প্রতিনিধি ৩ এপ্রিল ২০২২ , ১০:০১:০৫ অনলাইন সংস্করণ
মাহে রামাযানের ফজিলত ও তাৎপর্য – সাওম–এর (রোযা) আভিধানিক অর্থঃ সাওম, বহুবচনে সিয়াম। সাওম বা সিয়ামের অর্থ বিরত থাকা। সাওম–এর পারিভাষিক অর্থঃ ইসলামী শরীয়তে সাওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। ২য় হিজরীর শা‘বান মাসে মদীনায় রোযা ফরয সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হলো, যেভাবে তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। (সূরা বাকারা, আয়াত–১৮৩)। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোযা রাখে”। পবিত্র রামাযানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদীসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর ভেতর থেকে কিছু হাদীস এখানে উল্লেখ করা হলো– ১. প্রিয় নবীজি সা.-এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরাযইরা রাযি. বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, যখন রামাযান মাস আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম) ২. হযরত শাহ্ ইবনে সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোযাদার ব্যতীত অন্য কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম) ৩. হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, হুজুর সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের নিয়্যতে রামাযান মাসের রোযা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের নিয়্যতে রামাযান মাসের রাতে এবাদত করবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের নিয়্যতে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম) ৪. রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, রোযা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোযা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোযা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোযা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোযাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোযাদারের খুশির বিষয় ২টি– ক. যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। খ. আর যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোযার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)। ৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক সা. বলেছেন, রোযা এবং কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি পূরণ করা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকী) ৬. হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন রামাযানের প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। অতঃপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তা‘আলা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)। ৭. হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, যখন রামাযান মাস উপস্থিত হতো রাসুলুল্লাহ সা. সমস্ত কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে দান করতেন। (বায়হাকী) ৮. নবী করীম সা. বলেছেন, কেউ যদি (রোযা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা এবং খারাপ কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) ব্যতীত আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী) ৯. হযরত সালমান ফারসী রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ সা. আমাদের শা‘বান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মোবারক মাস। এটি এমন মাস, যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা‘আলা এই মাসের রোযাগুলোকে করেছেন (তোমাদের ওপর) ফরয। আর রাতে নামায পড়াকে তোমাদের জন্য করেছেন নফল। এ মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরয আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরয আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরয আদায় করলো।এটা ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সাওয়াব হলো জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস, যে মাসে মুমিন বান্দার রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সাওয়াব হবে রোযাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোযাদার ব্যক্তির সাওয়াব কমবে না। এসব শুনে সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখেনা যে, রোযাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ পাক এই সাওয়াব দান করবেন যে রোযাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তা‘আলা তাকে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। যার পর সে পুণরায় তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত।