প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১:১৮:৫২ অনলাইন সংস্করণ
ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেট সীমান্তের চোরাকাবারিদের গডফাদার আবুল হোসেন সহ তার সিন্ডিকেটের চোরাচালান বাণিজ্য কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের সাথে সখ্যতা থাকা আবুল নিজেকে সীমান্তের মাফিয়া হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে দেশে আবুলের মাধ্যমে প্রবেশ করছে অবৈধ অস্ত্রের চালানও। এমনটি নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একাধিক সূত্র।
আবুল হোসেনকে নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠলে তাকে আটক না করে জামাই আদর দিয়ে সহযোগীতা করে যাচ্ছে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। আবুল সিন্ডিকেটের চোরাকারবারিরা এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রশাসনের প্রতি, প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ার সাথে-সাথে তারাও বাড়িয়েছে তাদের বাণিজ্য।
জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট সীমান্তের চোরাচালান জগতের মাফিয়া আবুল উরফে পিচ্ছি আবুল। সময়ের সাথে সাথে চোরাচালান জগতে আবুল স্বষোষিত মাফিয়া হয়ে উঠেছে। আবুলের চোরালান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাকি তদন্তটিম ঘটন করা হয়েছিলো, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই টিমকে আবুল হোসেন ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে এমন বক্তব্য খোদ আবুলের। যে পাম্পের মালিক আবুল হোসেন সেই পাম্পটি গত বছর ৮২ লক্ষ টাকা খরচ করে অংশিদারীত্ব নিয়ে সংস্কার সহ উদ্বোধন করেন আবুল। পাম্পের আগের মালিক সোনা মিয়ার দুই ছেলে আবুল কালাম ও শহিদের সাথে ২০ বছরে চুক্তি হয় আবুল ও মনিরের।
সংবাদ প্রকাশ হওয়ার আবুল হোসেন নিজেই সবাইকে বলে দেন, কেউ জানতে চাইলে বলবেন, আমি পাম্পের কোন মালিক বা অংশিদার নই। খোলা দোকানের তৈল বিক্রি করা আবুলের সম্পদের পরিমান এখন কয়েক কোটি টাকা।
জৈন্তাপুর রোডের ব্ঙ্গুারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই লাইনে ব্যবসা করলে আবুলকে কোন পুঁজি ছাড়া অংশিদার করতে হয়। কারণ আবুলের মাল ছাড়া কোন মালই প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে পারবেনা। কয়েকদিন আগে পাম্পকে ঘিরে আবুলের চোরাচালানের জগত নিয়ন্ত্রন হতো। পাম্পের পাশেরই আবুলের চোরাচালানের অফিস এমনটি নিশ্চিত করেছেন পাম্পের একজন মালিক আব্দুস শহিদ নিজেই। যদিও কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা আবুলের চোরাচালান বানিজ্য।
হরিপুর উৎলারপাড় গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র আবুল হোসেন উরফে পিচ্চি আবুল নামে সকলের কাছে পরিচিত হলেও চোরাচালান জগতের সে এক রকম মাফিয়া। আবুল যেই গাড়ি দিয়ে সিলেট শহরে মাদক সরবরাহ করে থাকে সেই প্রবোক্স গাড়ির নাম্বার হলো ঢাকা মেট্টো-খ-১২-৬৬৭৫। এই গাড়ি সিলেট শহরে মাদক সরবরাহ করে আবুল হোসেন।
সংবাদ প্রকাশের পর থেকে আবুল হোসেন ও তার সহযোগীরা বড়-বড় কাবার্ডভ্যান ও ডিস্ট্রিক ট্রাক দিয়ে চোরাই মাল সরবরাবহ করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ট্রাকের ভিতরে প্রথমে চোরাইপন্য লোড করা হয় পরে সেগুলোর কখনো বালু আবার কখনো পাথর লোড করে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে আবুল হোসেন।
সম্প্রতি আবুলের চিনির মাল নিয়ে একটি গাড়ি দূর্ঘটনায় পতিত হলে হরিপুর বাজারের কাছে করিছেরপুল নামক স্থানে এক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম লোকমান আহমদ তার বাড়ি ৩নং চারিকাটা ইউইনিয়নে দক্ষিণ নয়াখেল গ্রামের লোকমান আহমদ। বিষয়টি আবুল টাকা দিয়ে ধামা চাপা দিয়ে দেয়।
আবুলের বিরুদ্ধে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, এসএমপির শাহপরাণ থানায় চোরাচালানের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। অনেক মামলা আদালতে বিচারাধিন থাকলেও আবুল থেমে নেই।
আবুলের ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিচালনা করে হরিপুর বালিপাড়া গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে মিসবাহ, উৎলারপাড় গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে মহিবুল, একই গ্রামের লাল মুসার ছেলে কামাল। এদের প্রত্যেককে আবুল সেক্টর ভাগ করে দিয়েছে কেউ চিনির সাইট, কেউ মাদকের সাইট, কেউ কসমেটিক্সেও সাইট নিয়ন্ত্রণ করেন। আবুলের একান্ত সহযোগী হরিপুর গ্রামের মানিক মিয়ার বাড়িতে গড়ে তোলেছে চোরাচালানের বিশাল গোডাউন।
একাধিক চোরাকারবারিদের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা আবুলের মাধ্যমে সিলেট শহরে অবৈধ ভারতীয় চিনি, ফেনসিডিল এনে থাকি। মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র আসে আবুলের হাত ধরে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আবুলের এক সহযোগী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে কিভাবে অস্ত্রের ব্যবসা করা যায় সেই পরিকল্পনায় রয়েছে আবুল। এরকম একটি পার্টিও সাথে আবুলের ধর কষাকষি চলতেছে।
প্রশাসন আবুলের এই মালগুলো ধরে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে চোরাকারবারিরা বলেন, ভাই প্রশাসন তো আবুল ভাই নিয়ন্ত্রণ করে। তবে জৈন্তাপুর- গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন নিত্য-নতুন কৌশল পাল্টে সড়ক ও নৌ-পথে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। এবার চিনি-চাপাতা, কসমেটিক্স, মাদকের পাশাপাশি জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে অবৈধ অস্ত্রের চালান। সীমান্তের মাফিয়া হিসাবে পরিচিত হরিপুরের এই আবুলের হাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে অস্ত্রের চালান। বালু কিংবা পাথর বোঝাই ট্রাকে করে সেই সব চালান পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার অপরাধী চক্রের কাছে। যদিও ঈদানিং বিভিন্ন জেলা- মহানগর ডিবিসহ থানা পুলিশ চোরোচালানের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করায় মাঝে মধ্যে চোরাচালানের চিনি আটকের খবর আসছে মিডিয়ায়। সম্প্রতি জেলা ডিবির এসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গত ৯ তারিখে হরিপুর এলাকার হাজির বাড়ি গোডাউন থেকে আবুল হোসেনের ২২৬ বস্তা চিনি আটক করে পুলিশ। কিন্তু ৯টার দিকে হরিপুর এলাকারই ৭ নাম্বার নামক স্থানে চিনি বোঝাই গাড়িগুলো দুই লক্ষ টাকা নিয়ে ডিবির এসআই দেলোয়ার হোসেন ছেড়ে দেন। পরে লোক চক্ষুর আড়াল করতে মাত্র ২৬ বস্তা চিনি আটক দেখিয়ে একটি মামলা রুজু করেন। অপর চিনির বস্তা গুলো ছাড়িয়ে নিতে সময় হরিপুর বাজারের সাবেক সভাপতি রাজাকার হেলালের মাধ্যেমে সেই ২ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন এসআই দেলোয়ার হোসেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য চোরাইচিনি মালিক আবুল হোসেন হলে মামলা হয় আরেক নিরোপরাধ ব্যক্তির নামে। এদিকে চোরোচালান নিয়ন্ত্রনে চুনাপটি আটক করলেও রাগব বোয়ালদের সাথে-পাছে যেতে পারছেনা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে চোনাপুটি গ্রেফতার হলেও রাগব বোয়ালরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরোচালানের একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হরিপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র এই আবুল হোসেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পাম্পের এই অফিসেই বসে চোরাকারবারীদের মিলন মেলা। রাত গভির হলে ভিড় করেন প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের লোকজন। বুঝে নেন তাদের প্রতিদিনের বখরার টাকা। একমাত্র আবুলের মাল ব্যতিত আর তার সিগন্যাল ছাড়া অন্যকারো মাল সিলেট শহরে প্রবেশ করলেই আবুল পুলিশ দিয়ে সেই মাল ধরিয়ে দিচ্ছে। কারণ আবুলের সাথে লিয়াজো ছাড়া কোন চোরাইমাল সিলেট শহরে প্রবেশ করতে পারবেনা এ রকম একটি নিয়ম আবুল চালু করেছে। অপরদিকে প্রশাসনের দূর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তারা আবুলের হয়ে কাজ করছেন বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক চোরাকারবারি নিশ্চিত করেছেন। যদি চোরোচালানেরোধে ব্যর্থ ও সহযোগীতার অপরাধে ২ সপ্তাহ পূর্বে জৈন্তাপুর থানার ওসি ওমর ফারুককে পুলিশ লাইনে বদলী করা হয়েছে।
জনশ্রæতি মতে, গত কয়েকদিন পূর্বে হরিপুর গ্রামে আবুলের চোরাইমালের আস্থানায় অভিযান চালায় জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। তারা সেখানে কয়েক শত বস্তা চিনি পাওয়ার পরও তা আটক না করে আবুলের সাথে লিয়াজো করে চলে যায়। এ ঘটনাটি পুলিশের উর্ধ্বতন মহলে জানা জানি হলে জৈন্তাপুর থানার ওসি ওমর ফারুককে বদলী করা হয় পুলিশ লাইনে। একাধিক চোরাকারবারিদের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো জানান, আমরা আবুলের মাধ্যমে সিলেট শহরে অবৈধ ভারতীয় চিনি, ফেনসিডিল এনে থাকি। মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র আসে আবুলের হাত ধরে। তবে মাঝে মধ্যে চোরাই চিনির গাড়ী প্রশাসন আটক করলে আবুলকে কখনো আটক করেনা রহস্যজনক কারণে। যার কারণে সীমান্তের চোরাচালান বাণিজ্য কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।