প্রতিনিধি ২১ মার্চ ২০২২ , ১২:৪৮:৩০ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কেউ খেলার ছলে,কেউ বা বন্ধুর সঙ্গে মিশে ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে চুরি-মারামারির মামলা হওয়ায় আদালতে এসে হাজিরা দিতে হতো। অপরাধি হিসাবে হাজিরা দেওয়ার সময় কোমলমতি শিশুদের যেমন মন খারাপ হতো। অভিভাবকরাও বিব্রত ও লজ্জাবোধ করতেন। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আদালত এমন ৭০ শিশু অভিযুক্তদের সংশোধনের জন্য বাবা মাযের কাছে ফেরত পাঠালেন।আদালতের নির্দেশে ওদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা,ফুল আর ডায়রি তুলে দিলেন আদালতের কর্মীরা।
সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই ব্যতিক্রমী রায় দিলেন।
বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া ৫০ টি মামলায় ৭০ জন শিশু আদালতে এসে হাজিরা দিতে হতো। মারামারি,ছোটখাটো চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল এদের বিরুদ্ধে।কোমলমতি এসব শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠতে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে।শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবার উপক্রম হয়। আদালত এই শিশুদের কারাগারের পরিবর্তে মা-বাবার জিম্মায় ফেরৎ পাঠিয়ে শিশুদের জীবন সুন্দর ও মানবিক গুণাবলি নিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য সংশোধনের শর্ত দিলেন।আদালতের এমন রায়ে আবেগাপ্লুত হলেন অভিযুক্ত শিশু তাদের অভিভাবকরা।
আদালতের দেওয়া শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ভাল কাজ করা এবং ডায়রীতে তা লিখে রাখা,মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, সবার সাথে সদ্ভাব রাখা এবং ভাল ব্যবহার করা, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা এবং বাবা মায়ের প্রতি সেবা যতœ করা ও কাজে কর্মে তাদের সাহায্য করা,নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ’ পাঠ করা এবং ধর্মকর্ম পালন করা,প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা,মাদক থেকে দূরে থাকা,ভবিষ্যতে কোন অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানো।এসব শর্ত প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর আদালতকে অবহিত করবেন।
মা বাবা তাদের ¯েœহের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেলেন।ব্যতিক্রমী রায়ের দিনটি স্মরণীয় ও ইতিহাস হয়ে থাকবে বললেন, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী।
একই আদালত ইতিপূর্বে তিন দফায় ৯৫ মামলায় ১৩৩ জন শিশুকে প্রবেশন দিয়ে মামলা থেকে নিষ্কৃতির মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনে সুযোগ করে দিয়েছিলেন।একইভাবে বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় দুই দফায় সুনামগঞ্জের প্রায় দেড় শতাধিক দম্পতিকে বিচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা করে আপোষে তাদের মামলা সমূহ নিষ্পত্তি করে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের সুখীজীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।