ডেস্ক রিপোর্ট ২২ জানুয়ারি ২০২৪ , ১:৪৬:০৫ অনলাইন সংস্করণ
সিলেট মহানগরের পাঠানটুলা এলাকার একটি সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে আগুন লেগে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। দগ্ধদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রোববার (২১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন সিলেট নগরীর ঘাসিটুলা বেতের বাজার এলাকার মো: জাফর আলীর ছেলে মো: মনতাজ মিয়া, একই এলাকার মো: মঙ্গল মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া, মতি মিয়ার ছেলে আলম মিয়া, মিছির আলীর ছেলে মতি মিয়া ও রজনী চন্দ্র দাসের ছেলে সুভাষ দাস।
এদিকে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিটি করপোরেশন। কমিটির অন্যরা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরহাদ মোহাম্মদ হাওলাদার এবং জালাবাদ গ্যাস টি অ্যান্ড ডি সিস্টেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান মাহমুদ।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, রোববার বিকেলে পাঠানটুলা এলাকার নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের পাশে ড্রেন সংস্কারের কাজ করছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের শ্রমিকরা। এসময় এক শ্রমিক ফুয়েলিং স্টেশনের গাড়িতে গ্যাস দেয়ার একটি মেশিনের কাছেই গ্র্যান্ডার মেশিন দিয়ে রড কাটছিলেন।
এসময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ গিয়ে স্টেশনটিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তেলবাহী ট্রাকের নিচে পড়লে সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েক দিন থেকে নগরীর ব্যস্ততম এ সড়কে কাজ চলাকালে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নিশ্চিত করেনি সিসিক কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আলাদা করে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এছাড়া এসব কাজের ক্ষেত্রে আগে থেকে ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি।
এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমিন মামুন বলেন, ‘আমরা কাজ শুরুর আগে থেকেই সিএনজি পাম্প কর্তৃপক্ষকে পাম্প বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। এছাড়া সিসিক প্রকৌশল বিভাগ স্থানীয় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়েও পাম্প কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়।
এ অবস্থায় তাদের সম্মতি না পেয়ে আমরা পাঁচ/ছয় মাস কাজ বন্ধও রেখেছিলাম। এরপর তারা আমাদের জানিয়েছেন আমরা যেদিন কাজ করব তাদের বললে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’
মামুন আরো বলেন, ‘রোববার যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনও পাম্প কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সারাদিন কোনো সমস্যা হয়নি। বিকেলে তারা একটি জ্বালানি তেলবাহী গাড়ি আনলোড করতে গেলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এভাবে জ্বালানি তেল আনলোড করবেন সেটা বললেও আমরা কাজ বন্ধ রাখতাম, কিন্তু তারা তা করেনি।’
সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ফায়ার ফাইটার সুহেল আহমদ বলেন, ‘খবর পাওয়ামাত্র আমাদের একটি ইউনিট সেখানে যায়। তবে আমাদের কর্মীরা যাওয়ার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।’
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ মান্নান জানান, অগ্নিদগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে দু’জনের শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। বাকি দু’জনের ৩০ ভাগ আর একজনের ২৮ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনো চিকিৎসা চলছে, তবে প্রয়োজন পড়লে তাদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হতে পারে। অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজনে তাদেরকে ঢাকাতেও স্থানান্তর করা হতে পারে।
এ বিষয়ে নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিসিক প্রধান নির্বাহী ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক এখানে আছি। দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।’
সূত্র : ইউএনবি