• সুনামগঞ্জ

    সুনামগঞ্জে প্রকল্পের ৮০লক্ষ টাকা দেড়বছরেও পরিশোধ করেনি ইউইআরডি

      বাদল কৃষ্ণ দাস ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৯:৫৯:১৫ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ সরকার প্রণীত মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪জেলা) ২য় ধাপের শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক, শিক্ষিকা, সুপারভাইজারদের পাঁচ মাসের বেতন এবং কেন্দ্রের ঘর ভাড়া মিলিয়ে প্রায় ৮০ লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ না করেই এলাকা ছেড়েছে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মিলন বাজার ঠিকানার ইউইআরডি (ইউনাইটেড এফোর্ট ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট) নামের একটি এনজিও সংস্থা।

    এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারক লিপিও দিয়েছেন। কিন্তু তাদের পাওনা টাকা আজও পরিশোধ করেনি এনজিও সংস্থাটি।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ২৬ডিসেম্বর ২০১৯ইং এক নির্দেশনা পত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র আওতাধীন মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) এর অন্তর্গত উপজেলাসমুহের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩শ শিখন কেন্দ্রসমুহ স্থাপন করে ১ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং হতে পাঠদান করতে বলা হলেও করোনা ভাইরাস প্রকোপকালীন গণজমায়েত নিষিদ্ধকরণ পরবর্তী ২৮ মার্চ পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়।

    এরপর আরো কয়েকদফা পাঠদান নির্দেশনার তারিখ পরিবর্তন করে অবশেষে ২০২১ ইং ডিসেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহে পুনরায় শিখন কেন্দ্রে পাঠদান শুরু হয়। পরবর্তীতে এনজিও সংস্থা ইউইআরডি কর্তৃক পরিচালন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পে ৩শ কেন্দ্রসমুহ একনাগাড়ে ৬মাস নামকাওয়াস্তে চালমান থাকে। এসব শিক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় উপকরণও প্রদান করেনি এনজিওটি।এই সাক্ষরতা প্রকল্প তদারকিতে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, অনেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন।

    কিন্তু পরে কোন প্রকার সমাপনী না করেই সংশ্লিষ্ট এনজিওটি কেন্দ্রসমুহের ৩শত জন শিক্ষক, ৩শত জন শিক্ষিকা, এবং ১৫ জন সুপারভাইজারের ৫মাসের বকেয়া বেতন, ১৫০টি কেন্দ্রের ৫মাসের বকেয়া ঘরভাড়াসহ প্রায় ৮০লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ না করেই হঠাৎ এলাকা ছেড়ে চুপচাপ চলে যায়।

    এরপর শিক্ষক/শিক্ষিকা/সুপারভাইজার সবাই জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে উপজেলা এবং জেলাস্থ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে আবেদন জানায়। কিন্তু দেড় বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি এনজিওটি বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি।

    এব্যাপারে শিখন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা জানান, ৬মাস মেয়াদী মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পটি বিগত ৮ডিসেম্বর ২০২১ ইং হতে ৬জুন ২০২২ পর্যন্ত চলমান ছিল। এনজিও’র লোকেরা মাত্র ১ মাসের বেতন দিয়েছে। বাকী ৫মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই প্রতারক এনজিওটি চুপচাপ তাদের অফিস গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিনিধিরা ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি। তাদের সাথে অনেক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

    সুপারভাইজার সুধারঞ্জন তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, রাহুল তালুকদার, শের আলম, সিরাজুল ইসলাম, জানান, ইউইআরডি এনজিওটি ১৫জন সুপারভাইজার ও ৬শ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ৫মাসের বেতন এবং ১৫০টি কেন্দ্রের ৫মাসের ঘরভাড়াসহ প্রায় ৮০লক্ষাধিক বকেয়া টাকা পরিশোধ না করেই রাতের আঁধারে পালিয়েছে। এরা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।

    জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী জাহান বলেন, শিক্ষা অফিসের সাথে এনজিওটির কোন সম্পর্ক নেই। আমরা কোন মনিটরিং বা দেখভাল করি না। তবে শুনেছি এনজিওটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এভাবে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি এনজিওটি চলতে পারে না। এব্যাপারে সুনামগঞ্জের স্থানীয় এনজিও সংস্থা ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালক রবীন্দু চন্দ্র রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে টাকা ছাড় দেওয়া হয়নি বলেই তার এনজিওটি জামালগঞ্জ উপজেলায় সাক্ষরতা প্রকল্পের শিক্ষক, সুপারভাইজারদের বেতন এবং কেন্দ্র সমুহের ঘর ভাড়া দিতে পারেন নি।

    তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডিজি কয়েকদফা বদলী হওয়ায় দেই দিচ্ছি করে টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এবিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এজে এম রেজাউল আলম জানান, আগে কি হয়েছিল তা আমি জানিনা। তবে ভূক্তভোগিরা যদি আমার কাছে আবেদন করে তবে তা মহা-পরিচালক, ঢাকা বরাবরে পাঠিয়ে দেব।

    এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগের প্রকল্পের টাকা পরিশোধ না করেই পুনরায় বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সম্প্রতি “ভালনারেবল উইমেন বেনিফিন(ভিডব্লিবি)” কার্যক্রমের আওতায় ২০২৩-২০২৪ চক্রে উপকারভোগী মহিলাদের উন্নয়ন প্যাকেজ সেবা (প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় ও ঋণ) প্রদানের লক্ষ্যে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত এনজিও ইউইআরডি-কে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও শাল্লা উপজেলায় কর্মএলাকা অনুযায়ী কার্যাদেশ প্রদান করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এনজিওটিকে ভিডব্লিবি প্যাকেজের কার্যক্রম ০১/১২/২০২৩ ইং থেকে শুরু করতে বলা হয়েছে।

    এনিয়ে সমালোচিত এনজিও ইউইআরডি’র কার্যক্রম নিয়ে হাওর এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

    আরও খবর

    Sponsered content