প্রতিনিধি ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ৮:০৪:০০ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আহসানপুর গ্রামের পাশে পাউবোর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে হালির হাওরে প্রায় ৫৭৫০ হেক্টর বোরো জমির আধাপাকা ধান।
সোমবার রাত ১২টার দিকে জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের আহসানপুর এলাকার হেরাকান্দি গ্রামে ঢলের পানির চাপে ঝুঁকিতে থাকা বাঁধটি ভেঙে যায়। কৃষকরা জানান,কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির গাফিলতি, পাউবোর দুর্নীতি ও পিআইসির উদাসীনতায় সুনামগঞ্জে একের পর এক মােট ৩১টি বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ঢুকছে। এ যেন কৃষকের নিয়তিতে পরিনত হচ্ছে। কোন কাজেই আসছে না সরকারের ১শ ২২ কোটি টাকার বরাদ্দ। সময় মতো বাঁধের কাজ শুরু এবং শেষ না হওয়ায় ও সরকারী নীতিমালা না মানার কারনে বাঁধ ভাঙ্গাকে দায়ী করছেন কৃষকরা। বাঁধের কাজ শুরু থেকে হাওরবাঁচাও জেলা কমিটি বিভিন্ন দাবী আন্দোলন করে হাওর ডুবির দায় প্রশাসন ও পাউবোকেই নিতে হবে বলে আসছেন।
এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আয়োজনে শহরে দৈনিক সুনামকণ্ঠ অফিসে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বহলুলের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক বিজন সেন রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাওর বাচাঁও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি (এড. স্বপন কুমার দাস রায়),কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সুখেন্দু সেন, অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক, নির্বাহী সদস্য এমরানুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ নুর আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা বলেছেন গতকালে সোমবার গভীর রাতে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার আহসানপুর বাঁধ ভেঙ্গে হালির হাওরের হেরাকান্দি হাওরে পানি প্রবেশ করে ৫৭৫০ হেক্টর জমির আধাপাকা ধান তলিয়ে গিয়েছে।
এছাড়াও এখনো হাওরে ৫০% ধান কাটা না হলেও খাতাকলমে ধান কাটছে তারা। ছায়ার হাওরের মোট আবাদের ৪০ ভাগ ধান তলিয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ বলছে ৯৫ ভাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন ৯৮ ভাগ ধান কেটেছে কৃষকরা। আমরা কৃষকদের পক্ষে তাদের এমন তথ্য প্রত্যাখান করছি। কাজে ব্যাপক অনিয়ম , দুর্নীতি আর লুটপাট হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাঁধ বাগিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতির কারনে পাহাড়ি ঢলে দুর্বল বাঁধ ভেঙ্গ কৃষকের সলিল সমাধি হয়েছে। যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়েগেছে তদন্ত করে পিআইসিসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি এবং গণশুনানির মাধ্যমে হাওরের ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।
কৃষকরা জানান এখনও হাওরের অর্ধেক ধানও কাটা হয়নি। এমুহুর্তে পানি এসে হাওর তলিয়ে গেল। হালির হাওরের কৃষক মনি বলেন, আমার অনেক জিমিতে আধপাকা ধান আছে, এখনো অর্ধেক কাটা হয়েছে। আর মাড়াই ও কাটাইকৃত ধান নিয়ে আছি আরো বিপদে বাঁধ ভাঙ্গার পর সারা রাত খলা থেকে বাড়িতে তুলছি কাটা ধান। বহু কৃষকের জমি নিজের চোখের সামনেই পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার জানান, এই হাওরে আনুমানিক ৭০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব বলেন, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও শুরু থেকেই হাওরের বাঁধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করেছি। সোমবার রাতে হঠাৎ আহসানপুরের বাঁধ ভেঙ্গে হালির হাওরে পানি প্রবেশ করে। আমরা চেষ্টা করেছি আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে এই হাওরে প্রায় ৯০ ভাগের উপরে ধান কাটা হয়েছে।
তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, হালির হাওরে ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, সোমবার রাতে জামালগঞ্জের আছানপুরের বাঁধ ভেঙে হালির হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে। তবে চেষ্টা করা হয়েছে ভাঙন ফিরানো যায়নি। ##
কুলেন্দু শেখর দাস
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২৬.০৪.২০২২