ডেস্ক রিপোর্টঃ ২০ জুন ২০২৪ , ১১:৩০:৪৮ অনলাইন সংস্করণ
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ১৫ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির আবাদ প্লাবিত হয়েছে। এতে কি পরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখন নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না, পানি নেমে যাওয়ার পর নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। পানি নেমে গেলেই এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, বুধবারের তথ্য অনুযায়ী জেলার মাঠে এখনও ফসল আছে ২০ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭৯ হেক্টরের ফসল। প্লাবিত হওয়া ফসলের মধ্যে ৮ হাজার ৮৫৫ হেক্টর আউশ ধান, ১ হাজার ৯৩ হেক্টর আউশ বীজতলা, ৫ হাজার ৬৬৪ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং ১৬৭ হেক্টর বোনা আমন।
এদিকে গত বন্যায় প্লাবিত হয়ে কৃষিতে প্রায় ৯৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলানোর আগেই আবারও সিলেটের বেশিরভাগ ফসল প্লাবিত হয়েছে। এতে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার মাঠে এখনো ফসল আছে ২০ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্লাবিত হয়েছে ১১ হাজার ৭০৭ হেক্টরের ফসল। প্লাবিত হওয়া ফসলের মধ্যে ৫ হাজার ৯৮২ হেক্টর আউশ ধান, ৮৫৬ হেক্টর আউশ বীজতলা, ৪ হাজার ৭০৮ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং ১৬১ হেক্টর বোনা আমন।
আউশ ধানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলায়। এখানে ২ হাজার ৮৪৫ হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ হেক্টর। সিলেট সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৩০ হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে ১ হাজার ৪৪ হেক্টরই প্লাবিত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, সিলেট জেলার উপজেলাগুলোতে প্লাবিত হওয়া আউশ ধানের মধ্যে বিশ্বনাথে ৮৬১ হেক্টর, গোলাপগঞ্জে ৭৫০, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫৬০, গোয়াইনঘাটে ৪১৫, জকিগঞ্জে ৩৫০, ওসমানীনগরে ৩১০, বিয়ানীবাজারে ৯০, কানাইঘাটে ৭৫, দক্ষিণ সুরমায় ৫০, কোম্পানীগঞ্জে ৪০ ও বালাগঞ্জে ৫ হেক্টর রয়েছে। প্লাবিত হওয়া আউশ বীজতলার মধ্যে গোলাপগঞ্জে ১৬০ হেক্টর, বিশ্বনাথে ১৫৪, সিলেট সদরে ১০০, জৈন্তাপুরে ৯৫, দক্ষিণ সুরমায় ৮০, বিয়ানীবাজারে ৫৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪৮, কানাইঘাটে ৪২, বালাগঞ্জে ৩৫, ওসমানীনগরে ২৯, কোম্পানীগঞ্জে ২৭, জকিগঞ্জে ২৩ ও গোয়াইনঘাটে ৮ হেক্টর রয়েছে। জেলায় মোট ৬ হাজার ৬১৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি আছে। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার ১ হাজার ১২০ হেক্টর, সিলেট সদরে ৭২০, বিয়ানীবাজারে ৫৩০, জকিগঞ্জে ৪৬৫, গোলাপগঞ্জে ৪৫০, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪৪৮, দক্ষিণ সুরমায় ৪৩৫, বালাগঞ্জে ১৭৫, গোয়াইনঘাটে ১০৫, ওসমানীনগরে ১০০, জৈন্তাপুরে ৮০, কোম্পানীগঞ্জে ৫২ ও কানাইঘাটে ২৮ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি প্লাবিত হয়েছে।
সিলেটের প্লাবিত হওয়া বোনা আমনের মধ্যে গোয়াইনঘাটে ৮২ হেক্টর, কানাইঘাটে ৩৬, জকিগঞ্জে ১৮, দক্ষিণ সুরমায় ১১, জৈন্তাপুরে ১০ ও বালাগঞ্জে ৪ হেক্টর রয়েছে। জেলায় মোট বোনা আমন আছে ১৬৭ হেক্টর জমিতে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের মাসুদ আহমেদ জানান, কয়েকদিন আগের বন্যায় ৬০শতক জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগে আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে, নিজ শ্রম বাদে ফসল রোপণ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ অবস্থায় তিনি দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার কৃষক লোকমান আলী জানান, ধার-দেনা করে ৩০শতক কৃষি জমিতে সবেমাত্র আউশ ধান লাগিয়েছেন, লাগানোর একদিন পর বন্যার পানিতে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে তার মতো অন্যান্য কৃষক।