ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২৬ আগস্ট ২০২৪ , ২:১৭:০৩ অনলাইন সংস্করণ
দিনভর অবস্থান করে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আনসার সদস্যরা। রাত ৯টা পর্যন্ত অবস্থান থেকে সরে না যাওয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতারা টিএসসিতে জড়ো হয়ে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার আহবান জানান।
এ আহবানে সাড়া দিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাত নয়টার পর সচিবালয়ের দিকে যান।
প্রথমে আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে সচিবালয় ফটকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে অনেকেই বলেছেন, স্বৈরাচার নেমেছে আনসারের বেশে। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
গতকাল রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় শতাধিক আনসার সদস্যকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেধে রাখতে দেখা গেছে।
বন্যায় দেশের একটি অংশ যখন বিপর্যস্ত; সেই চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়ও অরাজক এক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল আনসার সদস্যরা। তারা গতকাল প্রকাশ্যে মাইকে হুমকি দিয়ে বলেছে, সচিবালয় থেকে কোন অফিসারকে বাইরে যেতে দেয়া হবে না। গেইটে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ডিউটি-তে না থাকলে অঘটন ঘটে যেতে পারতো। তাদের শ্লোগানের ভাষা ছিল উগ্র! সংযমের ছিটেফোঁটা ছিল না। শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আচরন এমন হবে কেন, যেখানে তদারককারী সংস্থা আছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে ভেতর থেকে তালা দিয়ে গেইট রক্ষা করেছেন। সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ তারা সকাল থেকেই বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রাত ১০টার পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
রাতে চারিদিক থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল আসায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে শুরু করে আনসার সদস্যরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে অধিকাংশ সদস্যদের নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেক আনসার সদস্য মারধর, লাথি, কিল, ঘুসি আর লাঠিপেটার শিকার হয়।
রোববার চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিল আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে তিন নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়ে। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাদের প্রতিনিধিদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে, তার কিছুক্ষণ পরেই আবারও আন্দোলন শুরু করে আনসার সদস্যরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
সচিবালয়ের সামনে তাদের অবস্থানের কারণে ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিষয়টি জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করতে রাত ৯টার দিকে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সচিবালয় এলাকায় আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
এতে করে দুইপক্ষের ৪০ জনের বেশি আহত হন। একপর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে আনসার সদস্যরা।