প্রতিনিধি ২১ মে ২০২২ , ৯:৫৬:৩৯ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ: ইভটিজিং এর প্রতিবাদের জের ধরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যানের ভাই ভাতিজার হাতে কলেজ ছাত্রীর পিতা ও ভাইসহ ১৫ জন কে আহত করার ঘটনাটি সামাজিক সালিশে নিস্পত্তি হয়েছে। ২০ মে শুক্রবার বিকেল ৩টায় উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দুলভারচর পরগনাবাজারে প্রায় সহ¯্রাধিক লোকজনের উপস্থিতিতে উক্ত সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সফর উদ্দিন। সালিশের শুরুতেই ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমদ, তার ভাই ভাতিজাসহ ঘটনার জন্য থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের সকল আসামী এবং সংগ্রামপুর গ্রামবাসীদের পক্ষে উপস্থিত সালিশী ও এলাকাবাসীর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বাদীপক্ষে জখমী আজিজুর রহমান চৌধুরী ইভটিজার কর্তৃক ইভটিজিং এর ঘটনা এবং ইভটিজারের পক্ষ নিয়ে মোবাইল ফোনে হুমকী দিয়ে সংগ্রামপুর গ্রামের প্রতিপক্ষগণ কর্তৃক শ্যামারকান্দি গ্রামবাসী ও দুলভারচর পরগনা বাজারের নিরপেক্ষ নিরীহ লোকজনের উপর বেপরোয়া হামলা ও লুটতরাজের কথা তুলে ধরেন। ঘটনার সঠিক চিত্র ফুটে উঠে গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য একই ঘটনার জখমী মোঃ আয়না মিয়ার বক্তব্যে। তৎপ্রেক্ষিতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট সালিশী বোর্ড চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের ভাই ভাতিজাদের কে মোট ৬৫ হাজার টাকা নগদ জরিমানা ধার্য্য করে রায় প্রদান করেছেন। চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ তাৎক্ষনিকভাবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকী টাকা ৩০ মে তারিখের মধ্যে সালিশের সভাপতি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করবেন মর্মে প্রকাশ্য সভায় সময় প্রার্থনা করেছেন। সালিশে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হোসেন,ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবোধ চন্দ্র রায় (মিন্টু) ও মহিবুর রহমান তালুকদার,বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী নুরু,আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট আলমনূর হীরা,অলিমান তালুকদার,ফতেহপুর ইউপি সদস্য বিধান চন্দ্র রায়,রজত কান্তি দাশ সম্ভূ¢ূ, মোঃ জয়নাল আবেদীন,মোঃ আব্দুল হেকিম,উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মুর্শেদ আলম,জাতীয় পার্টির নেতা শিবলী আহমদ ও সাবেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দিলোয়ার হোসেন প্রমুখসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। বিশিষ্ট সালিশী গৌরারং ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আয়না মিয়া ও ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মনসুর নূর চৌধুরীর উপর হামলার কারণে আসামীরা প্রকাশ্যে তাদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে পরগনা বাজারে এ ধরনের বর্বরোচিত কোন ঘটনা আসামীগন কর্তৃক পুনরাবৃত্তি করলে ৩০ হাজার টাকা মূছলেকা প্রদান করতে হবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য ইভটিজিং এর প্রতিবাদের জের ধরে ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এর ভাই ভাতিজাদের হাতে ভিকটিমের পিতা ও ছোট ভাইসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে শহীদুল (১৮) কে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেটস্থ এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ফতেহপুর ইউনিয়নের সংগ্রামপুর গ্রামের আব্দুল কাইয়্যুমের ছেলে বখাটে হাসান (২২) সম্প্রতি জামালগঞ্জ কলেজে অধ্যয়নরত দুলভারচর গ্রামের একজন ছাত্রীকে কলেজে আসা যাওয়ার পথে উত্যেক্ত করে যাচ্ছিলো। ছাত্রীর অভিভাবকরা বখাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ঐ বখাটের আপন চাচা ও স্থানীয় ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এর কাছে বিচারপ্রার্থী হন। চেয়ারম্যান ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে নিস্পত্তি না করে দেখতেছি বলে কালবিলম্ব করায় গত ৯ মে সোমবার বিকেলে ভিকটিমের বাড়ী দুলভারচর গ্রামে এসে ভিকটিম ছাত্রীর ছোট ভাই আবিদ (১৩) কে বেদম মারপিঠক্রমে আহত করে বখাটে হাসান ও তার আত্মীয় স্বজনরা। ভিকটিম ছাত্রীর পক্ষে পার্শ্ববর্তী শ্যামারকান্দি গ্রামের আত্মীয় স্বজনরা ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে ৮ মে রোববার বাদ মাগরিব চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ উত্তেজিতদের কে আবারও ঘটনাটি নিস্পত্তি করবেন বলে প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান তার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ঘটনাটি নিয়ে কোন ধরনের সালিশ বৈঠকে না বসায় বখাটে হাসান ও তার পিতা আব্দুল কাইয়্যুমসহ সংগ্রামপুর গ্রামের আত্মীয় স্বজনরা পরদিন ৯ মে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় দুলভারচর পরগনার বাজারের কাছে ভিকটিম ছাত্রীর পিতা আজিজুর রহমানের বাড়ীতে হামলা করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজিজুর রহমানের শ্যামারকান্দি গ্রামের আত্মীয় স্বজনরা তাদেরকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে সংগ্রামপুর গ্রামের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এর ভাই আব্দুল কাইয়্যুমসহ অপরাপর আত্মীয় স্বজনরা হাতে ধারালো ছুরি,ক্ষিরিছ,লোহার রড,দা লাটিসহ দেশীয় অস্ত্রাদি নিয়ে বেআইনী জনতাবদ্ধে মিলিত হয়ে দুলভারচর পরগনার বাজারে পূর্ব পরিকল্পিত হামলা করে শ্যামারকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মনসুর নূর চৌধুরী (৫০) ও তার ভাই আশিক নূর চৌধুরী (৪০),একই গ্রামের আব্দুল মন্নান চৌধুরীর পুত্র এরশাদ চৌধুরী (৩৮),দুলভারচর গ্রামের নজির পাটানের পুত্র মকসিন (২০) কে গুরুতর আহত করে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত রজব আলীর পুত্র শহীদুল (১৮) ও সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আয়না মিয়া (৪৬) গুরুতর আহত হন। এছাড়াও চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এর আত্মীয় স্বজনদের অতর্কিত হামলায় সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর থানার নিয়ামতপুর,আহমদাবাদ,দুলভারচর,শ্যামারকান্দি ও ভাটিপাড়াসহ ৫/৬টি গ্রামের মোট ১৫ জন নিরপেক্ষ সালিশী আহত হন। ঘটনার পরপরই আহতদেরকে জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ভিকটিমের পিতা আজিজুর রহমান চৌধুরী (৫২) কে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত আশিক নূর সাংবাদিকদের জানান,চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ কে ইভটিজিং এর ঘটনার কথা আমরা ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে অবগত করি। তিনি ঘটনাটি নিস্পত্তি না করায় তার উস্কানীতেই এই হামলার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার সংবাদ পেয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানার এসআই আরপিন ও বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মোঃ ইকবাল হোসেন,ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,আমরা ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ না করলে হয়তো পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারতো। তিনি একপক্ষে ৮জন এবং অপরপক্ষে ২ জন আহত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন,চেয়ারম্যান যদি আমাদেরকে ইভটিজিং এর ঘটনার কথা তাৎক্ষনিকভাবে অবগত করতেন তাহলে ঐ ঘটনা সংগঠিত হতনা। ঘটনার ব্যাপারে ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিশ্বম্ভরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। লিখিত অভিযোগে আসামী করা হয়,আব্দুল কাইয়ূম এর পুত্র হাসান (২০), মৃত মিয়াধন আলীর পুত্র আব্দুল কাইয়ূম (৪০),আব্দুল মতলিব (৫৫),পটু মিয়া পইট্যা (৫৮),মৃত আব্দুর রউফ এর পুত্র ও চেয়ারম্যান ফারুকের আপন সহোদর সোয়েছ (২৭) ও সেলিম মিয়া (৪৫), আব্দুল গফুরের পুত্র হেলাল উদ্দিন (৪০),হোছন মিয়া (৫৭),পটু মিয়া পইট্যার পুত্র চান মিয়া (৪০) ও মনাই মিয়া (৩৫),মৃত মকছুদ আলীর পুত্র কামাল (৩৫) ও মনর উদ্দিন (৫৫), আব্দুস ছত্তারের পুত্র মাশুক মিয়া (৩৫), তৌফিক (৩২),সোনাই মিয়া ফকিরের পুত্র ফরহাদ (২৮),তারেক (৩৫),মৃত আব্দুস ছমাদের পুত্র কবির (৪০),মৃত সিরাজুল ইসলামের পুত্র শুল মিয়া (৩৭),মৃত আক্রম আলীর পুত্র খালিক মিয়া (৩৫),সোনাফর আলীর পুত্র জিয়াউর রহমান (৩৫),আলাবক্স এর পুত্র এনামুল হক (৩৭) ও নাজিম উদ্দিন (৩৫) কে আসামী করা হয়। এসআই শারফিনের কাছে অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর উদ্দিন নিজ উদ্যোগে ঘটনাটি নিস্পত্তির লক্ষ্যে সালিশী সভা আহবাণ করেন। সালিশের রায়ে উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট হয়। সালিশের রায় কে স্বাগত জানিয়ে সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এর একান্ত সহকারী সচিব সুমিত চৌধুরী সন্তু যেকোন মূল্যে সকলে মিলে এলাকার সম্প্রীতি রক্ষার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহবাণ জানান। সালিশের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর উদ্দিন বলেন,ইভটিজিং এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগ্রামপুর ও শ্যামারকান্দি এই দুই গ্রামবাসীর বিরোধ এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আজ আমরা নিরসন করে দিলাম। আশা করি সালিশের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা ভবিষ্যতে নিজেরাই এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন। তিনি বলেন,বিশ্বম্ভরপুরের প্রতিটি ঘরে সামাজিক অশান্তি ও বিরোধ দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।