• সুনামগঞ্জ

    বাউল কামাল পাশার গানে শহীদ শেখ রাসেল ও কিছু কথা

      প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:১৭:২৫ অনলাইন সংস্করণ

    আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : আজ ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে যেসময় তিনি ঘাতকদের বুলেটে শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৮ দিন। শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে তার জন্মদিনকে শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয়বারের মতো এবার শেখ রাসেল দিবস ২০২৩ পালনের প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে,শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয় শ্লোগানটি। শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি ভাটি অঞ্চলের বাউল শিল্পীরা এই দিবসটিকে শহীদ রাসেল বন্দনায় আবেগ আর কান্নায় গানে গানে উপভোগ করবেন বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদানপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক সংগঠণ বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ এর সভাপতি মহিবুর রহমান। তিনি বলেন,আমরা মনে করি স্থানীয় বক্তাদের বক্তৃতার চাইতে বাউল কামাল পাশার রাসেল বিচ্ছেদ গানই আমাদেরকে শহীদ রাসেলপ্রেমে বেশি করে উজ্জীবিত করবে।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি এ উপলক্ষ্যে কর্মসূচি পালনের জন্য সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

    শেখ রাসেল স্বপরিবারে শহীদ হওয়ার দীর্ঘ ৪৮ বছরের ব্যবধানে তাঁর জন্মদিনটি আজ একটি জাতীয় দিবসে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এই দিনটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে তা সময়ই বলে দেবে। পৃথিবীর কোননা কোন স্থানে রাজনৈতিক সংঘাত,ধর্মীয় হানাহানিসহ নানাবিধ ঘটনায় শিশুরা খুন ও গুমসহ নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু পৃথিবীর কোন সভ্য জাতি কখনও খুনীদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেনা। আলেকজান্ডারের মতে কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস ? কথাটি কেবল শিশু রাসেলের খুনীরাই ক্ষমতা দখল করে প্রমাণ করে দিয়েছিলো। এমনকি দায়মুক্তি আইন করে তারা বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। যদিও শিশু রাসেলের খুনিরা বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। তবে ধানমন্ডির সেই ঘটনাটি ছিল একটি জগন্য নারকীয় তান্ডবলীলা। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার সাথে ধানমন্ডির সেই ঘটনাটিকে একইসূত্রে গ্রথিত করে বিচ্ছেদ সংগীত রচনা ও পরিবেশন করে গেছেন ভাটি অঞ্চলের এক বাউল শিল্পী। মহান এই সংগীত শিল্পীর নাম বাউল কবি কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন)। সুনামগঞ্জ জেলার ৫ প্রধান লোককবির মধ্যমণি হচ্ছেন তিনি। ১৯৮৫ সালের ৩রা মে শুক্রবার সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামে লোকান্তরিত হন ঐতিহাসিক পালাগানের এই বিখ্যাত মরমী সাধক। ১৯৬৪ সালে মহকুমা প্রশাসন ও আর্টস কাউন্সিল কর্তৃক সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবে পালাগানের অপ্রতিদ্ব›দ্বী শিল্পী নির্বাচিত হওয়ায় যিনি গানের সম্রাট উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন সেই প্রতিভাবান বাউল শিল্পী ১৯৫২ সাল থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু,নৌকা প্রতীক,আওয়ামীলীগ,ভাষা আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্ট এর বিষাদ নিয়ে অজ¯্র গান লিখেছেন। এমনকি স্বরচিত এসব গান ১৯৭০ ও ৭৩ সালে এবং এর পূর্বাপরে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর সভামঞ্চে পরিবেশন করেছেন। একসময় এই গানগুলো ভাটি অঞ্চলে সংস্কৃতিসেবীদেরকে মুজিবপ্রেমে আবদ্ধ করতে আবেদন সৃষ্টি করতো। সময়ের ব্যবধানে শহীদ রাসেলের স্মরণে রচিত ও পরিবেশিত সেই বিখ্যাত গানগুলো রাসেলপ্রেমীদের নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে বলে বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বাউল শাহজাহান সিরাজ। তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর বিচ্ছেদ নিয়ে বাউল কামাল পাশার শতাধিক গান রয়েছে। মঞ্চে এই গানগুলো পরিবেশিত হলে উপস্থিত ¯্রােতা দর্শকরা কতটুকু আবেগ আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। এসব কারণেই রাসেলপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থান দখল করতে আমি বাউল কামাল পাশার নিচের ৩টি রাসেল বিচ্ছেদ গান গাওয়ার চেষ্টা করি।

    বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান বলেন,বাউল কামাল পাশার বঙ্গবন্ধু বিচ্ছেদ গান আমাদেরকে সবসময় প্রেরণা দিত। ৫২ সাল থেকে ৮৫ সাল মৃত্যূর পূর্ব পর্যন্ত এই মহান সাধক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতিটি সদস্যদেরকে নিয়ে গান রচনা ও পরিবেশন করে গেছেন।

    সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট বলেন,১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন থেকে ৭৩ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় স্বায়ত্বশাসন,৬ দফা,নৌকা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখেছেন বাউল কামাল পাশা। মুজিবপ্রেমী একজন সংগীত সাধক হিসেবে একদিন তিনি মরণোত্তর হলেও সরকারের স্বীকৃতি পাবেন বলে আমি আশা রাখি।

    ১ (১৫ আগস্ট এর শহীদদের স্মরণে)
    বন্ধু সদায় জলে গাও
    বিচ্ছেদে মোর পুড়া অঙ্গ কেনবা জ্বালাও \

    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন করলেন পণ
    দেশের তরে স্বপরিবারে বিলাইলেন জীবন।
    মীর্জাফর মোস্তাক রশিদ ফারুক কাউকে না ছাড়িলো
    ১০ বছরের শিশু রাসেল এর প্রাণ কাড়িয়া নিলো।
    লাখো শহীদের প্রাণের কসম শুইন্যা সবে যাও
    বঙ্গবন্ধুর সোনার নৌকা কিনারা লাগাও \

    রাসেল বলে মায়ের কাছে যাবো আমি আমায় ছেড়ে দাও
    শত মিনতি করার পরও ছাড়েনা তার গাও।
    কারবালা প্রান্তরে যেমন শিশু আলী আসগর বলী হলো
    একইভাবে শেখপুত্রও জীবন দিয়ে গেলো।
    ডাক এসেছে দেশবাসী টুঙ্গিপাড়া যাও
    সীমার বংশ করতে ধ্বংস প্রতিজ্ঞা পুরাও \

    ও প্রেম করছে যারা জানে তারা প্রেমে কিযে জ্বালা
    প্রেম করছেনা জন এ সংসারে আছে সেজন ভালা।
    প্রেমিক ছাড়া জানেনাতো প্রেমের কিযে বাও
    পুড়তে পুড়তে ছাই হইলো আমার দেহ নাও।
    প্রেমিক মরলেও প্রেম মরেনা প্রেমের নৌকা বাও
    প্রেমিকের প্রেম মার্কা মারা কামাল প্রেমে গাও।।

    ২ (শহীদ শেখ রাসেল স্মরণে)
    কাঁন্দে রাসেল দায়ে পড়ে,জালেমদেরও হাতে ধরে
    প্রাণে তোমরা মাইরোনা আমারে রে।।

    দারুন বিধিরে,
    ধর্মমতে রাখিলেন নাম,করিনিতো কোন বদনাম
    পিতা আমার মুজিবুর রহমান।
    ছিলেন তিনি দেশের নেতা,ভালো পায় সকল জনতা
    দারুন বিধিরে,কোন পাষানে করলো হত্যা তাঁরেরে।।

    দারুন বিধিরে,
    মাও মারলো বাপও মারলো,২টি ভাইকে শেষ করিলো
    ১৭ জীবন প্রদীপ নিভাইয়া।
    পরে আমায় নেয় ধরিয়া,মাথায় দেয় গুলি করিয়া
    দারুন বিধিরে লাশ ফেলে দেয় দুই ভাবির মাঝখানেরে।।

    দারুন বিধিরে,
    যার কপালে যাহা লিখন,কে পারে করিতে খন্ডন
    খন্ডাইতে সাধ্য আছে কার ?
    ভেবে বলে কামাল উদ্দিন,সোনার বাংলা হইলো মলিন
    দারুন বিধিরে,তোমার লীলা বুঝা হয় অপার ওরে।।

    ৩ (শহীদ শেখ রাসেল স্মরণে)
    বলো দোষ কি ছিল শেখ রাসেলের ?
    অবুঝ শিশুর খুনি যেথায়,সেই দেশটা হইবে হিং¯্ররে।।

    ১০ বছরের শিশু ছিল,অপরাধ না কিছুই করলো
    কোন পাষানে হত্যা করলো,সুহৃদ হইয়া সীমারের।।

    মাতাপিতার আদরের ধন,শেখ হাসিনার মানিক রতন
    চালায় গুলি পাষন্ডগন,মাথার খুলি আলগা ধরের।।

    কারবালাতে যা ঘটিলো,ধানমন্ডীতেও তাই হইলো
    বাউল কামাল পাশা আশায় রইলো,বিচার হইবে খুনীদের।।
    কামাল উদ্দিন আশায় রইলো,বিচার হইবে বিষাদের।।

    0Shares

    আরও খবর

    Sponsered content