ডেস্ক রিপোর্ট: ১৮ মার্চ ২০২৪ , ২:০০:৪৮ অনলাইন সংস্করণ
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দুর্ঘটনা আজকাল যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত একবছরে এই সড়কে দুর্ঘটনায় প্রায় ৭০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, এসব দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে চোরাকারবার।
স্থানীয় কিছু মাফিয়া সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে চোরাকারবারীদের যোগসাজশে অবধৈ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় চিনি, চা পাতা, মদ, ইয়াবা, পেঁয়াজ, গরু, মহিষ, কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, মোবাইল, টাটা গাড়ির যন্ত্রাংশ, সারজিক্যাল সামগ্রী, ওষুধসহ আরো নানা ধরনের পণ্য।
এসব পণ্য নিয়ে বেপরোয়া গতিতে প্রাণঘাতিক (পিকআপ) ডিআই গাড়ি প্রতিনিয়ত তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। এসব পণ্যবাহী গাড়ি অন্যসব গাড়ির মতো চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায় না।
এই সুযোগে চালকের চোখে সড়কের পাশে বা ফুটপাতে দাঁড়ানো মানুষগুলোকে কিংবা ছোট যানবাহনকে নিছক তুচ্ছ বলে মনে হয়। অন্যদিকে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মাফিয়ারা অভিভাবক সেজে সেই দুর্ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সদা তৎপর হয়ে ওঠে এবং একসময় সেটি ধামাচাপা দিয়েই ছাড়ে।
জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় অবৈধ পণ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মাফিয়া চক্রটি। অবৈধ এসব পণ্যের নিরাপদ স্থান হিসেবে সীমান্তের অদূরে বেছে নিয়েছে চিহ্নিত দুটি বাজারসহ তার আশপাশ এলাকাগুলো। চক্রটি তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে চোরাকারবারি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে সমঝোতা করে চোরাই পথে আসা পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। চোরাকারবারীদের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে পথযাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের শুরুতেই একটি পিকআপের ধাক্কায় চারজন ছাত্রলীগের কর্মী চাপা পড়ে নিহত হন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তামাবিল মহাসড়কের বাঘের সড়ক সামক স্থানে চোরাই চিনি বোঝাই ডিআই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি দোকানে ঢুকে পড়ে।
কিছুদিন যেতে না যেতেই হরিপুর দরবস্তসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরো অন্তত পাঁচজন নিহত হন। গত ৬ মার্চ তামাবিল মহাসড়কে আবারো কেড়ে নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর ছেলেসহ তিন তরুণের প্রাণ। এর রেশ কাটতে না কাটতে সিলেট গ্যাসফিল্ডসংলগ্ন উমনপুর এলাকায় ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে নিহত হন দুইজন।
১৪ মার্চ রাতে হরিপুর বাজার ব্রিজে চোরাই পণ্য বোঝাই ডিআই দুটি ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটে। একই দিনে জৈন্তাপুর বাজারস্টেশনে ডিআই ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী গুরুতর আহত হন। এসব দুর্ঘটনায় দেশব্যাপী মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিলেও তামাবিল সড়কে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের হৃদয়ে নাড়া দেয় না। তারা এখনো কোনো অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি কিংবা চোরাই পণ্য বোঝাই ট্রাক আটক করছে না।
বাস চালক কামাল আহমদ বলেন, তামাবিল মহাসড়কে প্রাণহানি কমাতে ভারতীয় অবৈধ পণ্যবাহী ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে। তামাবিল মহাসড়কে তাদের বেপরোয়া চলাচল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
ভারী যানবাহনের চালকরা দাবি করেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত দায়ী নিষিদ্ধ ডিআই ট্রাক। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারসহ অন্য ভারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে না থাকা। এ বিষয়ে চালকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে যারা ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন গাড়ি চালান তাদের নির্ধারিত সময়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
সূত্র: নয়া দিগন্ত