ভাটি বাংলা ডেস্কঃ ২২ আগস্ট ২০২৪ , ১:৫৪:৪৭ অনলাইন সংস্করণ
ছাত্র হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মেয়র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্তত: ৫শ’ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার পৃথক ৩টি আবেদন করা হয়। এরমধ্যে একটি অভিযোগে ৭৭ জন, একটিতে ৭৪ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। অন্য অভিযোগটিতে ৫২ জনের নামোল্লেখসহ ৫০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি অভিযোগে ৮১৯ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহীদ শিক্ষার্থী মো: আসিফ ইকবালের পিতা বগুড়ার শ্রীপুর উপজেলার রাধানগরের নোহাটা গ্রামের বাসিন্দা এম এ রাজ্জাক একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শহীদ শিক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের পিতা আব্দুল মতিন অন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অপর অভিযোগটি বিমানবন্দর থানা এলাকার শিক্ষার্থী শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর পিতাবরিশালের মো: জাকির হোসেন দায়ের করেন।
আবেদনে বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতাকে হত্যা করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের কতিপয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপি এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য, কতিপয় র্যাব কর্মকর্তা ও র্যাব সদস্য, কতিপয় অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিক নির্মূলের উদ্দেশে তাদের ওপর দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৮১৯ জন নিহত হন।
এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ হাজার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হন এবং ১ হাজার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে চিরতরে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন। কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা ছাড়াও কমপক্ষে ৩২ জন শিশু নির্মম গণহত্যার শিকার হয়।
একটি অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইলিয়াস আলী মোল্লা, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র্যাবে সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের নামোল্লেখসহ ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি অভিযোগে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ, র্যাব, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবু সাঈদ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৪৩৯ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগে বলা হয়।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে পৃথক এসব আবেদন করা হয়। তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম।
অন্য একটি মামলার আসামিরা হলেন,ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, হাছান মাহমুদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের মাহতাব উদ্দিন আহমদ, আ জ ম নাছির উদ্দিন, রেজাউল করিম চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীসহ ৭৭ জন। অন্য দুটি আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট মো: আসাদ উদ্দিন।
শেখ হাসিনা, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ধারা ৮ অনুসারে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১) (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
গত ১৮ জুলাই ঢাকার মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার মেহেদী। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই মারা যান। এ ঘটনায় তার বাবা ছানাউল্লাহ গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা করেন। এর আগে গত ১৪ আগস্ট আরও একটি মামলা হয়।
রাজধানীর মিরপুরে সংগঠিত গণহত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওইসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ একটিতে ৭০ জন এবং অন্যটিতে ৭৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।