• সারাদেশ

    শাল্লায় পুরনো বাঁধের মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণ

    অক্ষত বাঁধ কেটে সেই মাটি দিয়েই নতুনভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা

      তৌফিকুর রহমান তাহের, শাল্লা প্রতিনিধি: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ , ১:১৪:০০ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জের শাল্লায় পুরনো বাঁধের মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজে থাকা স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা অক্ষত বাঁধ কেটে সেই মাটি দিয়েই নতুনভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। এর পূর্বে হাওর রক্ষা বাঁধ মেরামত প্রকল্প কমিটি গঠনের অনিয়মের বিরুদ্ধে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ করেন শাল্লা উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক রঞ্জিত দাস।

     

    তিনি ১,৪,৫,৭,১৭,২২,২৩,২৪,২৫,৩২,৩৪,৩৫,৩৭,৪৬,৪৭, ৪৮,৫১,৫৩,৫৮,৫৯, ৬০,৬১,৬২,৬৪, ৬৬,৬৯, ৭৩, ৭৪, ৮৯, ৯১, ৯৪,৯৫,৯৬,৯৭,৯৮,৯৯,১০০,১০২,১০৩,১০৪,১০৭,১০৮,১১০,১১৩,১১৪,১২০ ও ১২৮ নং পিআইসির বিভিন্ন অনিয়মের কথা অভিযোগে তুলে ধরেন। গত ২৫ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৮৫,৮৬,৮৭,৮৮,৮৯,৯০,৯১,৯২,৯৩,৯৪ ও ৯৫ নং পিআইসিতে পুরনো বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

     

    আবার কিছু কিছু পিআইসিতে এখনো মাটি ফেলা হয়নি, সামান্য মাটি দিয়ে প্রলেপি দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক পিআইসিতে বালু মাটিঁ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরনো বাঁধের স্লোভের মাটি এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে বাঁধের উপরে তুলা হচ্ছে। বাঁধের উপর কেটে সমান করে রাখা হয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন এটি সদ্য করা নতুন বাঁধ। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমরা জানতাম প্রকৃত কৃষকরা পাবে পিআইসি।

     

    কিন্তু ৯৪ ও ৯৫ নং বাঁধের কাজ যারা পাইছে তারা প্রকৃত কৃষক না। ৯৫ নং পিআইসির সভাপতি ও ১নং আটগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন আল কাওছার বলেন, মাটি কোঁড়ার বিষয়টি হচ্ছে এই বাঁধে মোট ৫৬৩ মিটার কাজ। এখানে ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ। আমি যখন কাজ করছি ভুল আমার থাকতেই পারে। কিন্তু আমার জানামতে ১০ কেজি মাটিও নিচ থেকে উপরে উঠেনি। সদস্য সচিব বলেন, এভাবে বাঁধের স্লোভের মাটি এনে উপরে তোলাই নিয়ম। অন্যদিকে ৩৩ নং ফসল রক্ষা বাঁধের প্রথম উদ্ভোদন করেন শাল্লা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

     

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ করছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। বাঁধের কাছ থেকে তুলছেন মাটি। এবিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পিআইসির সভাপতি সুরঞ্জিত সামন্ত বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি কতৃপক্ষ অবগত আছেন। বিগত দ্বাদশ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে গাড়ি আনতে পারিনি তাই কাজের এত ধীরগতি। এবিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, সরকার প্রতি বছরই কৃষকদের ঘাম ঝাড়ানো বোরো ফসল রক্ষায় শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

     

    কিন্তু পলি মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটলে সেই বাঁধ কখনো টেকসই হবে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাঁধ দূর্বল হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ প্রকৌশলী কর্মকর্তা রিপন আলী বলেন, আমাদের যে জনবল আছে তাদেরকে ১৩১ টি পিআইসির দ্বায়িত্ব নিয়ে প্রতিদিন মাঠে কাজ করছেন।

    কোন পিআইসিতে বালু মাটি ও কালো মাটি দেখলে তা সড়িয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও কম্পেকশন না করে মাটি ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যারা পিআইসি নিয়েছে তারা মূলত ঠিকাদার না। তাদের ফিলিং চ্যাট দিচ্ছি কিন্তু আমরা না বুঝিয়ে দিলে তারা বুঝতেছে না। পিআইসিদের এজন্যই ভুল ত্রুটিগুলো একটু বেশিই হচ্ছে।

    আমরা প্রতিনিয়ত মাঠে যাচ্ছি বাঁধে কোন প্রকার অনিয়ম করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি ও শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহসান বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধে কোন অনিয়ম করা যাবে না। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিব।

    উল্লেখ্য ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এবছর সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায় বোরো ফসল রক্ষায় ১৩১ টি বাঁধের ৮৪.৩৯৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ২২৮১.৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন।

    আরও খবর

    Sponsered content