• সুনামগঞ্জ

    ৫৫ লক্ষ টাকায় ধোপাজানের জব্দকৃত পাথর নীলাম

      প্রতিনিধি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৬:৫৩:১১ অনলাইন সংস্করণ

    আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে: রাতের বেলা ড্রেজার মেশিনের দ্বারা বালিপাথর চুরি থেকে বিরত থাকা,নীলামকৃত পাথর ব্যতিত নতুন করে নদী হতে পাথর উত্তোলন না করা এবং নীলামকৃত পাথর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্ধারিত পথে সরিয়ে নেয়া ইত্যাদি শর্তে ৬৫ হাজার ঘনফুট পাথর প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা মূল্যে নীলাম দিয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন। পৃথক পৃথক ২টি প্লটে ভাগ করে ৬ জন আগ্রহী অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের পুরান গুদিগাঁও নিবাসী মোঃ আলীনূরকে পূর্বের জব্দকৃত পাথর নীলাম দেয়া হয়। ৯ ফেব্রæয়ারি বুধবার বিকাল ৩টায় ধোপাজান চলতি নদীর পূর্বপাড়ে জব্দকৃত পাথর নীলাম প্রদানকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট সুকুমার সাহা, বিশ্বম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন, সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রসিদ আহমদ, ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেনসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ১ লাখ ৫ হাজার ৩ শত ৭১ ঘনফুট পাথর প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা মূল্যে নীলাম দিয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন। পৃথক পৃথক ৬টি প্লটে ভাগ করে ৬ জন আগ্রহী পাথর ক্রেতাকে পূর্বের জব্দকৃত পাথর নীলাম দেয়া হয়। ৩১ জানুয়ারি রোববার সকাল ১১টায় ধোপাজান চলতি নদীর পশ্চিমপাড়ে জব্দকৃত পাথর নীলাম প্রদানকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদিউর রহিম জাদিদ,উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর আলী,সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন,বিজিবি,পুলিশ প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের কর্মকর্তাগনসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। নীলাম ক্রয়কারীরা হচ্ছে শহরের জামতলা নিবাসী মৃত সুন্দর আলীর পুত্র আবু সুফিয়ান,আবু সুফিয়ানের পুত্র রাহিদুল ইসলাম বিকি,পশ্চিম ডলুরা নিবাসী কালা মিয়ার পুত্র শাহ আলম,কালিপুর নিবাসী ধনু মিয়ার পুত্র ফরিদ মিয়া,পশ্চিম ডলুরা নিবাসী মৃত ছনু মিয়ার পুত্র আব্দুল ওয়াদুদ ও নুরুল ইসলামের পুত্র জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
    সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ বলেন, ধোপাজান নদী হতে বেআইনীভাবে উত্তোলিত পাথর যারা স্তুপীকৃত আকারে নদীর পাড়ে রেখে দিয়েছিল সেইসকল জব্দকৃত পাথর আমরা নীলাম দিয়েছি। এর মানে এই নয় আমরা কাউকে বা কোন নীলাম গ্রহনকারীকে ধোপাজান চলতি নদী বালি পাথর মহাল ইজারা দিয়েছি। কেউ যদি আমাদের নীলামপত্র বা ক্ষমতাপত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নদী হতে বালি পাথর উত্তোলন করে এবং আমাদের অনুমতি ব্যতিত ইঞ্জিন নৌকা,বাল্কহেড কিংবা ছোট নৌকা দ্বারা বহন করে তাহলে তারা যেই হউকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিজ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ১৫ দিনের দীর্ঘ সময় পেয়ে নীলাম গ্রহনকারীরা সিন্ডিকেট গঠন করে ধোপাজান নদী হতে বেপরোয়াভাবে বালি পাথর উত্তোলন ও লুটতরাজ করবে কিভাবে এদের প্রতিরোধ করবেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী অফিসারগন বলেন,আমরা বিজিবি,জনপ্রতিনিধি,গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকগদের নিয়ে এ ব্যাপারে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করবো। এই কমিটি ধোপাজান নদী হতে নীলাম গ্রহনকারীরা বা অন্যকোন সিন্ডিকেট বেআইনীভাবে বালি পাথর উত্তোলন করে কিনা তা আমার কাছে রিপোর্ট করবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনকে জানাবে। এছাড়া সাংবাদিকরাও আমাদেরকে খবর জানাতে পারবেন। আমরা বালি পাথর যে কেউ লুটতরাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে এ্যাকশনে যাওয়ার চেষ্টা করবো। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে ধোপাজান চলতি নদীতে অভিযান পরিচালনা করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মালিকবিহীন অবস্থায় ১০টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। পরবর্তীতে ৬টি ড্রেজার মেশিন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং ৪টি ড্রেজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় রাখা হয়। তারা বলেন,এসব ঘটনা থেকে চোরাকারবারীরা শিক্ষা নেয়া উচিত। তারপরও যদি এরা সতর্ক না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসনের পাথর নীলামের সংবাদে সুনামগঞ্জ শহর ও উত্তর সুনামগঞ্জের চোরাকারবারী বালিপাথর খেকো সিন্ডিকেট গত এক সপ্তাহ যাবৎ রাতে ধোপাজান নদীর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বালি পাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকা বের করে নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে ধোপাজান নদীতে অবস্থিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের টহলদল রাতের বেলা যাহাতে অবৈধ বালি পাথরের নৌকা আটক করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সেজন্য কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন।
    এদিকে সরকারের স্বীকৃত সুনামগঞ্জের প্রকৃত বালিপাথর ব্যবসায়ীরা বলছেন,সরকারের মন্ত্রীপরিষদসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ধোপাজান নদী বালি পাথর মহাল ইজারা প্রদান কিংবা খাস কালেকশন প্রদান বন্ধ রাখার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করলেও নীলাম প্রদানের নামে সরকারের আদেশ লংগন করা হচ্ছে। যেসব সিন্ডিকেট নদী হতে অবৈধভাবে বালি পাথর লুটতরাজ করছে তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে নীলাম প্রদানের নামে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটচক্র লাভবান হলেও সাধারন বারকী শ্রমিকরা ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে তারা মতপ্রকাশ করেন। তারা বলেন,সিন্ডিকেটচক্র নিজেরা প্রতিনিয়ত নদী হতে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা বালি পাথর উত্তোলন করে। নদীর পারে বালি পাথরের বড় বড় স্টেক নির্মাণ করে এইচক্র নিজেরাই প্রশাসনকে নানাভাবে ম্যানেজ করে নীলাম হাতিয়ে নেয়। নীলাম প্রদানকারীরা এইচক্রটিকেই নীলাম প্রদান করেন। তারা যদি পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নীলাম প্রদান করতেন তাহলে হয়তো অনেক প্রকৃত ব্যবসায়ীরা নীলামে অংশগ্রহনের সুযোগ পেত। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার বলেন,আমরা মাইকিং করে নীলাম প্রদান করেছি। এখানে আমাদের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। আমরা সরকারী রাজস্ব আদায়ের স্বার্থেই এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। সাংবাদিক ব্যবসায়ী যে কেউ এই নীলামে অংশগ্রহন করতে পারেন। সকলের জন্য আমাদের এই বৈধ প্রক্রিয়া উন্মুক্ত আছে এবং থাকবে।

    আরও খবর

    Sponsered content