প্রতিনিধি ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৯:০৩:২৩ অনলাইন সংস্করণ
কবি এম এ গফফার, যুক্তরাজ্য থেকেঃ আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক কারণে হতাশাগ্রস্থ ও অসফল ব্যক্তিরা আত্মঘাতী হোন অনেক সময়। সমাজ রাষ্ট্র ও আইন কখনো এধরনের মৃত্যুকে সুর্থন করেনা। তারপরও গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায় আত্মহত্যার মর্মান্তিক ও দুঃখজনক খবর।
সম্প্রতি জনপ্রিয় চিত্র নায়ক রিয়াজের শশুরের আত্মহত্যা দেশ-বিদেশে ভাইরাল হয়েছে। দেশবাসীর মতো আমরা প্রবাসীরাও মর্মাহত এই মৃত্যুতে।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ২৫ নং বাসায় তার নিজ ফ্ল্যাটে গত বুধবার দিবাগত রাত ৯-৪৫ মিনিটে ব্যবসায়ী মহসিন খান নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। তার নির্মম মৃত্যুতে দেশবাসীর সাথে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীরাও শোকাহত ও গভীর সমবেদনা জানাচ্ছেন।
মহসিন খান সুই-সাইড নোটে ও সরাসরি ফেসবুক লাইভ ভিডিও-তে নিজের মুখে বলেছেন- আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী! উনার এ কথাটির যুক্তি-তর্ক ও সব আলামত বিচার বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই প্রশ্ন আসবে মহসিন খানের মৃত্যুর জন্য তার পরিবার ও রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনরাই প্রত্যক্ষ্য এবং পরোক্ষভাবে দায়ী।
মহসিন খান তার নিজের লাইভ ভিডিওতে বলে গেছেন উনি একজন সফল ও সচ্ছল ব্যবসায়ী ছিলেন। কোটি কোটি টাকা ব্যবসার মাধ্যমে আয় করেছিলেন। এক সময়ে তার জীবনে মহা দুর্দিন নেমে আসে। ২০১৭ সালে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে একমাত্র ছেলে ও স্ত্রী অস্ট্রেলিয়া প্রবাসে রেখে একাকিত্ব নিয়ে ধানমন্ডির ২৫ নং বাসায় তার নিজ ফ্ল্যাটে দুশ্চিন্তায় নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন।
ক্যান্সারের কারণে ব্যবসায় পর্যাপ্ত সময় দিতে না পাড়ায়, ব্যবসায় অনেক অবনতি হয়েছিল। এছাড়াও অনেক পরিচিত স্বজন ও বন্ধু মোটা অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ না করায় এবং একাকিত্ব নিঃসঙ্গ অসহায় জীবনে তার পরিবার ও রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন কেহই তার খোজ খবর রাখে নাই।
তিনি ভিডিওতে আরও বলেন- আমি যদি এই ফ্ল্যাটে মরে যাই- লাশ পচে গলে গেলেও কেহ আমার খোঁজখবর নিবে না। আর এসব কারণেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছিলেন। তাই একান্তভাবে পরিবারের সান্নিধ্য লাভের জন্য তার হাহাকারীত উদাস হতাশিত মনে বার বারই আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা মনের মধ্যে পরিকল্পনার জন্ম দিয়েছিল। তাই একমাত্র নিজের পরিবার ও রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনদের উপরে গভীর দুঃখ বেদনায় ও নিঃসঙ্গ হতাশায় নিজের মনের ভিতর পুঞ্জীভূত দুঃখ-কষ্ট জ্বালাযন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে চলে গেলেন চিরতরে এ সুন্দর পৃথিবী থেকে।
মহসিন খান তার ভিডিওতে আরও বলে গেছেন উনার ব্যবসায়ীক পার্টনারদের কাছে ৫ কোটি টাকার উপরে লেন-দেন রয়েছে ওরা টাকা দিচ্ছেনা! তাই উনি যদি উদার পরোপকারী কল্যাণকামী সুন্দর মনের মানুষ না হতেন চাইলেই উপযুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে আইনগতভাবে উনার পাওনা টাকা আদায় করতে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তাই সাংবাদিক ভাইবোনদের ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনেক অভিজ্ঞ লেখক আলোচক-সমালোচক এর লিখনিতে স্পষ্ট হয়েছে- মহসিন খান এর মর্মান্তিক মৃত্যু ও আত্মঘাতী হওয়ার পিছনে তার স্ত্রী-সন্তানের ও আত্মীয় স্বজনদের নির্ভিপ্ততা ও খোজখবর না নেওয়া এই হত্যার জন্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ্যভাবে দায়ী।
যদি মহসিনের মরণব্যাধি ক্যান্সারের মহা দুর্দিনে, একাকীত্ব নিঃসঙ্গ জীবনে তার পাশে জীবনের সুখ-দুঃখের একমাত্র জীবন সাথী তার পরিবার কাছে থাকতো তবে মহসিন আত্মহত্যার কল্পনাই হয়তো মনের মধ্যে স্থান দিতেন না। তাই পারিবারিক গভীর সুসম্পর্কের পাশাপাশি রোগে-শোকে ও বার্ধক্ষ্যে
অতিরিক্ত দায়িত্ব ও যত্ন নিতে হবে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রতি, তাহলে এমন দুঃখজনক ও মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের আর দেখতে হবেনা বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখকঃ মাতৃভূমি ও প্রবাসের স্মৃতি রুপান্তর বইয়ের লেখক।
ডার্নাল, শেফিল্ড, ইংল্যান্ড প্রবাসী।