প্রতিনিধি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:২৬:০২ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে ছায়েদ আলী মোল্লার বেপরোয়া চাঁদাবাজী অব্যাহত রয়েছে। প্রতিরাতে কমপক্ষে এক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে উক্ত ছায়েদ আলী। সে নিজেকে সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি সাহেবের লোক বলে নিয়মিত চাঁদা আদায় করায় প্রাণভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করেনা। জানা যায় সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম সদরগড় গ্রামের পরব আলীর পুত্র চাঁদাবাজ ছায়েদ আলী ওরফে ছায়েদ মোল্লা। তার সাথে রয়েছে একই গ্রামের চাঁদাবাজ চোরাকারবারী লিয়াকত আলী,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার বোটম্যান ফরহাদ ও মানিক। প্রতিরাতে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা ধোপাজান চলতি নদীর পাড় কেটে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ বালি ও পাথর উত্তোলনকারী চোরাকারবারীদের দ্বারা লোডকৃত ইঞ্জিন নৌকা ও পঙ্গপাল (ছোট নৌকা) ধোপাজান নদী হতে নিরাপদে সুরমা নদীতে বের করার দায়িত্বে থেকে উক্ত ছায়েদ আলী প্রতিরাতে এক লাখ টাকা পকেটস্থ করে।
প্রতিরাতে নদীতে টহলের দায়িত্বে থাকার নামে পুলিশের স্পীডবোট নৌকায় আবার কখনও ডাঙ্গায় অবস্থান করে ছায়েদ আলীর সাহায্যার্থে ভূমিকা পালন করেন সুনামগঞ্জ সদর থানার বোটম্যান ফরহাদ ও মানিক। সদর মডেল থানা পুলিশের নামে উক্ত ছায়েদ আলীকে সরাসরি চাঁদা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল। এসময় আল-হেলালের সাথে পূর্ব সদরগড় জামে মসজিদের মুতওয়াল্লী নুরুজ আলী ও একই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মিছির আলীসহ গ্রামের একদল যুবক উপস্থিত ছিলেন।
১৬ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত ১২ ঘটিকার পর হইতে ধোপাজান নদীর উভয়পাড়ে প্রায় ১০০টি বালিভর্তি পঙ্গপাল নৌকা দেখতে পান তারা। এসময় গ্রামবাসীর সামনেই একটি ছোট্ট ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে প্রতি নৌকা থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে ছায়েদ আলী। এসময় তাকে কেন চাঁদা উত্তোলন করছেন জানতে চাইলে চাঁদা উত্তোলনকারী ছায়েদ আলী বলেন,আমাকে জিগাইয়া কোন লাভ নেই ওসি স্যারকে জিগান।
দ্বিতীয়বার জিজ্ঞঅসাবাদ করলে ছায়েদ আলী বলে এসআই আমির স্যার আছেন উনাকে বলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করলে ছায়েদ আলী বলে ফরহাদ ভাই আর মানিক ভাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টায় ছায়েদ আলী নিজে উপস্থিত থেকে বালিবুঝাই করা পঙ্গপাল নৌকাগুলো ধোপাজান নদীতে কোনপ্রকার বাধাপ্রদান ব্যতিরেকেই সুরমা নদীতে বের করে দেয়।
এর আগের দিন ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার ভোররাতে একই সময়ে অনুরুপভাবে শতাধিক পঙ্গপাল নৌকা ছেড়ে দিয়ে লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেয় উক্ত ছায়েদ আলী মোল্লা। এ ব্যাপারে ধোপাজান-চলতি নদী বালি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবীর আহমদ বলেন,ছায়েদ আলী মোল্লা প্রতিরাত্রেই ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে পঙ্গপাল নৌকা ব্যবহারকারী সরকারের খনিজ সম্পদ লুটতরাজকারী চোরাকারবারীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে রাত ৩টা থেকে ৪টার সময় একযোগে শতাধিক নৌকা সুরমা নদী দিয়ে বের করে পুলিশের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। তার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে জানালেও কেউ কোন প্রতিকার নেয়না। হুরারকান্দা গ্রাম নিবাসী সাচ্চু মিয়া বলেন,আমরা প্রতিরাতে ১২ জন লোক ধোপাজান নদীতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের জ্ঞাতসারে পাহাড়া দিয়ে নজরদারী করি। প্রায় প্রতিরাতেই শতাধিক পঙ্গপাল নৌকা ছায়েদ মোল্লার কথা বলে চোরাইকরা বালি বুঝাই করত: ধোপাজান নদী হতে নিরাপদে বেরিয়ে যায়। কোনকিছু জানতে চাইলে অথবা জিজ্ঞেস করলেই উক্ত ছায়েদ আলী মোল্লা আমাদেরকে সদর থানার ওসি সাহেবের ভয় দেখায়। সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পশ্চিম সদরগড় নিবাসী আফসান পারভেজ বলেন,ছায়েদ আলী মোল্লা প্রতিরাতেই পুলিশের কথা বলে পঙ্গপাল নৌকা থেকে বিভিন্ন রেটে চাঁদা উত্তোলন করে থাকে এটা আমার গ্রামের সকলেই জানে। তবে তার মোটা অংকের চাঁদার ভাগ পুলিশ প্রশাসন পায় কিনা আমি জানিনা। কিন্তু সে পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গায়। পশ্চিম সদরগড় গ্রামবাসী বলেন,ধোপাজান নদীতে যেই সময় থেকে পুলিশ ক্যাম্প বসে তখন থেকেই পুলিশ সোর্স সেজে রাতারাতি ২৫/৩০ লাখ টাকার মালিক বনে গেছে ছায়েদ মোল্লা। অথচ সে একজন অস্থানীয় লোক। নদীতে পুলিশ ক্যাম্প বসার আগে তার কিছুই ছিলনা। এখন রাতারাতি নদীতে চাঁদাবাজী করে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে। তার ছত্রছায়াতেই প্রতিরাতে ধোপাজান চলতি নদীর ডলুরা কাইয়ারগাঁও এলাকায় চোরাকারবারীরা ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা বালিপাথর উত্তোলন করে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটতরাজ করে যাচ্ছে। পশ্চিম ইব্রাহিমপুর নিবাসী ইউপি সদস্যা তানজিনা বেগম বলেন,ছায়েদ আলী গত একমাস যাবৎ পুলিশের বোটম্যান ফরহাদ ও মানিক মিয়াকে নিয়ে আমার বসতবাড়ীর সামনে ধোপাজান চলতি নদীর মুখে বালিবাহী নৌকার ভীড় জমিয়ে প্রতি নৌকা থেকে এক হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে বিভিন্ন রেটে চাঁদা উত্তোলন করে এসব নৌকা সুরমা নদীতে বের করে দেয়। সে সবকিছুই করে থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এটা আমার ইউনিয়নের সবাই জানে। স্থানীয় পূর্ব সদরগড় গ্রামের লোকজন বলেন,রবিবার ভোর রাত ৩টা থেকে আমি প্রায় ৫ বার সদর মডেল থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী সাহেবের মোবাইল ফোনে কল করে আমরা ঘটনার কথা অবগত করতে চেয়েছি। কিন্তু ওসি সাহেব ফোন রিসিভ না করায় তার নামে যে ছায়েদ আলী নদীতে টাকা উত্তোলন করে তা জানাতে পারিনি। সুনামগঞ্জ নৌ পুলিশের এসআই ইয়াছিন বলেন,ছায়েদ আলী মোল্লার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নৌপুলিশ বাদী হয়ে একটি চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করে। এই মামলাটি বিচারাধীন আছে। তারা বলেন রাতে চাঁদাবাজীকালে ছায়েদ আলীকে হাতেনাতে আটক করে নৌপুলিশকে খবর দিলে আমরা তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করবো। সুনামগঞ্জ পৌরসভার উত্তর আরপিননগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রব আব্দুল্লাহ বলেন,শনিবার ও রবিবার ভোরে শত শত পঙ্গপাল নৌকা ধোপাজান নদী হতে বের হয়েছে। একসঙ্গে এত নৌকার ইঞ্জিনের শব্দে আমাদের আরামের ঘুম হারাম হওয়ার ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে সদর মডেল থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। ধোপাজান নদীর দুতীরের বাসিন্দারা বলেন,ধোপাজান নদীতে ছায়েদ আলী মোল্লা পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করছে। যে কারনে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছেনা। আমরা চাই ইজারা ও নিলামবিহীন ধোপাজান নদীতে চাঁদাবাজীর দায়ে পুলিশ প্রশাসন ছায়েদ আলী মোল্লাকে আটক করুক। তা নাহলে পুলিশের নির্দেশে ছায়েদ আলী নদীতে চাঁদা উত্তোলন করছে এটা কারো বুঝতে বাকী থাকবেনা। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।