প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২২ , ৫:৫৪:০৩ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অবশেষে সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা এফআইআর করলো তাহিরপুর থানা পুলিশ।
সুনামগঞ্জের বিজ্ঞ আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের নির্দেশে,গত ১৩/১০/২০২২ইং তারিখে শাহীনের দায়েরকৃত ২২৬নং পিটিশন মামলাটিকে তাহিরপুর থানার নিয়মিত মামলা নং ৯ তাং ১৯/১০/২০২২ইং হিসেবে এফআইআর করা হয়। এদিকে থানায় মামলা এফআইআরের খবর পেয়ে সন্ত্রাসী আফতাব উদ্দিন (৪০),জিন্নাহ (৩৫),মানিক (৩২),রিপন (৩৫) ও শিপন (৩২) সহ সকল সন্ধিগ্ধ আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে শাহীন ও তার ভাইকে খুন করার নেশায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। মামলার বাদী সাংবাদিক শাহীন দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামের মরহুম জয়নাল আবেদীনের পুত্র আফতাব উদ্দিন তার নিজ বাড়ী থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাটানপাড়া ভৈরবীঘাটটি অবৈধ দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু শাহীন ও তার পরিবার দখলবাজীর বিরোধিতা করায়,শাহীনের বড় ভাই হুমায়ুন কবীরের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আফতাব উদ্দিন। এই ঘটনার ব্যাপারে শাহীন তাহিরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করার আক্রোশে, গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার সময় শাহীনের বাড়ীর সামনের ভৈরবী ঘাট দখল করতে গিয়ে আফতাব উদ্দিন ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা শাহীনের উপর হামলা করে তাকে খুন করার চেষ্টা করে।
আফতাব উদ্দিন শাহীনের শার্টের কলার চেপে ধরে তাকে বুকে কয়েকটি কিলঘুষি মেরে রক্তাক্ত ফোলা জখম করে। ঘটনার সংবাদ জেনে এসআই জাহাঙ্গীর হোসাইন ও এএসআই আরিফের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আফতাব উদ্দিনসহ তার বাহিনীর সকল সন্ত্রাসীদেরকে ঘটনাস্থলে পেলেও তাদেরকে আটক করেননি। অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের জখমের দরুন শাহীন জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন।
উক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শাহীনের চাচী ফেরদৌস বেগম তাদের বসতঘর,জমি ও বাজারের দোকানপাট দখলের প্রতিবাদে,গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমলগ্রহনকারী জুডিসিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৮৫/৩৭৯/৫০৬/৪৪৮ ধারায় ১৯৮/২০২২ নং পিটিশন মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে তাহিরপুর থানার এসআই সাইদুর রহমান ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে সরজমিনে তদন্ত করেন। উক্ত মামলা দায়েরের আক্রোশে আফতাব উদ্দিনের নির্দেশে গত ২৮/০৯/২০২২ইং বুধবার রাত সাড়ে ১০ টায় আফতাব উদ্দিনের নির্দেশে তার ভাতিজা মানিক মোবাইল ফোনে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করত: শাহীনকে প্রাণনাশের হুমকী দেয়। আফতাব বাহিনীর হুমকীর কথা সুনামগঞ্জের সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়।
শাহীন নিজেও তাহিরপুর থানা ওসিকে মোবাইল ফোনে হুমকীর কথা অবগত করেন। তারপরও পুলিশ হুমকীদাতা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এ সুযোগে ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পাটানপাড়া গ্রামস্থিত বসতবাড়ীর উত্তর পার্শ্বে গডফাদার আফতাব উদ্দিনের হুকুমে শিপন ও রিপন শাহীনকে প্রাণে হত্যার লক্ষ্যে তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারপিটক্রমে এবং বেদম কিল ঘুষি মেরে শাহীনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম করে। শিপন ও রিপন শাহীনের নগদ টাকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ জরুরি কাগজপত্র ছিনতাই করে নেয়। ঘটনার পর পরই এসআই মো.জাহাঙ্গীর হোসাইন এর নেতৃত্বে বাদাঘাট ক্যাম্পের পুলিশ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলে শিপন ও রিপনকে পাওয়ার পরও আটক করেননি। সন্ত্রাসীদের জখমের দরুন শাহীন তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন।
সন্ত্রাসীরা হামলা ও লুটতরাজের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের ২টি হাটবার অর্থাৎ রবিবার ও বৃহস্পতিবার শাহীনের পরিবারের মালিকানাধীন পাটানপাড়া বাজারের ভৈরবীঘাটে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনের জন্য আগত বিভিন্ন ভ্যান গাড়ী,পিকআপ ও অটো রিক্সার চালকদের কাছ থেকে প্রশাসনের বিধিনিষেধ অমান্য করে বিনা রসিদে প্রতি হাটবারে ৮ হাজার টাকা হিসেবে গত ২০টি হাটবারে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে।
পৃথক পৃথক দিনগুলিতে প্রকাশ্য দিবালোকে জোরপূর্বক চাঁদা উত্তোলন করলেও প্রাণের ভয়ে আফতাব বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দাখিল বা সাক্ষী দিতে সাহস পায়না। অথচ মোবাইল নাম্বারের কললিষ্ট এবং অবস্থানের কল ট্রেকিং বা তল্লাসী করলে তাদের নিয়মিত চাঁদাবাজীসহ অপরাধ সংগঠনের উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে শাহীন চ্যালেঞ্জ করেছেন।
জানা যায় সন্ত্রাসী শিপনকে ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাহিরপুর থানায় মামলা নং ৪ (জিআর ১৫৫/২০১৮) তাং ৪/৯/২০১৮ইং দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে আসামী শিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নং ১৬৬ তাং ৪/১০/২০১৮ইং দাখিল করেন। এচক্রের বিরুদ্ধে শাহীনের বড় ভাই হুমায়ুন কবীর কর্তৃক বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় দায়েরকৃত ১১৮/২০২০নং সিআর মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এছাড়া গত ১৪ আগস্ট ২০২২ইং রোববার বিকেল ৫টায় তাহিরপুর সার্কেলের মাননীয় সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সাহিদুর রহমান,থানার এসআই গোলাম হাক্কানী ও বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর হোসাইন এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ পাটানপাড়া বাজারস্থ ভৈরবী ঘাটে চাঁদা উত্তোলনকালে আফতাব বাহিনীর চাঁদাবাজ রিপনকে আটক করেন। আটককৃত রিপনকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বাধীন মোবাইল কোর্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির,ভ্রাম্যমান আদালতের আওতায় পুলিশের হাতে আটককৃত রিপনকে ৩ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী আফতাব উদ্দিন রোহিঙ্গা নাগরিকদেরকে সুনামগঞ্জ জেলার ভূয়া নাগরিক সাজিয়ে নাগরিকত্ব সনদ প্রদানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জসীটভূক্ত আসামী ছাড়াও একজন সার্বক্ষনিক ইয়াবাসেবী এবং আরো একাধিক দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী বলে জানান এলাকাবাসী। এদিকে মামলা এফআইআরের খবর জেনে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদী শাহীন ও তার বড় ভাই হুমায়ূন এবং তার চাচী ফেরদৌস বেগমকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রাননাশের হুমকী দিচ্ছে সন্ত্রাসী আফতাব। মামলা প্রত্যাহার না করলে আফতাব বাহিনীর দ্বারা একাধিক কাউন্টার মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করবে বলেও হুমকী দিচ্ছে আফতাব। স্থানীয় নিরীহ লোকজন বলেন,পুলিশ যত তাড়াতাড়ি আফতাব উদ্দিন ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদেরকে গ্রেফতার করবে তত দ্রæত ঐ এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। অন্যথায় যেকোন সময় আফতাব বাহিনীর দ্বারা আরো নাশকতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাহিরপুর থানা পুলিশ শেষ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে সেদিকে দৃষ্টি এখন এলাকাবাসীর।