স্টাফ রিপোর্টার; ২৯ অক্টোবর ২০২৩ , ৩:২২:১৮ অনলাইন সংস্করণ
বিএনপির ছাড় নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির বাড়াবাড়ির জবাব দেয়া হবে। পাল্টা জবাব গড়ে তুলে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ সময় আজ রোবার সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেছেন, সামনে এই সন্ত্রাসীদের সাথে খেলার মতো খেলতে হবে। শিক্ষা দিতে হবে। এই সন্ত্রাসী, এই নোংরামি, এই মিথ্যাচার তাদের অপরাধের ইতিহাস, যা তারা আজকে সেটা করেছে। এদের স্বভাব আয়নার মতো পরিস্কার। এদেরকে আর ক্ষমা করা যায় না। গতকাল শনিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররাম জাতীয় মসজিদের সমাবেশে এমন ঘোষণা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে বিএনপির ডাকা আজকের হরতাল প্রতিহত করা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ঢাকায় আজ রোববার আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ২টায় বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যায়ে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে দক্ষিন গেটের সামনে ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ শান্তি ও উন্নয়ন সামবেশ শুরু হয় সকাল ১১টায়। সকাল ১১টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মূল সমাবেশ শুরু হয় দুপুর পৌনে ২টায়। এর আগে সকাল সকাল ১০ টা থেকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর ও ঢাকা আশেপাশের জেলাগুলো থেকে মিছিল সমাবেশস্থলে এসে জমায়েত হয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এ সময় দলটির অনেক নেতা-কর্মীর হাতে ছিল বাঁশে ও কাঠের লাঠি। অনেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকায় লাঠি ও পাইপ দিয়ে বেঁধে সমাবেশে আসেন। দুপুর ২টার দিতে সমাবেশস্থলের কাছেই ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ দিকে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীর সংঘর্ষ বেঁধে গেলে আওয়ামী লীগের সমাবেশেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ সময় বিএনপির বিরুদ্ধে সমাবেশ মঞ্চ থেকে স্লোগানও দেওয়া হয়।
বিকেল ৫টায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে উদ্বোধন হওয়া টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ঢাকার ওই সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বলে আখ্যায়িত করে বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন স্পটে বিএনপির সহিংসতা করেছে বলে অভিযোগ করেন। বিএনপি পুরনো চেহারা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে। কেন আজকে একজন স্বজ্জন মানুষ প্রধান বিচারপতির বাড়িতে কারা হামলা চালিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। পুলিশের গায়ে যারা হাত তুলেছে। একজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা, এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, কাকরাইলে পুলিশ বক্সে আগুন, মসজিদের সামনে বাসে ও পিকআপে হামলার কৈফিয়ত বিএনপি-জামায়াতের দিতে হবে জানান তিনি।
বিএনপির ডাকা হরতাল কর্মসূচি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এদের এই নৈরাজ্যের হরতাল কেউ মানবে না। হরতালের অস্ত্র ভোতা হয়ে গেছে। এই ভোতা অস্ত্রে কাজ হবে না। আগামীকাল মহানগর, থানা, জেলা, উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশে শান্তি সমাবেশ হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা শান্তি পক্ষে, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে। আমরা শান্তি চাই। আমরা নির্বাচনের আগে শান্তি চাই, নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের পরেও আমরা শান্তি চাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল বলেছি, আমরা শান্তি সমাবেশ করবো। মির্জা ফখরুল আমাদের আগেই ঘোষনা দিয়েছেন সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। তার সেই বক্তব্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছিলাম, মুখে শান্তি, অন্তরে কতো মুর্তি। এটা দেখা যাবে। তো আজকে বুঝলেন তো। বিএনপি কতো নোংরা দল, খুনি দল, সন্ত্রাসী দল। পুরোনো আগুন সন্ত্রাসের চেহারা তারা আজকে আবারো দেখিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এদের (বিএনপি) বাড়াবাড়ির জবাব আমরা দেবো। ইনশাল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সারা বাংলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবারো আমরা গড়ে তুলবো, আন্দোলন গড়ে তুলবো, পাল্টা জবাব গড়ে তুলবো। এদের অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষমা নেই।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অলিগলি দিয়ে পালালেন। হায় রে। এতো বড় বড় কথা। এখন দেখি যে, আপনাদের পেছনে দাঁড়ায়। পশ্চিমারা নাকি উৎসাহ দেখাচ্ছে। কাল থেকে কাউকে আর পাবেন না। দূর্বলের পক্ষে কেউ থাকে না। এতো দূর্বল?
ওবায়দুল কাদের বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেন, দুপুর পর্যন্ত মরণকামড়, এর পর দেখি সব পালায়। এ দিকে তাকায়, ওদিকে তাকায়। নেতারা পালায়, পিছে পিছে কর্মীরাও পালায়। জামায়াতকে বলছে ওখানে করো। কিছুক্ষন লাফালাফি করে জামায়াতও স্থান ত্যাগ করলো। আমরা থাকবো ইনশাল্লাহ। শেখ হাসিনার কর্মীরা, বঙ্গবন্ধুর কর্মীরা মাঠে আছে, ছিলো থাকবে।
বিএনপির ‘মহাযাত্রা’ এখন মহাপতন যাত্রা রুপ নিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাযাত্রা এখন মরনযাত্রা। সেমিফাইনাল সামনে। তারপর ফাইনাল। নির্বাচনে ফাইনাল খেলা। খেলা হবে। এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার কষ্ট করেছেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়াও করতে পারেননি। আমরাও আজকে দুপুরে বেলা খাওয়া থেকে বঞ্চিত। ঢাকার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে নেত্রী হেলিকপ্টারে উঠেছেন দুপুরের খাওয়া না খেয়ে। কারন তার টেনশন আমাদের চেয়েও বেশি। কিন্তু তার কথাবার্তা সুর ছিলো অন্যরকম। তিনি (শেখ হাসিনা) বললেন যে, দেখবো ওরা কি করে। এইসব বাড়াবাড়ি, এই সব নোংরামী, আজকের যে খুনোখুনি, অস্ত্রবাজি-আগুন সন্ত্রাস, বাংলার মাটিতে অবশ্যই এদের শাস্তি হবে। এদের অপরাদের বিচার হবে। আজকে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে, আমাদের কর্মীদের গাড়িতে হামলা করে। আজকে তারা প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করে। এসব অপরাধের ওপর পর এদের কোনো ছাড় নেই।
এ সময় বিএনপির ডাকা আজ রোববারের হরতাল প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপি মহাসমাবেশের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করেছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের নেতারা সমাবেশে বলেন, বিএনপিকে মোকাবিলা করা হবে। আমরা আগামীকাল পাড়া-মহল্লায় দূর্গ গড়ে তুলে হরতাল প্রতিহত করা হবে।
বিএনপি সহিংতার জবাব দেওয়া হবে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নিজ বক্তব্যে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সমাবেশ শেষ করে সন্ত্রাসীদের হরতাল মানি না, মানব না এই স্লোগান দিতে দিতে বাড়িতে যাবেন। সময় নানক সমাবেশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হরতাল পালন করবেন, তখন সমাবেশ থেকে স্বমস্বরে উচ্চারিত হয়, না। এ সময় নানক বিএনপিকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা রক্তচক্ষু দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে নামাতে চেয়েছিলেন নামাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, কিন্তু তারা কি করেছেন? মির্জা ফখরুল সাহেব, আপনি কথা রাখলেন না। বলেছিলেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু আক্রান্ত করলেন পুলিশের ওপর। আগুন দিয়েছেন। সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন। এই সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোটেক কামরুল ইসলাম দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে থেকে বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলাই আমাদের প্রধান কাজ। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে বিচারপতির বাড়িতে ওপর হামলা করেছে বিএনপি।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা বিদেশী শক্তির উপর নির্ভর করে না। খবর পেয়েছি বিএনপি তাদের কর্মসূচি করে এখন একটি ক্লাবে গিয়েছে তাদের পরবর্তি কর্মসূচির প্রেসক্রিপশন নিতে। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যা বলবেন, তা পালনে আপনারা জীবন দিতে প্রস্তুত কি না? তখন নেতা-কর্মীরা দুই হাত তুলে হ্যাঁ বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি পালিয়ে গিয়েছে। কারণ তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করতে চেয়েছিল। পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ফলে পুলিশ বসে থাকেনি।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় নেতা-কমীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করার অবৈধ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে। রক্তাক্ত করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ করেছে। এই সন্ত্রাসীদের আমাদের প্রতিহত করতে হবে। নির্বাচন ব্যাহত করছে তারা। আগামীকাল রবিবার হরতালের নামে যদি সন্ত্রাস করে তা মোকাবিলায় আপনারা তৈরি হোন। বিএনপি সন্ত্রাস করলে আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।
সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, তারা (বিএনপি) হামলা করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা রাজপথে নেমেছে। আমরা রবিবার পাড়া-মহল্লায় দূর্গ গড়ে তুলবো। হরতাল প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, গত ১৫ বছরে আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এর আগে আমরা পালন করি নাই। আজকে তারা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করেছে। রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে। সেদিনের সমাবেশ আবারও আপনাদেরকে সফল করার আহ্বান জানাই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এএইএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সুজিত রায় নন্দী, আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, দলের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, তারানা হালিম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বক্তব্য রাখেন।