• অনিয়ম / দুর্নীতি

    সুনামগঞ্জে ইয়াকুব উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে সভা অনুষ্ঠিত

      আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ: ২২ নভেম্বর ২০২৩ , ২:০৫:১১ অনলাইন সংস্করণ

    ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়ম,একই ব্যক্তিকে বেআইনীভাবে একাধিকবার সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা,অবৈধভাবে অতিরিক্ত পরীক্ষা ফি আদায়, টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদেরকে অকৃতকার্য দেখিয়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নজিরবিহীন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের ইয়াকুব উল্লা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম আহম্মদ ওরফে গুল আহমদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

     

    অভিযোগে জানা যায়,গত ১৩ নভেম্বর উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে ৯ জন পুরুষ সদস্য ও ২ জন নারী সদস্য অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেন।

    তাদের মধ্যে ব্যালট ভোটের ফলাফলে নির্বাচিত হন আশক আলী,দুলাল মিয়া,সালাম মিয়া ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার নাতি গোলাম মোকাব্বির ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা রাহেলা বেগম। প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ঐ নির্বাচন পরিচালনা করেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ আরিফুল ইসলাম।

    উক্ত আরিফুল ইসলাম কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে তার অফিসে গিয়ে রাতের আধারে নির্বাচিতদের আগাম স্বাক্ষর নিয়ে জালিয়াতি প্রতারনা ও উদ্দেশ্যমূলক বø্যাকমেইলের আশ্রয়ে নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত ছাড়াই গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা শওকত আলীকে সভাপতি ঘোষণা করেন।

    ফলে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচিতদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কমিটি গঠনে পরিকল্পিত জালিয়াতি প্রতারনার পাশাপাশি বিদ্যালয়টির টেস্ট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের আভিযোগও রয়েছে কথিত প্রধান শিক্ষক গোলাম আহম্মদ ও তার সিন্ডিকেটভূক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

    জানা যায় মোট ২৩২ জন পরীক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিলেও পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় মাত্র ৬ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু খাতাপত্রে ৩০ জনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে গুল আহমদ এর সিন্ডিকেট ৭ বিষয় থেকে ১ বিষয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা করে নগদ টাকা গ্রহন করেন। কিন্তু কোন পরীক্ষার্থীদেরকেই তারা টাকা গ্রহনের কোন রসিদ প্রদান করেননি। গত বছরের অকৃতকার্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফরম ফিলআপ করান তারা।

    এছাড়া বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে স্টুডেন্ট আইডি প্রদান করতে গিয়ে গুল আহমদ ও তার সিন্ডিকেট ৩ শত টাকা থেকে ৭শত টাকা করে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন। আরো জানা যায়,স্থানীয় বেড়াজালী বাজারে রয়েছে ইয়াকুব উল্লা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নির্ধারিত মার্কেট। এই মার্কেট এর ৮টি কক্ষ থেকে প্রতিমাসে ২৪ হাজার টাকা ভাড়া উত্তোলন করা হয়।

    বার্ষিক ভাড়া বাবত ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা হিসেবে গত ৭ বছরের ভাড়া বাবত ২০ লাখ ১৬ হাজার টাকার কোন হিসেবে নেই তাদের কাছে।

    ২০১৮ সালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এর নির্দেশে ৭০ হাজার টাকা জনতা ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় জমা প্রদান করা হলেও গত ৫ বছরে ব্যাংকে কোন টাকা জমা দেননি দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুল আহমদ।

    জানা যায়,গুল আহমদ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাখরপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ২০ বছর ধরে একাধারে কর্মরত রয়েছেন তিনি ঐ বিদ্যালয়ে। ৫ বছর আগে দুর্নীতির মামলায় ঐ শিক্ষক কারাবরন করেন। সর্বোচ্চ ৬ মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকার নিয়ম থাকলেও গত ৬ বছর ধরে একাধারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জোরপূর্বকভাবে কর্মরত থেকে যাচ্ছেন তিনি।

    গত ১৫/১১/২০১৭ইং থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বিধি বিধান অমান্য করে। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশও লংঘন করে যাচ্ছেন তিনি।

    মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং ১৮৬১৬/২০১৭ ইং এর ৯/৯/২০২১ ইং তারিখের আদেশ মোতাবেক বর্তমান প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমেদ বিল্লাল কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব সমজিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও সুকৌশলে গায়ের জোরে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর না করে উচ্চ আদালতের আদেশ লংঘন করে যাচ্ছেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, জাপা নেতা শওকত আলীকে সভাপতি করে আমরা ইতিমধ্যে বিধিসম্মতভাবে কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছি। তিনি বলেন,একই ব্যক্তি ম্যানেজিং কমিটির ৩/৪ বার সভাপতি হতে আইনগত কোন বাধা নেই। এছাড়া সভাপতি হতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বিধানও নেই।

    ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম আহম্মদ বলেন,আমি পরে কথা বলছি। এদিকে প্রহসনমূলক ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও দুর্নীতিবাজ সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম আহম্মদ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে ১৯ নভেম্বর রবিবার বিকেল ৫টায় স্থানীয় বেড়াজালী বাজার মাঠে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের ২ বারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতি হাজী মোক্তার আলী।

    বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী,আওয়ামীলীগ নেতা লিমন আহমদ চৌধুরী,ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য প্রতিদ্ব›দ্বী মানিক মিয়া,নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি আশক আলী,দুলাল মিয়া,সালাম মিয়া ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার নাতি গোলাম মোকাব্বিরসহ এলাকার আওয়ামী লীগ,বিএনপিসহ বিভিন্ন দলমতের স্থানীয় অভিভাবকবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

    তারা অনতিবিলম্বে দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম আহমদকে অপসারন করত : তার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও জাতীয় পার্টির নেতা শওকত আলীর স্বঘোষিত সভাপতির পদ বাতিলের জন্য শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

    আরও খবর

    Sponsered content