• অনিয়ম / দুর্নীতি

    জামালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি

      প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৭:০৪:০৬ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চলছে নীরব অনিয়ম আর দুর্নীতি। করোনার এই মহামারী সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বন্ধ থাকার পর সরকার এর ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও জামালগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চলছে এর উল্টো। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শরিফ উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতায়, বিভিন্ন অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করেই চলেছেন। তার এমন লাগামহীন অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অতিষ্ঠ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এই শিক্ষা কর্মকর্তার এমন অনিয়মে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
    সম্প্রতি করোনার পর সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনায়লয়ের নির্দেশে স্কুল খোলার পর বিদ্যালয়গামী শিশু শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য ১২৬ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিটিতে থার্মাল স্কেল (শিক্ষার্থীদের তাপ মাপার যন্ত্র) ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিজ নিজ দায়িত্বে শিক্ষার্থীদের তাপ মাপার যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগী হলে, শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন শিক্ষকদের বাঁধা দিয়ে তিনি নিজেই কোন এক কোম্পানির সাথে চুক্তি করে থার্মাল স্ক্যানার তিনি নিজেই ক্রয় করে নিয়ে আসেন। তার কাছ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের প্রতিটি ১৭ শত টাকা করে তাপ মাপার যন্ত্র ক্রয় করে নিতে বাধ্য করেন। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও অন্য শিক্ষকরা নীরবে চোখ বুজে তা সহ্য করছেন। অথচ শিক্ষা কর্মকর্তার বিক্রিত ওই তাপ মাপার যন্ত্র টি যাচাই করে জানা গেছে, এর বাজারমূল্য হবে ৬ থেকে ৭ শত টাকা। অধিকাংশ সময় তিনি অফিস ফাঁকি দিয়ে তার নিজ এলাকা গাজিপুর থেকে এসে বিভিন্ন পন্থায় বিভিন্ন নিয়ম শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এবার তিনি তাঁর অফিসকে লাইব্রেরী বানিয়ে শিক্ষকদের হাজির করে বিভিন্ন বই বিক্রি করছেন। বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও একাধিক শিক্ষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৯-‘২০ অর্থ বছরে দুর্যোগ মোকাবেলায় ১২৬ টি বিদ্যালেয় ৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা সরকারী বরাদ্ধ আসে। নিয়ম অনুয়ায়ী সরকারী বরাদ্ধের ওই টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা সমুদয় টাকা উত্তোলন করেন যা এখন পর্যন্ত কোন বিদ্যালয়ে দেয়া হয়নি। ২০১৯ সালে শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ক্রয় বাবদ মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করলেও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের এখনো কোন ডিভাইস প্রদান করেন নি। তবে ২০২০-‘২১ সালে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ডিভাইস বরাদ্ধ এসেছে কি-না তা তিনি সুষ্পষ্ট জানাননি। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ২০২০-‘২১ অর্থ বছরে ৭০টি বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট খরচ বাবদ ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা (প্রতি বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৩ শ টাকা) বরাদ্ধ আসে। নিয়ম অনুয়ায়ী সরকারী বরাদ্ধের ওই টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নামকাওয়াস্তে কয়েকজন শিক্ষকে নিম্নমানের মডেম ক্রয় করে দিলেও বাকী প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে কোন মডেম পায়নি বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের একাউন্ট নাম্বারে খোঁজ নিলেই এসবের তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান একাধিক শিক্ষকগণ। ২০২০-‘২১ অর্থবছরে শিক্ষকদের মাসিক রিটার্ন(এম.আর) ৩ টাকা মূল্যে বাহিরে দোকানে কিনতে পাওয়া গেলেও শিক্ষা কর্মকর্তা গাজীপুর থেকে ছাপিয়ে এনে ৫ টাকা মুল্যে শিক্ষকদের এক সাথে ৩ বছরের এম.আর ক্রয় করে নিতে চাপিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা ছুটি না নিয়েই করোনার দোহাই দিয়ে অনিয়মিত অফিস করে নিজ বাড়ি গাজীপুরে আসা যাওয়া করেন। অধিকাংশ দিন তাকে উপজেলা অফিস কক্ষে পাওয়া যায়নি। ক’দিন পুর্বে বাড়ি থেকে এসে ৫ম শ্রণীর (পিএসসি) সার্টিফিকেট তৈরী করে নমুনা নিয়ে আসেন জামালগঞ্জে। শিক্ষকদের ডেকে তিনি প্রতিটির মুল্য নির্ধারণ করতে চাচ্ছেন ২৫-৩০ টাকা। যা প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর নিকট থেকে পৌনে ৩ লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দাম হবে।
    আজ রবিবার সরেজমিনে শিক্ষা কর্মকর্তাকে তার অফিস কক্ষে পাওয়া যায়নি। তিনি গাজীপুর বাড়িতে আছেন বলে জানা গেছে। তবে এবার তিনি কি নিয়ম নিয়ে আসেন তাই শিক্ষকদের মুখে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।
    ২০১৯-‘২০ ও’২১ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা না মেনে শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম জাহান রাব্বী অধিকাংশ স্কুলের এডহুক কমিটির প্রধান হয়ে লাখ-লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়মকে আনিয়ম করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের দায় সাড়া কাজ করেছেন বলেও আলোচনা রয়েছে।
    এ ব্যপারে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রইসুজামান বলেন, আমার চাকুরীর মেয়াদ আর ৫/৬ মাস বাকি আছে তাই বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করি। এ বিষয়ে তিনি খোজঁ খবর রাখেননি বলেও জানান।
    এ ব্যাপারে উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অতুল চন্দ্র তালুকদার বলেন জানান,থার্মাল স্কেল ১৭’শ টাকায় নিয়েছি। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনিয়মিত কর্মস্থলে থাকার বিষয়টি একুট হেসে বললেন আপনারা সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন অথবা ইউএনও স্যার আছে যোগাযোগ করতে পারেন।
    এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম জাহান রাব্বীর বলেন, আমি ্উনার অধীনস্থ হিসেবে কমৃরত আছি এই বিষয়গুলো নিয়ে উনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
    এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শরিফ উদ্দিনের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উনার নম্বর——-০১৭১২২৯৯০৭৯
    এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম. আঃ রহমান বলেন, আমি বিষয়টি দ্রæত খোঁজ নিয়ে দেখছি। অনিয়ম পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    আরও খবর

    Sponsered content