ভাটি বাংলা ডেস্কঃ ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ৪:৫৪:২৮ অনলাইন সংস্করণ
কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, শস্যের মাঠ, মাছের ঘের, গরুর খামার, পোল্ট্রি খামারসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি। ভয়াবহ এই বন্যায় জেলাজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে প্রায় দশ জনের। এরমধ্যে অর্ধেকই শিশু। বানের পানিতে তলিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় বন্যার পানিতে বন্দি প্রায় দশ লাখ মানুষ। এরমধ্যে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি। গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে দুই উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ৫দিন অতিবাহিত হলেও এখানকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে দশ ফুট পানি, রয়েছে স্রোতের বেগও। গোমতীর পানি কমে আসলেও দুই উপজেলার পানি যেন সরতে চাইছে না। বরং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাস্তুহারা হয়ে অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
অনেকেই আবার দূরের উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের সামিয়ানা টানিয়ে দিন-রাত পার করছেন, কিন্তু বন্যার পানি থেকে জীবন বাঁচিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকেও মাঝে মধ্যে গুড়ি ও ভারি বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে। বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ না পৌছায় কষ্টে হাহাকার করছেন বানভাসি মানুষ । সোমবার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
এদিকে কুমিল্লার ওই দুই উপজেলা ছাড়াও জেলার বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতির দিকেই যাচ্ছে। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আকস্মিক এই বন্যা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তবে স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বেশি।
গোমতী নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোমতীর বাঁধ ভাঙ্গন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে বুড়িচং উপজেলায়।
ভেঙে যাওয়া নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত স্রোতের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িচংয়ে এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এরিমধ্যে গত চারদিনে পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে পানিতে ভাসছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এ উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
এদিকে কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যাার পানি। রবিবার রাত থেকে অনবরত বৃষ্টি হতে থাকায় এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলায় অনেক আশ্রয় কেন্দ্র এখন পানির নিচে। চারদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার। মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার বেশিরভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানিরও চরম সংকট। অপরদিকে চৌদ্দগ্রামে পানি কিছুটা কমলেও ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ ভয়াবহ কষ্টে রয়েছেন। আর তিতাস উপজেলায় বাড়ছে পানি, তলিয়ে যাচ্ছে নতুন করে আরও গ্রাম ও রাস্তাঘাট।
সোমবার (২৬ আগস্ট) কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত আছে।
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। পানি না কমা পর্যন্ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতেই থাকবে।