প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২২ , ১২:৪৭:৩৮ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিতে যে ৩ জন আহত হয়েছেন তাদের সকলেই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মারামারি করতে এসে যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের আহত হওয়ার ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় শহরের উকিলপাড়া বালুর মাঠ এলাকায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজের ওপর হামলা চালায় একপক্ষ। এ সময় রাজের হাতে থাকা চুরির এলোপাতাড়ি আঘাতে আহত হন শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকার মকসদ আলীর ছেলে মোশাহিদ রহমান কুটি, সোমপাড়া এলাকার নূরুল আহমদের ছেলে শামীম আহমদ ও মল্লিকপুর এলাকার সাদ্দাম মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম আলী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার রাতে কুটি, শামীম ও ইব্রাহিম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনের পক্ষ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। রফিক-রিপনের বিরোধ ছিল ওপর ছাত্রলীগ নেতা রাজের সঙ্গে, যার ছুরিকাঘাতে ওই তিনজন আহত হন। রাজ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনের সমর্থক। আর রফিক-রিপন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন গ্রুপের রাজনীতিতে সক্রিয়। এদিকে, এই ঘটনায় আহত মোশাহিদ রহমান কুটি বাদি হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা রাজকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোশাহিদ রহমান কুটি শহরের আরপিননগরের বাসিন্দা। বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা যায় তাকে। তার ব্যক্তিগত অফিসেও জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি সাঁটানো রয়েছে। পৌর শহরের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ওই রাতে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ বিরোধে যুক্ত করা হয় কুটিকে। কুটির সাথে ঘটনাস্থলে যান যুবদল নেতা শামীম ও ইব্রাহিম। এদের মধ্যে শামীম যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আর জামাত নেতা সাদ্দাম মিয়ার ছেলে ইব্রাহিমও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। এদিকে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে যুক্ত ওই তিন ছাত্রদল ও যুবদল নেতার দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিতি ও দলীয় অফিসে বসে সেলফি তোলার একাধিক ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। প্রত্যক্ষদশীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে শহরের উকিলপাড়া এলাকার উত্তরা কফি হাউসে পূর্ববিরোধ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় বিষয়টি মিটমাট করতে এসে ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে উকিলপাড়াস্থ পলিনের অফিসের সিঁড়িতে আশ্রয় নেন রাজ। এ সময় ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রফিক-রিপনসহ ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ সেখান থেকে রাজকে ধরে নিয়ে আসতে চাইলে হাতে থাকা চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি ঘাই মেরে তিনজনকে আহত করে রাজ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রাজকে আটক করা হয়। অন্যদিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের রেফার্ড করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার সময় ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের সহায়তায় রফিক-রিপন কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতা রাজকে ধরে নিয়ে আসতে গেলে একাই চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি ঘাই মেরে তিনজনকে জখম করে রাজ। এরপর পলিনের বড়ভাই সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত নিজেই রাজকে পুলিশে সোপর্দ করেন। অথচ এই ঘটনার জেরে পর দিন যে মামলা দায়ের করা হয় সেখানে অদৃশ্য ইঙ্গিতে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন বখতকে হুকুমের আসামি করা হয়। সেইসাথে বিশাল দে, তানজিলুর রহমান ও নোমান বখত পলিনের ভাতিজা ইফতি বখত নামের অপর যে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের কেউই মারামারিতে যুক্ত ছিলেন না বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় পাঁচ জনকে আসামি করে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত রাজকে জেল হাজাতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ স্বীকার করেছে যে, তার চাকুর আঘাতে ওই তিনজন আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত আছে। আমরা সময়মতো আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।
আহমদুজ্জামান চৌধুরী
সুনামগঞ্জ।
তাং : ১৭-৭-২২ইং