প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২২ , ৭:০৯:০৬ অনলাইন সংস্করণ
কুলেন্দু শেখর দাস,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় আপাতত শংকামুক্ত রয়েছে হালির হাওরে আবাদকৃত বোরো ফসল। তবে উপজেলার সর্ববৃহৎ বোরো ফসলের ভান্ডার খ্যাত পাকনার হাওরের কাইল্ল্যায়ানী বাঁধ থেকে পূর্ব দিকের সব বাঁধেই দর্মুজ না হওয়া ও ঠিক মতো ঘাস লাগানো না হওয়ায় বাঁধগুলো ঝুঁকি তে রয়েছে জানান কৃষকরা। আবার বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়লে ওই বাঁধগুলো ডেবে যেতে পারে। দর্মুজ ঠিক মতো না হওয়ার কানে নীচ দিয়ে সুঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহ হতে পারে।
হালির হাওরে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় কৃষকরা বেশ ক’দিন ধরে লাগাতার বাঁধের মেরারমত কাজ করছেন। হালির হাওরে হেরারকান্দি ক্লোজার অংশে হাওর সাইডে অনেক গভীর থাকায় ল্যান্ডস্লাইড (মাটিধ্বস) রোধ করার জন্য ড্রেজার দিয়ে ভিটবালু ফেলার কাজ হচ্ছে। মহালিয়া হাওরের বাঁধ রক্ষায় পুরাতন বাঁধের মাটির নিচের অংশে ২০-২৫ টি গর্ত (বুরুঙ্গা) বন্ধ করা, এই গর্তের ভিতর দিয়ে তিন চারদিন ধরে পানির প্রবাহ আছে। এই পর্যন্ত দশ-বারটা প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। আরও ১০-১২ টি ইদুরের ও কাঁকড়ার গর্ত রয়েছে যেগুলো বন্ধ করার কাজ চলছে।
নান্টুখালী ক্লোজারের নিচ দিয়ে অল্প পানির প্রবাহ বন্ধ করার জন্য নদীর পাশে জিওব্যাগ দিয়ে মাটির কাজ হচ্ছে। এর মাধ্যমে গত দুইদিনের তুলনায় প্রবাহ প্রায় ৭৫ ভাগ কমানো হয়েছে । বাঁধ শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জিওব্যাগ ফেলা ও বাঁশের পাইলিং কার্যক্রম চলবে। নান্টুখালী বাঁধের দুইপাশে পর্যাপ্ত সিনথেটিক ব্যাগ প্লেইস করা হচ্ছে এবং বাঁধের উপরে মাটিভর্তি তিন হাজার বস্তা মজুদ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।
পাকনা হাওরে বাঁধে বাঁধে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম আর দায়হীন কর্মকান্ডে কোথাও আধাফুট, কোথাও এক থেকে দেড়ফুট, কোথাও পুরাতন বাঁধের উপরিভাগ কেবলি কোনরকম করেই প্রত্যেকটি বাঁধের উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বাঁধে মাটি ফেলার পর নিয়ম অনুয়ায়ী দূরমুজ করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে (ক্লোজারগুলোতে) আশংকাজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাঁধের উপরে ও দু’পাশে ঘাস লাগানো এবং এ সবের পরিচর্যা করার বাধ্য বাধকতা থাকলেও প্রকল্পের স্থানে স্থানে পিআইসির কাউকে দেখা যায়নি। কিছু কিছু বাঁধে দায়সারা ভাবে ঘাস লাগানোয় আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পরিদর্শন করে গেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। এ সময় সাথে ছিলেন, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, পাউবো এর প্রধান প্রকৌশলী এবং সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব ইকবাল আল আজাদ, ইউএনও বিশ্বজিত দেব, এসিল্যান্ড অলিদুজ্জামান, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান গণ পিআইসি সদস্যবৃন্দ এবং কৃষকরা।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, হাওরের ঝুঁকি পুর্ণ বাঁধ রক্ষা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কৃষক সহযোগিতায় জনতার সহযোগিতায় সব মিলিয়ে সকলের প্রাণপন প্রচেষ্টায় বাঁধ রক্ষা হয়েছে। এখন নদীর পানি কমতে শুরু হওয়ায় অনেকটা শঙ্কামুক্ত হয়েছে হাওর। এছাড়া হাওরে কিছু কিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সপ্তাহ দিন সময় পেলে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। প্রাকৃতিক বড় কোন বিপর্যয় না হলে আশা করি আমরা সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারবো।