প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২২ , ২:৩৩:০৬ অনলাইন সংস্করণ
জাহাজে হামলার ঘটনায় মারা যাওয়া থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ হাদিসুর রহমানের লাশ ইউক্রেনের একটি বাংকারের ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে লাশটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
জীবনশঙ্কা থেকে দেশে ফিরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ২৮ নাবিক। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গেটের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তারা বলেন, এভাবে এত দ্রুতসময়ে দেশে ফিরতে পারব ভাবিনি। দ্রুততম সময়ে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তারা।
সহকর্মীদের নিয়ে দেশে ফিরতে পেরে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের মাস্টার জি এম নূর ই আলম স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, এত দ্রুত সুস্থভাবে সবার ফেরা সম্ভব হবে- সেটা আমরা ভাবতেও পারিনি। দ্রুততম সময়ে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করায় সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
জাহাজটির মাস্টার নূর ই আলম বলেন, ‘দেশে সুস্থভাবে ফিরতে পেরে অনেক আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট সবার তৎপরতায় নিরাপদে এবং দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরতে পেরেছি। আমাদের পরিবার অপেক্ষায় ছিলেন, সবার চেষ্টায় ফিরতে পেরেছি এত অল্প সময়ের মধ্যে।’
রকেট হামলায় সহকর্মী হাদিসুরের মৃত্যু দেখা জাহাজটির মাস্টার আরও বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এখানে সুস্থভাবে আসতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।’
জাহাজে রকেট হামলা হওয়ার পর বিএসসি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব সময় যোগাযোগ রাখা হয়েছিল জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। ইউক্রেন থেকে যুদ্ধ চলাকালে সেখান থেকে তাদের বের করে আনার জন্য পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং রোমানিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মীরা যে পরিশ্রম করেছেন, সেজন্য তাদেরও ধন্যবাদ জানান মাস্টার।
মাস্টার বলেন, ‘সাধারণত আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কারো কথা হয় না, কিন্তু জাহাজে হামলার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের সার্বিক অবস্থা জানতে, আমরা কে কেমন আছি এসব জানতে… আমার সঙ্গে সরকারের কর্মকর্তারা কথা বলেছেন, সাহস দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সব কাজ হয়েছে, সবার প্রতি আমি আসলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এভাবে ফিরতে পারব ভাবি নাই।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে ফিরে আসা ছিল অকল্পনীয়। কারণ অনেক বড় বড় দেশ আছে যাদের নাগরিক এখনো দেশে ফিরতে পারেনি। আমাদের ছোট দেশ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ডিপ্লোম্যাটদের (কূটনীতিক) সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে।’
নিজেরা নিরাপদে দেশে ফিরতে পারলেও সহকর্মী হাদিসুর রহমানের লাশ ইউক্রেনে রেখে আসতে হওয়ায় নূর ই আলম দুঃখ প্রকাশ করে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি সরকার ও শিপিং করপোরেশনের কাছে তিনি আবেদন জানান, হাদিসুরের লাশ দ্রুত যেন দেশে আনা হয় এবং তার পরিবারকে যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, তুরস্ক থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে জলসীমায় নোঙর করে ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে অলভিয়া বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
জাহাজটি ২৯ জন নাবিক ও ক্রু নিয়ে সেখানেই নোঙর করা অবস্থায় আটকা পড়ে। গত ২ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিট ও ইউক্রেন সময় ৫টা ২৫ মিনিটে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলা হয়। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে যায়। মারা যান হাদিসুর রহমান।
জাহাজে আটকে থাকা বাকি ২৮ নাবিক ও ক্রু আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ৩ মার্চ সন্ধ্যায় টাগবোটের সাহায্যে তাদের তীরে আনার পর অলভিয়া এলাকার একটি বাংকারে রাখা হয়। সেখান থেকে ৫ মার্চ সকালে পাশের দেশ মলদোভা হয়ে রোমানিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। ৬ মার্চ সকালে তারা রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে পৌঁছান। সেখানে একটি হোটেলে তাদের রাখা হয়। হোটেলে বিশ্রাম শেষে তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।