প্রতিনিধি ২ মার্চ ২০২২ , ১২:০০:৩৭ অনলাইন সংস্করণ
হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫) গণধর্ষণ ও ৬ টুকরো করে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
১ লা মার্চ রোজ মঙ্গলবার বিকালে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েদ মাহবুবুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে প্রধান আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান।তিনি বলেন, শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি জিতেশ চন্দ্র গোপ দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ দ্বারা জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠনোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তিন আসামির ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৮ দিনের রিমান্ড শেষে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট ইশরাত জাহানের আদালতে হাজির করে আবারও তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন আসামির আরো ৮ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ১৬ই ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগ রাতে জগন্নাথপুর পৌর শহরের পৌর পয়েন্টের একটি মার্কেটে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫) কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গভীর রাতে ফার্মেসির ভেতর ধর্ষণ করে। ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করার কথা বলায় শ্বাসরোধ করে শাহনাজকে হত্যা করে লাশ ৬ টুকরা করা হয়। পরে লাশ গুমেরও পরিকল্পনা করে ধর্ষকরা। রাজধানী ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শাহনাজ হত্যার মূল তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের তালাবদ্ধ অভি মেডিকেল হল থেকে শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ভাই হেলালউদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী ছুরুক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে চাকরি করেন। পরিবারের সব সদস্যদের ওষুধ ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসি থেকে কেনার সুবাদে জিতেশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। শাহনাজ পারভীন কিছুদিন ধরে বেশ কিছু গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার সমাধানে সুপরামশের্র জন্য গত বুধবার ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে জিতেশের ফার্মেসিতে গেলে ফার্মেসির ভিতরে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। কাস্টমারের ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক ওষুধ তাকে দেওয়া হবে বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে এবং গভীর রাতে ফার্মেসি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এনার্জি ড্রিংকস পান করে। জিতেশ, অসিত গোপ, অনজিৎ গোপ শাহনাজ পারভীনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারের সদস্য ও অন্যদের কাছে প্রকাশ করার কথা বলায় আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক তারা পরস্পর যোগসাজশে শাহনাজ পারভীনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং বিশ্রাম কক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে হত্যা করে লাশ গোপন করার জন্য ৬ টুকরো করে।