প্রতিনিধি ৭ মার্চ ২০২৩ , ৩:৩৪:৫৪ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাও-চারাগাঁও সীমান্তে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে রাতের বেলা চলছে চোরাই কয়লা পাচারের মহোৎসব।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়,চারাগাও গ্রামের ঢালিম মিয়া,মঙ্গল মিয়া,রাজ্জাক মিয়া ও বাবুল মিয়ার বাড়ীতে অন্তত ৮০ টন কয়লা মজুদ রয়েছে। একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বিষয়টি তাহিরপুর থানা পুলিশ ও বিজিবি কে জানানোর পরও এখন পর্যন্ত চোরাই কয়লগুলো জব্দ করা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের একজন নায়েক এর সাথে চোরাচালানীর মূল হোতা রফ মিয়ার গোপন আতাত এর মাধ্যমেই কয়লা পাচার হচ্ছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও (বাজারহাটি) গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র চোরাচালানীর মূল হোতা রফ মিয়া।
শুধু তাহিরপুর উপজেলাই নয় সুনামগঞ্জ শহরে দু একজন সাংবাদিক নেতাকেও মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখে ঐ কয়লাচোর। পত্রিকা বা অনলাইন মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেই সে গডফাদার দিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া শুরু করে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট, জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী রফ মিয়ার নেতৃত্বে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর হয়।
পাচাঁর করা এসব অবৈধ কয়লা ও পাথর থেকে থানা পুলিশ,ডিবি পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাগিয়ে লাখ লাখ চাঁদা উত্তোলন করে রফ মিয়া। ৬ জুন সোমবার দিবাগত রাতে চোরাই কয়লা পাচারের কথা বলে টনপ্রতি দুই হাজার তিনশত (২৩০০) টাকা পুলিশ বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে নগদ গ্রহন করে রফ মিয়া। রফ মিয়া কর্তৃক টাকা গ্রহনের মাধ্যমে অবাধে কয়লা পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত (২৪ জানুয়ারী) মঙ্গলবার দিনব্যাপী পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৭ মেঃটন চোরাই অবৈধ কয়লাসহ অরুন দাস ও সালাম মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এব্যাপারে চারাগাঁও শুল্কষ্টেশনের কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী জানান,আজাদ মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক সবার সাথে আলোচনা করে তাদের সোর্স রফ মিয়াকে দিয়ে অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করার পর চাঁদা উত্তোলন করে। তারা বললে কয়লা ও পাথর পাচাঁর হয় আর না বললে হয় না। তাদের এই চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্য চলছে দীর্ঘদিন যাবত।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে কল করলে রফ মিয়া ৬ মার্চ সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় জানায়,চারাগাঁও কলাগাঁও এলাকায় ঘরে ঘরে কয়লা মজুদ আছে। এগুলো হচ্ছে বাংলা কয়লা। টাকা গ্রহনের অভিযোগও অস্বীকার করে রফ মিয়া। তবে রাত সাড়ে ১২টায় সে কলাগাঁও বাজারে আছে বলে স্বীকার করে। এলাকাবাসী বলেন,রাত সাড়ে ১২টায় কলাগাঁও বাজারে থাকার কথা স্বীকার করার ঘটনাই প্রমাণ করে রফ মিয়া নগদ টাকা গ্রহন করে চোরাই কয়লা পাচারে লিপ্ত রয়েছে। তাছাড়া এখন এলাকায় বর্ষা বা পাহাড়ী ঢলের মৌসুম নেই। তাই বাংলা কয়লা উত্তোলন করার প্রশ্নই আসেনা। মজুতকৃত সকল কয়লাই চোরাই কয়লা। তাহিরপুর থানার ওসি ইফতেখার হোসেন বলেন, আমরা ইতিপূর্বে ১৫ মেঃটন কয়লাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছি। ১২টন কয়লা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয়রা বলেন,চোরাচালানীর মূলহোতা আজাদ মিয়া,রাজ্জাক ও রফ মিয়াকে গ্রেফতার করাতো দূরের কথা মামলার আসামী পর্যন্ত করা হয়নি। উল্টো এ চক্রের কথায় সাধারন লোকজনকে কয়লা চুরির মামলায় অন্যায়ভাবে হয়রানী করা হয়। জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে: কর্ণেল মাহবুবুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার মোঃ এহসান শাহ বলেন,চারাগাও গ্রামের মজুদকৃত চোরাই কয়লার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা যায় আমরা তা দেখছি।