প্রতিনিধি ১৫ আগস্ট ২০২২ , ২:০৫:৫১ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের পাটানপাড়া বাজারে চাঁদা আদায়কালে রিপন (৩২) নামের এক চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী কে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী রিপন স্থানীয় পাটানপাড়া নিবাসী মরহুম সিরাজ সর্দারের পুত্র। রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৫টার সময় তাহিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সাহিদুর রহমান, থানার এসআই গোলাম হাক্কানী ও বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর হোসাইন এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে আটক করেন। আটককৃত রিপন ও তার গডফাদার আফতাব উদ্দিন এবং আফতাব বাহিনীর ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুলাই জেলা প্রশাসক, ২৫ জুলাই জেলা পুলিশ সুপার,২৮ জুলাই সহকারী পুলিশ সুপার, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন,চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন (৫৩)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,গত ২৬ জুন রবিবার রাত ৮টায় সোহালা নিবাসী মরহুম জয়নাল আবেদীনের পুত্র সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন (৩৫) তার বাড়ীতে শাহীনের বড় ভাই হুমায়ূন কবীরকে ঢেকে নেয়। সেখানে গডফাদার আফতাব উদ্দিনের সহযোগীতায় হুমায়ূন কবীরের সৎ ভাই শিপন সর্দার ওরফে ইয়াবা শিপন (৩০),সুমন সর্দার (২৮) ও রিপন সর্দার (৩২) এই ৩ সহোদর এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় কোনাটছড়া গ্রামের মোক্তার হোসেন এর পুত্র সন্ত্রাসী জিন্নাহ (৩৫),ঘাগরা গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র মানিক (২৭),হুমায়ূন কবীরকে প্রাণণাশের হুমকি দেয়।
শুধু তাই নয় উক্ত সন্ত্রাসীরা আফতাব উদ্দিনের সহায়তায় বিভিন্ন সময় ভাড়াটে মাস্তানদের নিয়ে চাঁদাবাজী ও দখলবাজীর উদ্দেশ্যে হুমায়ূন কবীরের পাটানপাড়া বাজারস্থ ভৈরবী বাজার ঘাটের অফিস ঘরে এসে জোরপূর্বকভাবে অবস্থান নিয়ে তাকে প্রাণে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাদের একমাত্র বাজার ঘাটটি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালায়।
চাহিতো ঘাট লিখে না দেয়ায় আফতাব উদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী,হুমায়ূন কবীরের পাশাপাশি,তার ছোট ভাই সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনকেও খুন করবে বলে ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় হোসাইন মাহমুদ শাহীন বাদী হয়ে গত ২৯ জুন তাহিরপুর
থানায় আফতাব উদ্দিনসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করত: অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর কবিরকে দায়িত্ব দেন। পুলিশের হাতে একজন সংবাদকর্মীর দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় ১লা জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পাটানপাড়া গ্রামের বাড়ীর চতুর্দিক ঘেরাও করত: আফতাব উদ্দিন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা হুমায়ূন কবীরকে আবারও প্রাণনাশের হুমকি দিলে আতংকিত হুমায়ূন তাৎক্ষনিকভাবে স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রথমে তাকে বাদাঘাট বাজারস্থ ডাঃ হাফিজ উদ্দিনের চেম্বারে নেয়া হয়। পরে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে সিলেটে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। পরিবারের লোকজন জানান,মরহুম সিরাজ মিয়া সরদার জীবদ্ধশায় তার ২য় স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ২ কন্যাকে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও-আটগাঁও গ্রামে একটি টিনশেড বিল্ডিং বাড়ীতে রেখে যান। সিরাজ সর্দারের প্রবাসী ভাই নজরুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করত: শিপন ও রিপনগংদেরকে সিলেটে আলাদা করে রাখেন। অন্যদিকে হুমায়ূন কবীর ও তার ছোট ভাই সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনকে গ্রামের বাড়ীতে রেখে তাদের পিতা দেহত্যাগ করেন।
বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে বাড়ীতে এসে চাচা নিজাম উদ্দিন সর্দারের বসতঘরে উঠে রিপন,শিপন ও তার ভাই বোনেরা। একপর্যায়ে পাটানপাড়া ঘাটে যাদুকাটা নদীতে বালি ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মী করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়,পাটানপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদেরকে চাঁদা দেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকী ও উঠতি বয়সের যুবকদেরকে ইয়াবা ক্রয়ে বাধ্য করা,জোরপূর্বক জমি ও বাড়ী দখলসহ এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে রিপন ও শিপনগং।
এ অবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ২৫ পীচ ইয়াবাসহ শিপনকে আটক করেন। জেলা গোয়েন্দা শাখার এএসআই অনন্তপাল বাদী হয়ে ১৯৯০ ইং সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ৯ (ক) ধারায় উক্ত শিপনকে একমাত্র আসামী করে তাহিরপুর থানায় মামলা নং ৪ (জিআর ১৫৫/২০১৮) তাং ৪/৯/২০১৮ইং দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে শিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নং ১৬৬ তাং ৪/১০/২০১৮ইং দাখিল করেন। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার পরও শিপনের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী বন্ধ হয়নি। জামিনে মুক্ত হয়ে পাটানপাড়াগ্রামে শুরু করে ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারনার ব্যবসা।
প্রথমেই মা ও ভাই বোনদের নিয়ে একেবারে সিলেটে চলে যাবে আর পাটানপাড়া গ্রামে থাকবেনা মর্মে৩ শত টাকার নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে স্বাক্ষর করে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে জেষ্টভ্রাতা হুমায়ূন কবীর সর্দারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক রিপন,শিপন ও তাদের অন্য ভাইয়েরা। দীর্ঘ ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রতারিত হুমায়ূন কবীর সর্দারের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি প্রতারকচক্রটি।
ফলে প্রতারিত হুমায়ূন কবীর বাধ্য হয়ে প্রতারক শিপন ও রিপনগংদের বিরুদ্ধে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাহিরপুর জোনে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় ১১৮/২০২০নং সিআর মামলা দায়ের করেন। ঐ
মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সর্বশেষ সন্ত্রাসী রিপন ও শিপন তাদের চাঁদাবাজী ও ভূমি জালিয়াতির ঘটনায়,রোহিঙ্গা নাগরিকদেরকে সুনামগঞ্জ জেলার ভূয়া নাগরিক সাজিয়ে নাগরিকত্ব সনদ প্রদান সংক্রান্ত মামলার চার্জসীটভূক্ত আসামী আফতাব উদ্দিনের সহযোগীতায় পাটানপাড়া বাজারস্থ ভৈরবী বাজার ঘাটটি দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। গডফাদার আফতাব উদ্দিনের সহযোগীতায় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভয় প্রদর্শন করত: হুমায়ূন কবীরকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়।
ঘটনার ব্যাপারে সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন বলেন, আমাদের জানমাল ও সহায় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে লিপ্ত সন্ত্রাসীরা, আমার বড় ভাই হুমায়ূন কবীরকে সোহালা গ্রামে ঢেকে নিয়ে বাদাঘাট বণিক সমিতি ও আমাদের পরিচালিত পাটানপাড়া ভৈরবী ঘাটখানা প্রভাবশালী গডফাদার আফতাব উদ্দিনের নামে লিখে দেওয়ার জন্য ৩ শত টাকার নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে স্বাক্ষর দেয়ার নির্দেশ দেয়। স্বেচ্ছায় ঘাটের দখল সমজিয়ে না দিলে তাদেরকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দেয় গডফাদার আফতাব উদ্দিন।
আমার ভাই চাহিতো মোটা অংকের টাকা চাঁদা পরিশোধ না করায় এবং আমাদের ঘাটটি লিখে না দেয়ায় আফতাব উদ্দিন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা আমার বড় ভাইকে হুমকি প্রদর্শন অব্যাহত রাখলে তিনি প্রাণভয়ে ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও বাপচাচাদের নামীয় সম্পত্তি যেখানে আদৌ ভাগ ভাটোয়ারা হয়নি সেখানে প্রতারক শিপন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রতারনামূলকভাবে এজমালী জায়গা বিক্রয় করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। হুমায়ূন কবীর সর্দারের চাচা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন,আমার ভাতিজাকে সন্ত্রাসীরা ফিল্মী ষ্টাইলে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছিলো।
সে অব্যাহত হুমকির কারণে এতটাই ভীত ছিল যে,ঘটনাটি কাউকে শেয়ার না করে নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিলো। একপর্যায়ে হুমকির কারণে প্রচন্ড মানসিক চাপে পড়ে সে সংজ্ঞাহীন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন আছে।
সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন বলেন,সন্ত্রাসী আফতাব উদ্দিন ইতিপূর্বে আমার বড় ভাইকে তার বাড়ীতে ঢেকে নিয়ে এবং আমাদের বাড়ীতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বড় ভাইকে দুদফায় প্রাণনাশের হুমকী দেয়।
আমি অভিযোগ দায়ের করায়,২১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার সময় আমাদের বাড়ীর সামনের ঘাট দখল করতে এসে আমার উপর হামলা করে আমাকে খুন করার চেষ্টা করে। পরে ঘটনার সংবাদ জেনে এসআই জাহাঙ্গীর কবির ও এএসআই আরিফের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন এবং আফতাব উদ্দিন ও তার বাহিনীর লোকজনকে ঘটনাস্থলে দেখতে পান। জানতে চাইলে তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ সোহেল রানা ও বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,শিপন গংরা সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। এরা পাটানপাড়া গ্রামে এসে আফতাব উদ্দিনের সহযোগীতায় চাঁদাবাজী সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে আফতাব উদ্দিন,রিপন ও শিপন গংদেরকে কোন ধরনের দখলবাজী চাঁদাবাজী সন্ত্রাস না করার জন্য সুস্পষ্টভাবে নিষেধ দিয়ে এসেছি। তারপরও পুলিশের বিধিনিষেধ অমান্য করে রোববার পাটানপাড়া ভৈরবীঘাটে চাঁদা আদায়কালে একজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বাধীন মোবাইল কোর্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির বলেন,ভ্রাম্যমান আদালতের আওতায় পুলিশের হাতে আটককৃত রিপনকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে চাঁদাবাজীসহ অন্যান্য অপরাধে যুক্ত হলে তাকে আবারও দন্ডের আওতায়
আনা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন। এদিকে আফতাব উদ্দিন বাহিনীর হামলা ও বাড়ী জমি দখলবাজীর ঘটনায় আতংকিত সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন ও তার বড় ভাই চিকিৎসাধীন হুমায়ূন কবিরের পরিবারের লোকজন অবিলম্বে গডফাদার সন্ত্রাসী আফতাব উদ্দিন,ইয়াবা শিপন,জিন্নাহ ও মানিক কে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর
হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।