তৌফিকুর রহমান তাহের, শাল্লা প্রতিনিধিঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৮:০০:৩৩ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণে মূল নকশা পরিবর্তন করে ফেলেছেন ঠিকাদার জালাল উদ্দিন। ১৮ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। শহীদ মিনারের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে মূল স্তম্ভটির নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।
পরিবর্তন করা হয়েছে শ্রদ্ধা নিবেদনস্থল বেদীতেও। শুধু নকশা পরিবর্তনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। তার মনগড়াভাবে ২ফুট প্রস্থের সিড়ি নির্মাণ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। সাধারণ মানুষ বলছেন এভাবে উত্তর দক্ষিণ দিকে ছোট করে সিড়ি নির্মাণ করলে পায়ের জুতা রাখার জায়গাই থাকবে না। অন্যদিকে জুতা ব্যবহারের জন্য পূনরায় ভিটবালুর উপর পায়ে হেঁটে আসতে হবে। সু-জুতা ব্যবহারকারীরা পড়বেন বেশি সমস্যায়।
স্টেজের সামনের পুরো অংশজুড়ে সিড়ি না দিলে সাধারণ মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে এসে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে জানান তারা। এতে শহীদ মিনার নির্মাণকারী জালাল উদ্দিন সরকার উপজেলার সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি থেকে করে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েছেন।
এবিষয়ে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির চিত্রাঙ্কন বিভাগের প্রশিক্ষক ও শাল্লা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত সেন বলেন শহীদ মিনারের মূল নকশাটি তৎকালীন ইউএনওই আমাকে দিয়েছিলেন। আমি সেটি ফেসবুকেও প্রচার করেছি। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে শিশুদের ক্লাস করতে গিয়ে শহীদ মিনারের নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। চুক্তিপত্রে যে নকশা ছিল তার পরিবর্তন করা হলো কেনো এমন প্রশ্নে তেলেগুনে জ্বলে উঠে জালাল উদ্দিন। এবিষয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাননি। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এলেও জবাবদিহি করবেন না বলে হুঁঙ্কার দেন তিনি। এমনকি সাংবাদিকদের পর্যন্ত হুমকি প্রদর্শন করেন।
এসময় প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক সন্দীপন তালুকদার, সদস্য নিশিকান্ত সরকার উপস্থিত ছিলেন। এব্যাপারে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপন তালুকদার বলেন জালাল উদ্দিন আমাদের সাথে যে ব্যবহার এবং বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য। আমি সাথে ইউএনওকে ফোনে অবগত করেছি। তার মনগড়া ডিজাইনে শহীদ নিমার নির্মাণ করে যাবে আর আমরা চুপ থাকব, তা হতে পারে না। সঠিক ডিজাইনে কাজ করতে হবে তাকে।
এব্যাপারে উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন মূল নকশার পরিবর্তন আমরা মেনে নিতে পারি না। পূর্বের যে ডিজাইন ছিলো সেই ডিজাইনের ব্যতিক্রম হলে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ জানাব। এবিষয়ে জালাল উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে শহীদ মিনার নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এব্যাপারে উপজেলার বিদায়ী ইউএনও আবু তালেব মুঠোফোনে বলেন তার সাথে ১৪লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে।
এরমধ্যে একটি পাঠাগার ও একটি শহীদ মিনার। শহীদ মিনারের নকশা পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। এবিষয়ে উপজেলার বর্তমান ইউএনও মনজুর আহ্সান বলেন আমি জালাল উদ্দিনকে কাল (১৯) ফেব্রুয়ারি ডেকে আনব।
তার সাথে পূর্বের চুক্তিপত্র দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সংস্কারকাজও করেন। শিল্পকলা একাডেমিকে নতুনভাবে সাজিয়েছে গেছেন তিনি। বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে নানামুখী উন্নয়নকাজের জন্য বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার অবর্তমানে মূল নকশার পরিবর্তন করে ফেলেন ঠিকাদার জালাল উদ্দিন সরকার। মূল নাকশার অনেককিছু পরিবর্তন করে অর্থ সাশ্রয়ের সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি। আর এতেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদেরও তোপের মুখে পড়েন তিনি।