিজীবী এবং খুবই কম সংখ্যক কর্মকর্তা অন্য বাহিনী থেকে প্রেষনে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে এনএসআইয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়। বিগত ১৬ বছর একই দল ক্ষমতায় থাকার কারনে এই সংস্থার অধিকাংশ কমকর্তা ও মাঠ পযার্য়ের কর্মকর্তারা আওয়ামিলীগের আর্শিবাদপুষ্ট। সুতরাং এই সংস্থার কাছ থেকে সত্যিকারের ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে হলে পেশাদার ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের খুজে পদায়ন করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বিগত সরকার গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান কমবেশি ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবির প্রধানদের সরিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা বিগত ১৫ বছর বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের অংশীদার তাদের প্রায় সবাই এখনও সক্রিয় রয়েছেন। ফলে এখনও গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন আনসারদের বিদ্রোহ নিয়ে গোয়েন্দারা সরকারকে কোন অগ্রিম তথ্য দিতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, অতিদলীয় এবং অযোগ্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করে অতিদ্রুত দেশপ্রেমিক, সৎ, যোগ্য ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা আবশ্যক।