• সমাজ সেবা

    বিনা পারিশ্রমিকে ঠাকুরগাঁও কোর্ট ও ডিসি চত্বর পরিষ্কারের দায়িত্ব পালন করেন আকলিমা

      প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২২ , ৬:০৯:৪১ অনলাইন সংস্করণ

    মাহমুদ আহসান হাবিব ঠাকুরগাঁও: করোনার সময় থেকে প্রায় ২ বছর বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় কোর্ট ও ডিসি চত্বর পরিস্কারের দায়িত্ব নেয় আকলিমা। গত ২ বছরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও শহরের কোট চত্বর ও ডিসি অফিস চত্বর প্রতিদিন পরিস্কার করেন তিনি। তার বিনিময়ে কখনো পারিশ্রমিক পান নাই। শুধু পরিস্কার করেও থেমে নেই তিনি, কোর্ট ভবনের সামনে নিজেই গড়ে তুলেছেন সুন্দর ফুলের বাগান। আকলিমা বেগম ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার জীবনপুর তোররা এলাকার বাসিন্দা। করোনার সময় স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে চলে আসেন শহরে। সেই মামলা নিয়ে কোর্ট চত্বরে প্রতিদিনই তাকে আসতে হত। তার পর থেকে আর ফিরে যাওয়া হয় নাই আকলিমার। প্রতিদিন সকালে কোট চত্বরে ভির শুরু হওয়ার আগেই তিনি ঝাড়– দিয়ে সব পরিস্কার করেন। এর পরে বাগান পরিচর্যা শুরু করেন। সারাদিন কোর্ট এলাকাতেই থাকেন। কোর্ট এর বিভিন্ন উকিল এর দেওয়া সহযোগীতা দিয়েই দিন কেটে যায় আকলিমার। আর রাতে শহরের হঠাৎ বস্তি এলাকায় একটি ছোট্ট ঘরে গিয়ে ঘুমান তিনি। এভাবেই ২ বছর থেকে কোন সরকারী সহযোগিতা ছাড়া মানুষের কাছে হাঁত পেতে যা পায় তা দিয়ে পরিস্কার এর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কোর্ট চত্বর পরিস্কার করার সময় কথা হয় আকলিমার সাথে। তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে, করোনার সময়ে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে কোর্টে আসি। মামলার জন্য প্রতিদিনই কোর্টে আসতে হত। তখন দেখতাম কোর্ট এলাকা অনেক নোংরা। সারাদিন কোর্টে বসে থাকতাম তাই নিজেই একদিন ইচ্ছা করে কোর্ট পরিস্কার করা শুরু করলাম। যারা সমাজের ময়লা পরিস্কারের জন্য কোর্টে লড়াই করে তাদের আশে পাশে ময়লা এমন একটা দামি চিন্তা থেকেই কোর্ট চত্বর পরিস্কার শুরু করেন আকলিমা। তিনি আরো বলেন, করোনার সময় পরিস্কার থাকা অনেক জরুরী। আমার যেহেতু কাজ নেই তাই আমি কোর্ট চত্বর ও ডিসি অফিসের সামনের জায়গা ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার করা শুরু করি। সারাদিন উকিল, মুহুরীদের কাছ থেকে যা বকশিশ পাই তা দিয়েই চলে যায় আমার। আর এখানে থেকেই মামলার খোজখবর নেই। মামলা চালানোর জন্য তো টাকা নেই আমার তাই উকিলদের সেবা করেই মামলা সম্পর্কে অনুরোধ করি তাদেরকে। কোর্ট এলাকার মুহুরী সাজ্জাদ বলেন, আগে কোর্ট চত্তরে অনেক ময়লা জরো হয়ে থাকতো। আমরা মাঝে মধ্যে ঝাড়– দিতাম। কিন্তু সরকারী কোন লোক নেই এসব কাজের জন্য। হঠাৎ একদিন দেখি এই মহিলা সকালবেলা কোর্ট চত্বর পরিস্কার করে চকচক করে ফেলছে। উনার এই পরিশ্রম দেখে আমরাই কিছু কিছু করে প্রতিদিন উনাকে সহযোগীতা করি। এটা দিয়েই উনি কোনরকম দিন চলে। আর উনার জন্য কোর্ট এলাকা এখন এত পরিস্কার। ঠাকুরগাঁও কোর্ট এর এ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান রিজভি বলেন, এভাবে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়া মানুষ খুব কম দেখা যায় এই সময়ে। করোনার সময় থেকে উনি যেভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার জন্য উনাকে পুরস্কৃত করা উচিত। কিন্তু আমরা সামান্য পারিশ্রমিক পর্যন্ত তাকে দিতে পারি না। সরকারী কোন সহযোগীতা তো তিনি পান না। আমরা কোর্ট এর উকিল মুহুরীরা যেটা দেই সেটা দিয়েই উনি কোনরকম দিনযাপন করে। এমন স্বেচ্ছাশ্রমিকদের আমার পক্ষ থেকে সেলুট জানাই। আকলিমার কি চাওয়া এই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হেসেঁ দিয়ে বলেন, আমার আবার চাওয়া পাওয়া। এখন কোন রকম খেয়ে পড়ে বেচেঁ থাকা আরকি। স্বামী নেই, সন্তানেরা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। এখন এই কোর্ট এলাকা পরিস্কার করে যাবো শেষ জীবন পর্যন্ত। জজ স্যার, ডিসি স্যার যদি সরকারী কোন সহযোগীতা দেয় তাহলে আর কারো কাছে হাঁত পাততে হবে না আমাকে। আর একটা মামলা করছি আমি স্বামীর কাছে ভরণপোষনের। সেটা শেষ দেখে মরতে চাই। আর কোন চাওয়া নেই আমার।

    0Shares

    আরও খবর

    Sponsered content