• সুনামগঞ্জ

    ৫৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তালিকা বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হান্নান মিয়া

      আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে: ২৮ মার্চ ২০২৪ , ২:২০:৫০ অনলাইন সংস্করণ

    মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ৭১ বছরের বয়স্ক প্রবীণ লড়াকু সৈনিক মোঃ হান্নান মিয়া। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের অচিন্তপুর গ্রামের মরহুম মোঃ সুক্কুর মিয়ার পুত্র তিনি।

     

    তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ম জানুয়ারি। জানা যায়,গত ৪/১১/২০২৩ইং তারিখে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই আবেদন ফরমে তিনি আবেদন করেছেন। একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে সনাক্ত করেছেন একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম যার মুক্তিবার্তা নং ০৫০২০১০৫৪০, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান মুক্তিবার্তা ০৫০২০১০৫৪০ এবং পার্শ্ববর্তী বৈঠাখালী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান যার গেজেট নং ৪৬৮ ভারতীয় তালিকা নং ২৪৭৮২।

     

    এলাকার সহযোদ্ধাদেরকে সাক্ষী করে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করার পরও তার নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। বিষয়টিকে দায়িত্বশীলরা অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপজেলা কমান্ডার মোঃ নুরুল ইসলাম। আরো জানা যায়, ৭১ এর ২৭ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ শহরে প্রথম পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন আনসার কমান্ডার।

     

    ঐ সময়ে আবুল হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সকল আনসার সদস্যরা সম্মিলিতভাবে শহরে পাক বাহিনীর গতিরোধ করেন এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ঐ যুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মুক্তিযোদ্ধা হান্নান মিয়া। তারা সম্পর্কে একে অপরের ফুফাতো ভাই হন।

     

    শহীদ আবুল হোসেন পাক সেনাদের হাতে শহীদ হওয়ার পর হান্নান মিয়া গ্রামের অপরাপর আনসার সদস্যদের সাথে ভারতে চলে যান সেখানে ইকোয়ানে ২৮ দিনের সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে ৫ নং সেক্টরের কমান্ডার মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে বালাট সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মুত্তালিব,কোম্পানী কমান্ডার এনামুল হক চৌধুরী বীর প্রতীক ও সহকারী কমান্ডার ভূইয়ার অধীনে শহরতলীর বেরীগাঁও গ্রামে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। একান্ত সাক্ষাতে হান্নান মিয়া বলেন,৭১ এর জুন মাসের মাঝামাঝি আমরা স্বদেশের মঙ্গলকাটা এলাকায় প্রথম ফিল্ড ওয়ারে সশস্ত্র অবস্থান নেই। কোম্পানী কমান্ডার এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে প্লাটুন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম শ্রীরামসী জগন্নাথপুরএবং সহকারী প্লাটুন কমান্ডার এস এম সামছুল ইসলাম এর নির্দেশনায় লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হই আমি।

     

    ষোলঘর,মঙ্গলকাটা বাজার,বৈশারপাড়,কৃষ্ণনগর,ইসলামপুর,ঢালারপাড়,সফেরগাঁও গ্রামে পাক সেনাদের সাথে আমাদের দফায় দফায় সম্মুখযুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে চট্টগ্রামের ইপিআর হাবিলদার রহিম বক্স,জগন্নাথপুরের জয়নাল ও মুক্তিযোদ্ধা মজলিশ মিয়াসহ নামনা জানা আরো অনেক বীর সন্তানেরা শহীদ হন। যাদেরকে সমাহিত করা হয় জয়বাংলা বাজারসহ সংলগ্ন এলাকায়।

     

    বীর মুক্তিযোদ্ধা হান্নান মিয়ার ভাগ্না সামসুল আলম,মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ও জামাল মিয়া জানান আমাদের মামা জীবিকার তাগিদে জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ভারতের হাওরা জেলার জগৎ বল্লাটপুর থানার সন্তোষপুর গ্রামে স্বপরিবারের বসবাস করার কারণে তিনি দেশে এসে সময়মতো অনলাইন আবেদন করতে পারেননি। এছাড়া অনলাইন আবেদনের বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ অবগতও ছিলেননা।

     

    তাই কথিত অনলাইন আবেদনের অজুহাতে তাকে বারংবার উপেক্ষা করে যাচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা চ্যালেঞ্জ করে বলছেন,অনলাইন আবেদন না করার পরও সুনামগঞ্জে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

     

    তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হান্নান মিয়ার নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে কোন অসুবিধা নেই। জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হান্নান মিয়া তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

    আরও খবর

    Sponsered content