প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২২ , ৩:১৬:০১ অনলাইন সংস্করণ
হুমায়ূন আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের পাটানপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষীয় সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকিতে তাৎক্ষনিকভাবে অসুস্থ হয়ে সিলেটের এমএ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হুমায়ূন কবীর সর্দার।
তিনি পাটানপাড়া নিবাসী মরহুম সিরাজ সর্দারের জেষ্ট পুত্র। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,গত ২৬ জুন রবিবার রাত ৮টায় সোহালা গ্রামস্থিত সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিনের বাড়ীতে হুমায়ূন কবীরকে ঢেকে নেয়া হয়। সেখানে এক গডফাদারের সহযোগীতায় হুমায়ূন কবীরের সৎ ভাই শিপন সর্দার ওরফে ইয়াবা শিপন (৩০),সুমন সর্দার (২৮) ও রিপন সর্দার (৩২) এই ৩ সহোদর এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় কোনাটছড়া গ্রামের মোক্তার হোসেন এর পুত্র সন্ত্রাসী জিন্নাহ (৩৫) তাকে প্রাণণাশের হুমকি দেয়। শুধু তাই নয় উক্ত সন্ত্রাসীরা একে অপরের সহায়তায় বিভিন্ন সময় ভাড়াটে মাস্তানদের নিয়ে চাঁদাবাজী ও দখলবাজীর উদ্দেশ্যে হুমায়ূন কবীরের পাটানপাড়া বাজারস্থ ভৈরবী বাজার ঘাটের অফিস ঘরে এসে জোরপূর্বকভাবে অবস্থান নিয়ে তাকে প্রাণে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাদের একমাত্র বাজার ঘাটটি অবৈধভাবে দখলের অপচেষ্টা চালায়। চাহিতো ঘাট লিখে না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা হুমায়ূন কবীরের পাশাপাশি,তার ছোট ভাই সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনকেও খুন করবে বলে ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব সদস্য হোসাইন মাহমুদ শাহীন বাদী হয়ে গত ২৯ জুন তাহিরপুর থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর কবিরকে দায়িত্ব দেন। পুলিশের হাতে একজন সংবাদকর্মীর দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় ১লা জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বাড়ীর চতুর্দিক ঘেরাও করত: সন্ত্রাসীরা হুমায়ূন কবীরকে আবারও প্রাণনাশের হুমকি দিলে আতংকিত হুমায়ূন তাৎক্ষনিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে বাদাঘাট বাজারস্থ ডাঃ হাফিজ উদ্দিনের চেম্বারে নেয়া হয়। পরে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে সিলেটস্থ এম.এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরিবারের লোকজন জানান,মরহুম সিরাজ মিয়া সরদার জীবদ্ধশায় তার ২য় স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ২ কন্যাকে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও-আটগাঁও গ্রামে একটি টিনশেড বিল্ডিং বাড়ীতে রেখে যান। সিরাজ সর্দারের প্রবাসী ভাই নজরুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করত: শিপন গংদেরকে সিলেটে আলাদা করে রাখেন। অন্যদিকে হুমায়ূন কবীর ও তার ছোট ভাই সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীনকে গ্রামের বাড়ীতে রেখে তাদের পিতা দেহত্যাগ করেন। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে বাড়ীতে এসে চাচা নিজাম উদ্দিন সর্দারের বসতঘরে উঠে শিপন ও তার ভাই বোনেরা। একপর্যায়ে পাটানপাড়া ঘাটে যাদুকাটা নদীতে বালি ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মী করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়,পাটানপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদেরকে চাঁদা দেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকী ও উঠতি বয়সের যুবকদেরকে ইয়াবা ক্রয়ে বাধ্য করা,জোরপূর্বক জমি ও বাড়ী দখলসহ এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে শিপন। এ অবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ২৫ পীচ ইয়াবাসহ শিপনকে আটক করেন। জেলা গোয়েন্দা শাখার এএসআই অনন্তপাল বাদী হয়ে ১৯৯০ ইং সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ৯ (ক) ধারায় উক্ত শিপনকে একমাত্র আসামী করে তাহিরপুর থানায় মামলা নং ৪ (জিআর ১৫৫/২০১৮) তাং ৪/৯/২০১৮ইং দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে শিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নং ১৬৬ তাং ৪/১০/২০১৮ইং দাখিল করেন। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার পরও শিপনের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী বন্ধ হয়নি। জামিনে মুক্ত হয়ে পাটানপাড়া গ্রামে শুরু করে ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারনার ব্যবসা। প্রথমেই মা ও ভাই বোনদের নিয়ে একেবারে সিলেটে চলে যাবে আর পাটানপাড়া গ্রামে থাকবেনা মর্মে ৩ শত টাকার নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে স্বাক্ষর করে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে জেষ্টভ্রাতা হুমায়ূন কবীর সর্দারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক শিপন ও তার ভাইয়েরা। দীর্ঘ ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রতারিত হুমায়ূন কবীর সর্দারের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি প্রতারকচক্রটি। ফলে প্রতারিত হুমায়ূন কবীর বাধ্য হয়ে প্রতারক শিপন ও রিপনগংদের বিরুদ্ধে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাহিরপুর জোনে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় ১১৮/২০২০নং সিআর মামলা দায়ের করেন। ঐ মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ সন্ত্রাসী শিপন তার চাঁদাবাজী ও ভূমি জালিয়াতির ঘটনায়,রোহিঙ্গা নাগরিকদেরকে সুনামগঞ্জ জেলার ভূয়া নাগরিক সাজিয়ে নাগরিকত্ব সনদ প্রদান সংক্রান্ত মামলার চার্জসীটভূক্ত এক আসামীর সহযোগীতায় পাটানপাড়া বাজারস্থ ভৈরবী বাজার ঘাটটি দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভয় প্রদর্শন করত: হুমায়ূন কবীরকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। ঘটনার ব্যাপারে সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন বলেন, আমাদের জানমাল ও সহায় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে লিপ্ত সন্ত্রাসীরা,আমার বড় ভাই হুমায়ূন কবীরকে সোহালা গ্রামে ঢেকে নিয়ে বাদাঘাট বণিক সমিতি ও আমাদের পরিচালিত পাটানপাড়া ভৈরবী ঘাটখানা একজন প্রভাবশালী গডফাদারের নামে লিখে দেওয়ার জন্য ৩ শত টাকার নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে স্বাক্ষর দেয়ার নির্দেশ দেয়। স্বেচ্ছায় ঘাটের দখল সমজিয়ে না দিলে তাদেরকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দেয়। আমার ভাই চাহিতো মোটা অংকের টাকা চাঁদা পরিশোধ না করায় এবং আমাদের ঘাটটি লিখে না দেয়ায় ঐ সন্ত্রাসীরা আমার বড় ভাইকে হুমকি প্রদর্শন অব্যাহত রাখলে তিনি প্রাণভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও বাপচাচাদের নামীয় সম্পত্তি যেখানে আদৌ ভাগ ভাটোয়ারা হয়নি সেখানে প্রতারক শিপন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রতারনামূলকভাবে এজমালী জায়গা বিক্রয় করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। হুমায়ূন কবীর সর্দারের চাচা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন,আমার ভাতিজাকে সন্ত্রাসীরা ফিল্মী ষ্টাইলে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছিলো। সে অব্যাহত হুমকির কারণে এতটাই ভীত ছিল যে,ঘটনাটি কাউকে শেয়ার না করে নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিলো।
একপর্যায়ে হুমকির কারণে প্রচন্ড মানসিক চাপে পড়ে সে সংজ্ঞাহীন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন আছে। জানতে চাইলে বাদাঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,শিপন গংরা সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। এরা পাটানপাড়া গ্রামে এসে একটি বিশেষ মহলের সহযোগীতায় চাঁদাবাজী সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমি তদন্তপূর্বক সন্ত্রাসী যেই হউক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো। এদিকে চিকিৎসাধীন হুমায়ূন কবিরের পরিবারের লোকজন অবিলম্বে সন্ত্রাসী শিপন ও জিন্নাহ কে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।