আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ১৫ মার্চ ২০২৪ , ৫:৪২:৫১ অনলাইন সংস্করণ
মার্কিন ইহুদি নেতার মুখে নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা – সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ ইহুদি নেতা ইসরাইলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন। এদিকে বাইডেন প্রশাসন পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিকারীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিচ্ছে।
গত বছর ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর থেকে মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলের প্রতি প্রায় সীমাহীন সংহতি ও সমর্থন দেখিয়ে এসেছে। নির্বাচনের চলতি বছরে এ কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের সমর্থকদের একাংশের রোষের মুখে পড়েছেন।
কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রসহ সহযোগী দেশগুলোর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে যেভাবে গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন, তার ফলে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বর্তমান সঙ্কট কাটাতে কোনো রাজনৈতিক সমাধানসূত্রের তাগিদ না দেখানোর কারণেও নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটের শীর্ষ নেতা চাক শুমার ইসরাইলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চপদস্থ ইহুদি নেতা হিসেবে শুমারের ক্ষোভভরা বক্তব্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছে।
ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র হিসেবে ইসরাইলের নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। ৭ অক্টোবরের পর ইসরাইলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা হওয়া উচিত।
ইসরাইলের জনগণের জন্য বাছাইয়ের সেই সুযোগের পক্ষে সওয়াল করেন শুমার। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথে চারটি প্রধান বাধার উল্লেখ করেন।
ইহুদি নেতা শুমারের মতে, নেতানিয়াহু, হামাস, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাস ও ব়্যাডিকাল ভয়াবহ দক্ষিণপন্থী ইসরাইলিদের কারণেই শান্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
চাক শুমার সরাসরি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের সাথে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি গাজায় সামরিক অভিযানে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রীর উদাসীনতার উল্লেখ করেন।
শুমারের মতে, এমন মনোভাবের কারণে গোটা বিশ্বে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ঐতিহাসিক মাত্রায় কমে গেছে। তিনি বলেন, এমন একঘরে হয়ে ইসরাইল টিকে থাকতে পারবে না।
বলা বাহুল্য, নেতানিয়াহু ও তার লিকুদ দল শুমারের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। লিকুদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গর্বিত গণতন্ত্র’ হিসেবে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে নির্বাচিত করেছে। ওয়াশিংটনে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেরজগ এমন মন্তব্যের পরোক্ষ সমালোচনা করেছেন। এমনকি ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘চরম হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মার্কিন কংগ্রেসে বিরোধী রিপাব্লিকান দলও শুমারের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে নেতানিয়াহু প্রশাসনের মনোভাব সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। হোয়াইট হাউস শুমারের বক্তব্য সম্পর্কে জেনেও কোনো হস্তক্ষেপ না করায় বাইডেনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারই মার্কিন প্রশাসন পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতিকারীদের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর লাগাতার হামলা ও হয়রানির অভিযোগে বেশ কয়েকজন চরমপন্থী বসতিকারীকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ করা হয়েছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে