কুলেন্দু শেখর দাস, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: ১৮ মার্চ ২০২৪ , ৩:৩৮:২৭ অনলাইন সংস্করণ
নির্ধারিত সময়ের পর আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দিলেও সুনামগঞ্জের শাল্লা .তাহিরপুর,দোয়ারাবাজার ও জগন্নাথপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরে বাধেঁর কাজ শেষ না হওয়াতে এবারও জেলার এসব উপজেলায় আগাম বন্যার ভয়ে শংঙ্কিত জেলার কয়েক লাখ কৃষক।
দেরীতে কাজ শুরু হওয়ায় আগাম বন্যার আগেই বাঁধ নির্মানের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে জেলার ১২টি উপজেলার ৯৫টি হাওরের মধ্যে ৪০টি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেয়ার পরও এসব উপজেলার কয়েকটি হাওরে এখনো বাধেঁর কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়নি।
অনেক বাধেঁ মাটির পরিবর্তে বালি দিয়ে বাধঁ নির্মাণ এমনকি ক্লোজার পর্যন্ত বালি দিয়ে করা হচ্ছে এবং বাধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাধেঁর কাজ করার ফলে ঐ সকল বাধঁগুলো এমনিতেই ঝুকিঁপূর্ণ থেকে যায়।
চলতি বছর সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে এবার ও আড়াই লাখ বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি সহযোগিতায় চলছে বাধঁ নির্মাণ,পূনঃনির্মাণ ও হাওরে ক্লোজার নির্মাণ।
প্রতিবছরের মতো এবারও কাবিটা নীতিমালার আওতায় জেলার সবকটি হাওরে ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির(পিআইসি) মাধ্যমে ৫৯১ কিলোমিটার বাধঁ নির্মাণের জন্য ১২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
কিন্তু প্রকৃত কৃষকদেরকে পিআইসি কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত না করা,কিছু কিছু বাধেঁ অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ,প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর বাধেঁর কাজ শুরু করার কথা থাকলে ও হাওরের পানি নামতে দেরী হওয়াতে বাধেঁর কাজ বিলম্বে শুরু হওয়া এবং চলতি মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারী মধ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকার পর ও কাজ শেষ না হওয়াতে আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে চলতি মার্চ মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সকল বাধেঁর শতভাগ বাধেঁর কাজ শেষ করার কথা থাকলে ও সুনামগঞ্জ জেলা হাওর বাচাঁও আন্দোলনের নেতাদের দাবী এখন পর্যন্ত শতকরা ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবী করছে ইতিমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ।
এদিকে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী জমির পরিমান শাল্লা,তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ।
শাল্লা উপজেলায় এখানে বাধেঁর প্রাক্কলন ও ডিজাইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থ বাধঁ পূনঃনির্মাণ,ক্লোজারসহ নতুন বাধঁ নির্মাণ বাবত ১২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে এই হাওরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং অধিকাংশ বাধেঁ অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সাধারন কৃষকদের অভিযোগ। শাল্লা উপজেলার হাওরের ২৩ নম্বর পিআইসি,২৪ নম্বর পিআইসিতে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়ায় বাধেঁর কাজে নয়ছয় হয়েছে। তারা তাদের মূল বাধেঁর অর্ধেকের ও বেশী রাস্তায় মাটি না ফেলেই নিয়মিত বিল উত্তোলন করে নিচ্ছেন। এছাড়াও শাল্লার ১নং,৬নং পিআইসি,৭নং পিআইসি,৮নং,৯নং৩৬নং পিআইসি,১৭নং,২৫নম্বর,৫১ নম্বর,৮৯ নম্বর,৯৪ নং,৯৫ নং,৯৭ নং,৯৮ নং,৯৯নং এ সকল পিআইসিতে অপ্রয়োজনীয় অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অনেক বাধঁ ও ক্লোজার বালি মাটি দিয়ে তৈরী করার চেষ্টা চললে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের তেমন একটা নেই তদারকি। এদিকে তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরে পিআইসি নং ৫০,৫১,৫২ ,৪৯, ৪৮ ও ১৪ নং পিআইসিতে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ,বালি দিয়ে বাধঁ ও ক্লোজার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এতে এই তিনটি উপজেলার অধিকাংশ পিআইসি মোট আয়তনের বেশীর ভাগ বাধেঁর কাজ পুরাতন থাকায় তাদের বাধেঁর কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নেই ফলে এই অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ লুটপাঠের অংশ বলে কৃষকরা মনে করছেন। নির্ধারিত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়ার পরও শতকরা ৮০ ভাগ কাজ হলে ও বাকি ২০ ভাগ কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে কৃষকদের শংঙ্কার যেন শেষ নেই।
সম্পূর্ণ বাধেঁর কাজ শেষ করার পর দুর্বা(ঘাস) লাগানো ও ড্রেসিংয়ের কাজ বাকি রয়ে গেছে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মার্চের প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশংঙ্কায় কৃষকরা দুচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল বাধেঁর কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও সরকারের নিকট জোর দাবী কৃষকদের। এদিকে তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরে ও একই অবস্থা।
পিআইসির সদস্যরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উহ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মণির মিয়ার সাথে যোগসাজসে করা হয় কিছু কিছু বাধেছ অপ্রয়োজনী বরাদ্দ এবং সব মিলিয়ে চলছে ভাগবাটোয়ারার মহোৎসব। ফলে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দের কারণে সরকারের টাকা অপচয় হলেও এসব টাকা অনিয়মের মাধ্যমে পকেটস্থ হচ্ছে কিছু দূর্নীতিবাজ পিআইসি এবং দূর্নীতিবাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও দের।
অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয়টি একাধিকবার প্রশাসনের উচ্চ মহলে জানানোর পর ও কোন সঠিক তদন্ত না হওয়াতে গুটি কয়েকজন এসও ও র্দূনীতিবাজ পিআইসি কমিরি সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের চলছে লুটপাঠের মহোৎসব। হেমন্ত মৌসুম আসলেই জেলার কোন কোন হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের র্দূনীতিবাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের বাধেঁর কাজকে ইস্যু করে চলে লুটপাঠ।
এ ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক বিজন সেন রায় জানান আজকে পর্যন্ত গড়ে পুরো জেলায় ৭৫ ভাগ বাধেঁর কাজ সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া যে সকল বাধেঁ সংস্কারের কথা সেখানে অধিক পরিমান বরাদ্দ দেওয়া মানে লুটপাঠেরই অংশ। এখনো অধিকাংশ বাধেঁ ধুমূজ,ঘাস লাগানো ক্লোপ দেয়া হয়নি। এবারের হাওরের ফসল রক্ষা বাধেঁর কাজ ও অপ্রয়োজনীয় বেশী বেশী বরাদ্দ যে দেয়া হয়েছে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশী এবং বাধেঁর কাজ ও অনেক খারাপ বলে তিনি দাবী করেন।
জেলার শাল্লা,তাহিরপুর,দোয়ারাবাজার ও জগন্নাথপুরের যেসব হাওরে মাটির পরিবর্তে বালি দিয়ে বাধঁ নির্মাণ করা হয়েছে তা অতি ঝুকিঁপূর্ণ বাধঁ। আর দুয়েকদিন পর যখন বৃষ্টিপাত শুরু হবে এবং উজান থেকে নেমে আসবে পাহাড়ি ঢল তখন ঐসব বাধে প্রথম আগাত করবে। ফলে ঐসব হাওরে কৃষকদেও ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ কেন দেওয়া হলো এবং এই লুটপাঠের সাথে কারা কারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে তাহিরপুরের দায়িত্বে থানা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মণির হোসেন সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান,আজকে পর্যন্ত পুরো জেলায় বাধেঁর কাজ ৯৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে হাওর বাচাঁ আন্দোলনের এক নেতার বক্তব্য অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ এবং লুটপাঠের বিষয়টিকে তিনি অস্বীকার করে জানান উনাদের কাছে এমন তথ্য প্রমান থাকলে আামদের নিকট উপস্থাপন করলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।