নিউজ ডেস্কঃ ১৩ আগস্ট ২০২৪ , ১:৩৯:১৩ অনলাইন সংস্করণ
কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি ও তার দেশে পুনর্বাসন চেষ্টাকারীদের হুঁশিয়ার করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিচার ও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান সমন্বয়করা। এর আগে, শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখানে ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ, মধুর ক্যান্টিন, ব্যবসায় অনুষদসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করে আবার রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই, বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, দখলদারের রাজনীতি, শিক্ষকদের রাজনীতি, এই ক্যাম্পাসে হবে না, গেস্টরুম-গণরুম, এই ক্যাম্পাসে হবে না, দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত, রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়; শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আপনাদের বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক করতে এসেছি। আমরা ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার তাড়ানোর পর ৬ তারিখ থেকে কিছু কুচক্রী মহল বিভিন্ন ক্যু সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় ক্যু সৃষ্টির পাঁয়তারাকে ছাত্র-জনতা রুখে দিয়েছে। বাংলাদেশের রক্তের ওপর দিয়ে আসা স্বাধীনতাকে এখনো প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে মন্দির, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা করে প্রতিবিল্পবের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। বিদেশী শত্রুদের মদদে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের সেই অপচেষ্টাকে দেশের ছাত্র-জনতা রুখে দিবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা উপদেষ্টাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনারা উপদেষ্টা হয়েছেন। আপনারা বক্তব্য দেয়ার আগে ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্র মনে রাখবেন। খুনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই, আমরা যেভাবে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছি। ঠিক একইভাবে স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের চেষ্টাকারীদেরও নামাতে সময় লাগবে না।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে হাসনাত বলেন, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল। সেই দখলদারিত্বের রাজনীতির পুনর্বাসন করতে দেয়া হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, হাসিনা বিদায় হয়েছে কিন্তু তার মনের ফ্যাসিজম বিদায় হয় নাই। এখনো বিদেশে বসে দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা সেসব কুচক্রী মহলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিব ইনশাআল্লাহ। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমাদের যেসব অমুসলিম ভাই বোনেরা আছে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করে, ডাকাতি করিয়ে সাধারণ মানুষসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থী ভাইয়েরা জীবন বাজি রেখে তাদের নিরাপত্তা প্রদানে রাতভর জেগে পাহারা দিচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে মাসের পর মাস রাজপথে থাকব তবুও এ আন্দোলনের ফসল আমরা নষ্ট হতে দেবো না।
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে হাসিনার সব ষড়যন্ত্রকে রুখে দেব। আওয়ামী লীগ পরাজিত শক্তি নানান কূটকৌশল করছে, আমরা ছাত্র-জনতা কোনোভাবে ১৫ আগস্টের ক্যু করার পরিকল্পনা সফল হতে দেব না।