প্রতিনিধি ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২:১৩:১০ অনলাইন সংস্করণ
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফল গবেষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন আরও একটিকাঁঠালের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। বারি—৬ জাতের এ কাঁঠালের কলম চারা রোপণের মাত্র দেড় বছরে মিলছে ফল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কাঁঠাল গাছে সারা বছর ধরে ফল পাওয়া যাবে। গত জুন মাসে জাতটি অবমুক্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড। এ জাত আবিষ্কারের পর বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় ফল কাঁঠাল চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে ধারণা কৃষি বিজ্ঞানীদের।
বারি’র উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের বিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আম, লিচু, পেয়ারা, লটকন, মাল্টাসহ জনপ্রিয় অনেক ফলের চারা সহজে কলম পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। ফলন আসে এক—দুই বছরের মধ্যে।
ফলের জাত, স্বাদ, মিষ্টতা এবং ঘ্রাণও থাকে অটুট। এসব কারণে চাষিরা দিন দিন ওইসব ফল চাষে ঝুঁকছেন। সহজ চাষাবাদ ও ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক দশক ধরে ফলের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে আম। উল্টো চিত্র ছিল কাঁঠালের ক্ষেত্রে। জাতীয় ফল হলেও, কাঁঠাল চাষ প্রসারে এত দিন অন্যতম বড় বাধা ছিল ‘উন্নত চারা’। কারণ প্রাচীনকাল থেকে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজ থেকে তৈরি চারা দিয়ে। এ পদ্ধতিতে চারা লাগানোর পর গাছে ফলন আসে ৭—৮ বছর পর।
তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ কখনও ঠিক থাকে না। তাই জাতীয় ফল হলেও, এসব কারণে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না চাষিরা। এ সমস্যা সমাধানে কাঁঠালের কলম ও উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য শুরু হয় গবেষণা।
বারি কাঁঠাল—৬—এর উদ্ভাবক কাঁঠাল গবেষক বারি’র ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত আগাম জাতের কাঁঠালের মাতৃজাত সংগ্রহ করে কলম চারা উৎপাদনে তারা প্রথম সফল হন ২০০৯ সালে। এতে আশার আলো দেখতে পান তারা। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে কৃষি গবেষেণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উচ্চফলনশীল বারোমাসি কাঁঠালের কলম চারা উৎপাদনে শুরু হয় ব্যাপক গবেষণা। সফলতা আসে ২০২১ সালে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা রামগড় থেকে ১৫টি চারা সংগ্রহ করে প্রদর্শনী মাঠে রোপণ করে মাত্র দেড় বছরে ফলন পান ১৩টিতে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবিত বারি—৬ জাতটির গাছ বিস্তৃত ডাল—পালা বিশিষ্ট সতেজ ও সবুজ।
অধিকাংশ গাছ দেড় বছরের মাথায় ফল দানে সক্ষম হলেও দুই বছর পর সব গাছেই ফল আসে। ফলের গড় ওজন ৩ দশমিক ৯৩ কেজি। ফলের ওপরের পৃষ্ঠ দেখতে হলুদাভ সবুজ। পাল্প শক্ত, উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ও আঠাবিহীন। এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২৪.৮%। গড় ফলন হেক্টরে ১০ দশমিক ৬ টন। জাতটি উৎপাদনের ফলে চারা রোপণের অল্প সময়ে ফলন আসায় কাঁঠাল চাষে বিপ্লব বয়ে আনবে।
বারি মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছে। যার সর্বশেষ অর্জন বারি কাঁঠাল—৬। এটির স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ চমৎকার। জাতটি উদ্ভাবনের ফলে দেশে কাঁঠাল চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।