প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১১:০২:১২ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধি: শাল্লায় ছায়ার হাওর,খোয়ার হাওর, সতুয়া নদী, সোনাকানী বিল, ভান্ডা বিল চিনামারা বিল, হারিয়া বিল, এবং বড় হাওরের একাধিক মৎস্যজীবী, সমিতি ও জেলে ইজারাধারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ইজারা নিয়ে লাভের চেয়ে এখন লোকসানই বেশী। হাওরের ধান বাঁচাতে বিলে সবদিকে বাঁধ দেয়া হয়। এই বাঁধের কারণে মাছ ঢুকতে পারে না। যেগুলো আছে সেগুলোও চলাচল করতে পারে না। ফলে শুষ্ক মৌসুম বিল সিচেও তেমন মাছ পাওয়া যায় না।
ধান রক্ষায় অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণের জন্য মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধের কারণে মাছ ইচ্ছা মতো পানিতে ঘুরে বেড়াতে পারছে না। এ কারণে হাওরের মাছ কমে যাচ্ছে। রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য ধান গাছে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগও হাওরের মাছ কমে যাওয়ার কারণ।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নদীর মাছ আগে হাওর ও বিলে গিয়ে আশ্রয় নিতো। এখন বাঁধের কারণে নদী থেকে হাওর বা বিলে যেতে পারছে না মাছ।
এ প্রসঙ্গে জেলেদের জিজ্ঞেস করলে বলেন আমরা এখন আগের মতো মাছ ধরতে পারছি, কারণ মাছ আমাদের এলাকার বিল,হাওরে, নদী নালায় কোথায় মাছ ধরতে পারছি না। আমরা হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষ যারা মাছের উপর ভরসা করে চলতাম এখন আর চলতে পারছিনা। বউ বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছি। আমাদের এলাকা থেকে শত শত পরিবার আজ ঢাকা গার্মেন্টস করছে। তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন। আগে মেয়ে ছেলে নিয়ে ঢাকা গেলে কোডা দিত।
দাউদপুর বাজারের, মৎস্য আড়তের মালিক মোহাম্মদ আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ভাটির হাওর এখন মাছ শূন্য। মাছ নেই, বললেই চলে। আমাদের ব্যাবসাও খুব মান্দা। কিছু মাছ যা হয় ওরা আমাদের আড়তে না দিয়ে ওরা চামরাবন্দর মাছ বিক্রি করছে।
এলাকার অনেক আদর্শ কৃষকের ধারনা, হাইব্রিড ধানে ১০০% চাষ হয়। উচ্চফলনশীল ধান ফলানোর প্রতিযোগীতায় নেমে যাই আমরা অতিরিক্ত সার,অতিমাত্রায় কীটনাশক,দিয়ে ধানের ফলন বাড়লে নিধন হচ্ছে মাছ,ও মাছের প্রজনন।
আমাদের প্রকৃতির অনুকূলে কাজ করতে হবে। যে জায়গায় ধান হয় সেখানে ধান চাষ এবং যে জায়গায় ধান হয় না, অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় সেখানে ধান চাষ না করে মাছ চাষে মনোযোগী হতে হবে। সেই সঙ্গে কীটনাশক ব্যবহারে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ তাদের। তা না হলে এ মূহুর্তে হারাচ্ছি ধান, অদূর ভবিষ্যতে ধান ও মাছ দুটিই হারাতে হবে হাওরবাসী।
অবাধে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন হচ্ছে। অবাধে বিক্রি হচ্ছে রেণু পোনা। প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে, কেউ বাধা দিচ্ছে না। ‘মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে ও উৎপাদন বাড়াতে অবশ্যই পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ক্ষতিকর জালের ব্যবহারও। হাওর এলাকায় এসব কেউ মানছে না।’কোনাবের নামক জাল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছে অনেকেই। কারন্টের জাল অনেক বাজারেই অপেন বিক্রি করছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিছু হাওর, এর জরিপে উঠে এসেছে হাওর, এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে আরও কিছু প্রজাতি।
সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বেদা, রয়েছে- বাচা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড়,,
আর বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড় বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ দারপিনা।
এ বিষয়ে আইডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নজমুল হক বলেন, ‘হাওরের মাছের বিলুপ্তি রোধ ও বিস্তারে অসময়ে পোনা মাছ ধরা বন্ধসহ ডিম ছাড়ার মৌসুম বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা ও মৎস্য আইন সম্পর্কেও মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া হাওরের যত্রতত্র বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কমাতে হবে কীটনাশকের ব্যবহারও।’
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত অর্থ বছরে এই জেলা থেকে ৯০ হাজার ১৩০.২৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নদী থেকে ৪ হাজার ৫৪৪.৪৫ মেট্রিক টন, বিল থেকে প্রাকৃতিকভাবে ২৮,৬২৪.৩৯ মেট্রিক টন, বিলে পোনা অবমুক্তের মাধ্যমে ৬০.৯০ মেট্রিক টন, হাওর থেকে ৩৪ হাজার ১৩৪.০৭ মেট্রিক টন এবং প্লাবনভূমি থেকে ২৭১৫.২৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যায়।
ওই কার্যালয় আরও জানায়, জেলায় ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ২০ হাজার ৭৬৯টি মৎস্য খামার আছে। গত অর্থবছরে খামারগুলোতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৮.৮৫ মেট্রিক টন মাছ।
কিন্তু, শাল্লার হাওরাঞ্চলে মাছ নেই বললেই চলে। প্রতিনিয়ত ছুটছে মানুষ ঢাকার রাস্তায়।একজন জিজ্ঞেস করলে বলেন যেখানে কাজ সেখানে যেতে হবে মাছ মেরে বউ বাচ্চা পালার দিন আর নাই।