নিজস্ব প্রতিবেদক ৩ মার্চ ২০২৪ , ৪:২০:১৩ অনলাইন সংস্করণ
রোববার দুপুরে তারা ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চার আসামির জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেই মামলায় পহেলা জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনের ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।
অর্থ আত্মসাতের মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ও কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পহেলা ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক।
অভিযোগ পত্রে তাদের গ্রেফতারের আবেদন করেছিল দুদক। সেই মামলায় ড. ইউনূসসহ সাতজন জামিন পেলেন। মামলায় অভিযুক্ত বাকি সাতজন আদালতে আসেননি।
গত বছরের ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক – কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
আসামিদের বিরুদ্ধে তহবিল থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
মামলায় ১৩ আসামির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া নতুন আরও একজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
মামলা এজাহারে বলা হয়েছে, ড. ইউনূস ও মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ই মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ড সভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও খোলা হয় এক দিন আগে ৮ই মে। এ হিসাব দেখানো আছে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টে, যা বাস্তবে অসম্ভব।
এরকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্টে ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে।
কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ না জানিয়ে আত্মসাৎ করেন আসামিরা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের যে মামলায় ড. ইউনূসসহ চার জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, সেই মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছে আদালত।
তবে এই মেয়াদ কতোদিন বাড়ানো হয়েছে সেটা পরে জানানো হবে বলে আদালত জানিয়েছে। ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ আদেশ দেন।
এই মামলায় শুনানির জন্য ১৬ই এপ্রিল পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের এই মামলায় পহেলা জানুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছেন।
সেই মামলায় তারা জামিনে ছিলেন, যার মেয়াদ ৩রা মার্চ শেষ হচ্ছে।
এ অবস্থায় রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে সকাল ১০টার দিকে হাজির হয়ে ড. ইউনূস ও অন্য আসামিরা জামিন আবেদন করেন।
তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন আপিল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন।
অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সীমিত সময়ের জন্য জামিন দিতে শুনানি করেন।
পরে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানান বিচারক। তবে কতদিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে, তা জানাননি।
তিনি আদালতকে জানান, ড. ইউনূসের আরেকটি আবেদন আদালতে ৬ই মার্চ শুনানির জন্য রয়েছে। পরে আদালত ড. ইউনূসসহ চার আসামীর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এ মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা।
এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও অন্যতম অভিযোগ এই মামলার।
কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এ মামলায় অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য অভিযুক্ত হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং মোঃ শাহজাহান।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মোট ১৮ টি মামলা চলছে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব মামলা স্থগিত ও ‘বিচারিক হয়রানি’ বন্ধ চেয়ে আন্তর্জাতিক মহল আহবান জানিয়ে আসছিলো।
বিষয়টি নিয়ে নোবেলজয়ী বিশ্বের ১৬০ জন খ্যাতনামা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে।
পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে কিনা তা দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়ে ১২৫ জন নোবেলজয়ীসহ ২৪২ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তি খোলা চিঠিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলেছেন, তাদের আসার ব্যাপারটা সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করে।