প্রতিনিধি ২৫ মে ২০২৩ , ৩:৫৩:০০ অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভূয়া সাংবাদিকদের অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, বুধবার (২৪ মে) সকাল ১১টায় ”আর নয় বাল্যবিয়ে,এগিয়ে যাব স্বঁপ্ন নিয়ে”এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ ও বিধিমালা ২০১৮ অবহিতকরণ পর্যালোচনা বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কানাডা ইন্টারন্যাশনাল এফ আই ভি ডি”র যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ জে এম রেজাউল আলম সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুহিউদ্দিন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুচিত্রা রায়,এনজিও সংস্থা এফ আই ভিডিবির বিভাগীয় ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম মনজুর,এফ আইভিডিবির বিভাগীয় সমন্বয়কারী জাহেদ আহমদ, চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিষ্ট সুমনা চৌধুরী প্রমুখ।
সিলেট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হিম সাগর আম এর অগ্রিম অর্ডার চলছে।
উক্ত সভায় অংশগ্রহনের জন্য ২০ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ করেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক প্রেমধন সরকার পলাশ কিন্তু প্রশিক্ষণের শুরুতে ও পরে দেখা যায় কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে ও বিনা আমন্ত্রণে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি পরিচয়ে কিছু সংখ্যক ভূয়া সাংবাদিক জোরপূর্বকভাবে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে উপস্থিতির খাতা ও যাতায়াত খরচের লিস্টে জাল স্বাক্ষর করে ৮শত টাকার খাম নিয়ে বীরদর্পে চলে আসে।
হাজিরা সীটের ২নং ক্রমিকে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, ৮নং ক্রমিকে বাসস প্রতিনিধি আল-হেলাল, ৯ নং ক্রমিকে দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান পীর, ১৬ নং ক্রমিকে দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন, ২৫নং ক্রমিকে দৈনিক সুনামগঞ্জের সময় পত্রিকার সম্পাদক সেলিম আহমেদ তালুকদার, ৩৫ নং ক্রমিকে এখন টেলিভিশনের লিপসন আহমদ ঐ সভায় আদৌ অংশগ্রহন করেননি।
অথচ দেখা যায় হাজিরা সীটে ও যাতায়াত খরচের ৮০০ টাকা গ্রহনের নাম তালিকা ও স্বাক্ষরে এ ৬ জনের নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার কোন স্টাফ রিপোর্টার বা প্রতিনিধিকে ঐ সভায় পাটানো হয়নি। অথচ প্রতিদিন পত্রিকার নামেও ভূয়া লোককে উপস্থিত দেখিয়ে হাজিরা স্বাক্ষর ও সম্মানী তালিকা পূরন করা হয়েছে। উক্ত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ জে এম রেজাউল আলমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,বিষয়টি নিয়ে আমরাও রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছি। আমরা আমাদের সামর্থ অনুযায়ী মাত্র ২৫ জন সাংবাদিককে দাওয়াত করেছি। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে হাজির হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে কারা ভূয়া আর কারা সঠিক তা চিহ্নিত করতে গিয়ে আমরাও বেকায়দায় পড়ে গেছি। ৩৮ জনের নাম পরিচয় স্বাক্ষর আমাদের যাতায়াত খরচের খাতায় লিপিবদ্ধ আছে। এর বাইরেও আরো দুএকজন টাকা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন আপনারা আমাদের হাজিরা সীট ও যাতায়াত খরচের লিস্টের ফটোকপি নিন। এগুলো নিয়ে আপনারা নিজ দায়িত্বে ভূয়া লোকদের চিহ্নিত করে ব্যাবস্থা নিন। সভায় যোগদানকারী আব্দুল শহীদ বলেন,আমাকে শহীদুল ইসলাম কল করে দাওয়াত করেছে,আমার নাম পরিচয় ও পদ পদবী তালিকায় আছে। কিন্তু আল-হেলাল বা বাসস এ ধরনের কোন নাম আমি দেখিনি। তবে আমি যতদূর জানি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়কে এ তালিকা প্রণয়নের ব্যাপারে আবু হানিফ সহযোগীতা করেছে। কে কার বদলে গিয়েছে হয়তো এ ব্যাপারে আবু হানিফের কাছে কোন তথ্য থাকতে পারে। মাইটিভির প্রতিনিধি আবু হানিফ বলেন,অনেক ভূয়া সাংবাদিক ঐ সভায় প্রবেশ করেছে এবং একজনের নামের কলামে ভূয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সেজে টাকা নিয়ে অসদুদ্দেশ্যে জালিয়াতি প্রতারনা করেছে। এদেরকে চিহ্নিত করা দরকার। অভিযোগের ব্যাপারে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি মাহতাব উদ্দিন তালুকদার বলেন,আমি এখনও সিলেটে আছি। অথচ আমার স্বাক্ষর দিয়ে কোন সে ভূয়া সাংবাদিক এ প্রোগ্রামে অংশ নিলো তা সনাক্ত করা দরকার। যুগান্তর প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন,আমি নিজেও ঐ সভায় যাইনি। অথচ আমার স্বাক্ষরের কলাম পূরন করে যাতায়াত খরচ নেয়া হয়ে গেছে। এগুলো যারা ঐ সভার আয়োজন করেছে তারা নাকি অন্য কেউ করেছে তা খুজে বের করা দরকার। দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন বলেন,এখন টেলিভিশনের প্রতিনিধি লিপসন আহমদসহ আমি বর্ডারহাটে উপস্থিত ছিলাম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা সেখানেই ছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষের কথিত সভায় জানতে পারি আমাদের নাম স্বাক্ষর দিয়ে কে বা কারা প্রতিনিধিত্ব করেছে। অথচ ঐ সভায় আমরা কাউকে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করার লিখিত বা মৌখিক অনুমতি দেইনি। একই সময়ে একজন সাংবাদিক দুটি আলাদা জায়গায় কিভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এই উদ্দেশ্যমূলক জালিয়াতি প্রতারনা কিভাবে কারা করলো এরজন্য দায়ী কে তা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত উপ-পরিচালককে খুজে বের করতে হবে।
রাষ্ট্র পরিচালিত জাতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর জেলা প্রতিনিধি আল-হেলাল বলেন,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূয়া সাংবাদিক সংগঠনের নেতা,ভূয়া সাংবাদিক ও ফরমায়েসীদের অপতৎপরতায় আমরা মূলধারার সাংবাদিকরা এখন বেকায়দায়। তিনি বলেন,আমাদের নাম স্বাক্ষর জাল করে যেসব ভূয়া ব্যক্তি ঐ কাজটি করেছে তা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। অন্যথায় দায়িত্বশীলদের এহেন গাফিলতি ও জালিয়াতি প্রতারনার জন্য তাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় দাড় করাবো।
দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আনিসুজ্জামান চৌধুরী ইমন, উপ-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পীর ও বার্তা সম্পাদক আল-হেলাল বলেন, দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার কোন সম্পাদক বা স্টাফ রিপোর্টারকে আমরা ঐ সভায় পাঠাইনি। কথিত সভার কোন চিটি বা দাওয়াতপত্র আমরা পাইনি। অথচ আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে কে বা কারা টাকা নিয়েছে এবং জালিয়াতি প্রতারনা করেছে তা কর্তৃপক্ষকে ব্যাবস্থা গ্রহন করে আমাদেরকে জানাতে হবে। অন্যথায় আমরা কাউকে কোন ছাড় দেবনা।
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শ্যামল বলেন,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরা দেখে ভূয়া সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।