• সারাদেশ

    জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা

      মো. রাকিব হোসেন, গাজীপুর প্রতিনিধি: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ , ১১:১৭:৪৩ অনলাইন সংস্করণ

    গাজীপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত জেলা প্রশাসক কার্যালয় সংলগ্ন জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

     

    ফলে এ বিদ্যালয়ে ছেলে—মেয়েদের পড়াতে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা। বিশেষ করে দরিদ্র, নিন্মমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখানে দারুন ভাবে নিগৃহিত।

    জানা গেছে— এ বিদ্যালয়ে দুই শিফটে প্রায় ১৭ শত শিক্ষার্থী লেখা—পড়া করছে। ভর্তি থেকে শুরু করে বছরের শেষ পর্যন্ত নানান ছুতোয় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ কারণে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ ও চাঁপা উত্তেজনা। ইচ্ছে থাকলেও প্রতিবাদ করতে পারছেন না তারা। যদিওবা কোন অভিভাবক প্রতিবাদ করেন, প্রধান শিক্ষক তাকে ধমকে থামিয়ে দেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান— ভর্তির ক্ষেত্রে যারা লটারীতে টেকে না, শ্রেণী ভেদে সেই সকল শিক্ষার্থী ভর্তি করতে তারা গোপনে ২/৩ হাজার টাকা নিয়ে তাদেরকে ভর্তি করেন। বুয়ার ফি বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি নেন ৬০ টাকা, পরীক্ষার খাতা বা কাগজ প্রদান সাপেক্ষে ফি বাবদ নেন ১০০ টাকা, আর পরীক্ষার খাতা শিক্ষার্থী নিয়ে আসলে ফি নেন ৬০ টাকা, পরীক্ষার সাজেশন শিট বাবদ নেন ২০ টাকা, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার মার্কশীট বাবদ নেন ৩০ টাকা আর ওই একই মার্কশীট বার্ষিক পরীক্ষার পর নেন ২০০ টাকা।

     

    এখানেই ঘটনা শেষ নয়, ক্লাস টিচারগণ তাদের নিকট প্রাইভেট বা কোচিং করার জন্যও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে চাপ দেয়। ফলে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে দেয়া হয় বেশী নম্বর, আর যারা ওই শিক্ষকের নিকট পড়ে না, তাদের দেয়া হয় কম নম্বর। অথচ সরকার প্রাইভেট বা কোচিংকে সমর্থন করেন না।

     

    অভিভাবকরা বলেন— যেখানে প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সরকার শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি প্রদান করছেন, সেখানে এই বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি শুধু দৃষ্টি কটুই নয়, অমানবিকও বটে।

    ভূক্তভোগি অভিভাবকরা আরো জানান— এই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সেসন ফির নামে শিক্ষার্থী প্রতি নেন ১০০০ টাকা, ক্লাস পার্টির নামে নেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, স্কুল ড্রেসের মনোগ্রাম বিক্রি করেন ২০০ টাকা, তারপর খেলা—ধূলা ও মিলাদের চাঁদাতো রয়েছেই।
    অভিভাবকদের মতে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজে কোন ক্লাস নেননা।

     

    বিদ্যালয়ে এসে স্বাক্ষর করে সময়ে—অসময়ে চলে যান তার নানা ব্যক্তিগত কাজে। তিনি সরকারি চাকরি করেও রাজনীতির সাথে জড়িত। সরকার নিয়ন্ত্রনাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা, গাজীপুরের চেয়ারম্যান।

    ইতোমধ্যে তার বিদ্যালয় সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা না বলে, তার পরিচিত গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

    কাজেই জেলার শিক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে নজর দেয়া আবশ্যক। যাতে করে অনিয়ম বন্ধ হয় এবং এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
    এ বিষয়ে গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন— প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে কোন ভাবেই কোন টাকা নেয়ার বিধান নেই।

    এ ছাড়া গাজীপুররের আরো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানদের সাথে কথা বলেও জানা যায়, কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়েই কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই।

    আরও খবর

    Sponsered content