প্রতিনিধি ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ১১:০৩:২৪ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রার্থীদের আগাম প্রচারণা জমে উঠেছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগ মনোননিত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ও বালিজুরি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান ও তার প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্ব স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌছ আলম নিজেদের প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মিলন কুমার তালুকদার,বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আজাদ হোসেন এবং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সামায়ূন কবীরসহ আরো অনেকে। মোট ৪ জন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র আতাউর রহমান ব্যতিত অন্য ৩ প্রার্থীরা বলেছেন,তারা দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন অন্যথায় নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন। অর্থাৎ যিনি নৌকার মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই তারা নির্বাচন করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান এবং তার ভাই প্রপেসর আহমদ আলী গত ২৬ নভেম্বর তারিখের একটি প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা করেছেন,এইবার নৌকার অবস্থা ভাল না। তাই নৌকা পেলেও নির্বাচন করবেন না পেলেও তারা নির্বাচন করবেন। আরো বলেছেন,জোট থাকলে বিজয় ছিনিয়ে আনবোই। মার্কাতে ভোট দেবনা,ভোট দেব ব্যক্তিকে। দুই গ্রামের ভোটারদেরকে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি মত বিনিময় সভা করে তারা তাদের দলীয় পরিচয় আছে বললেও একবারও দলের নাম নিলেননা। সভার শুরুতে একবার এবং শেষে দ্বিতীয়বার বক্তব্য রাখলেও সভার আহবানকারী আতাউর রহমানের মুখে ঘুণাক্ষরেও জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানটি শুনা যায়নি। অথচ মোটা অংকের টাকা খরচ করে তারা সভাটির ভিডিও লাইভ করেছেন। কথিত মত বিনিময় সভায় একজন বক্তা আতাউর রহমানকে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন,আতাউর রহমান দলমত নির্বিশেষে আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জামাত ও জাতীয় পার্টির সকল দলের ঐক্যজোটের প্রার্থী। আতাউর রহমানের ভিডিও লাইভ দেখে তার প্রতিদ্ব›দ্বী ফেরদৌস আলম পাল্টা একটি মত বিনিময় সভায় বলেছেন,যিনি দলীয় মনোনয়ন লাভের আগেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা দিতে পারেন তিনি কি করে আওয়ামীলীগার হন। এরকম অযোগ্য স্বঘোষিত বিদ্রোহীকে উচিত দল থেকে বহিস্কার করা। ফেরদৌছ আলম বলেন,আমি অন্য দলের হওয়া স্বত্তেও আতাউর রহমানের মতো একজন বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিস্কারের জন্য তাহিরপুর থানা ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ আমার এলাকায় অনেক নির্যাতিত নিবেদিত আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই একজন জুলুমবাজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেননা। আতাউর রহমানের মত বিনিময় সভার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঐ সভার অন্যতম বক্তা বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী সেক্রটারী জামাত নেতা মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন,একজন তরুন বক্তা তার বক্তৃতায় আতাউর রহমানকে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। আসলে আমরা ৪ দলীয় জোট ইউপি নির্বাচন বর্জন করেছি। কিন্তু স্থানীয় স্বার্থে যোগ্য চেয়ারম্যান হিসেবে আতাউর রহমানকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি। যেহেতু এটা দলীয় মিটিং নয় তাই আতাউর রহমান ঐ সভায় দুইবার বক্তব্য রাখলেও বক্তৃতার আগে পরে দলীয় পরিচয় দেননি এবং জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু কথাটি উচ্চারন করেননি। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে তিনি হয়তো তার দলীয় পরিচয় ও দলীয় শ্লোগান এড়িয়ে গেছেন। তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সামায়ূন কবীর,ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ জিয়াউদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সেক্রেটারী মিলন কুমার তালুকদার বলেন,আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কমিটির একজন শীর্ষ সভাপতি হওয়ার পরও আতাউর রহমান প্রকাশ্য জনসভায় জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানটাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি একজন খাটি মুজিব সৈনিক বা মনেপ্রাণে আওয়ামীলীগার এখনও হতে পারেননি। তাই তাকে নৌকার মনোনয়ন প্রদানতো দূরের কথা বরং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্বান্ত গ্রহনের জন্য আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তারা বলেন,আমরা ১৫ আগস্ট বুকে কালোব্যাজ ধারন করত: জাতীয় শোক দিবস পালন করি। আর আতাউর রহমান হাইব্রীড আওয়ামীলীগার ডাঃ মাফিকের গলায় মাল্যদান করে শোক দিবসের কর্মসুচি পালন করেন। তিনি কখনও প্রকৃত আওয়ামীলীগার ছিলেননা। কূখ্যাত ইনডেমনিটি এ্যাক্টে স্বাক্ষরের দায়ে দল থেকে বহিস্কৃত সাবেক সাংসদ সৈয়দ রফিকুল হক সোহেলের ব্যক্তিগত সমর্থক তিনি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর ফুটবল প্রতীকের সমর্থনে সক্রিয়ভাবে কাজ করে সংসদ নির্বাচনে নৌকা ডুবানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তার নিজ কেন্দ্রে নৌকার বিরুদ্ধে ফুটবল প্রতীককে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন। ২০০৪ সালে এমপি নজীর হোসেনের হাত ধরে ঢাকায় গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। তারা আরো বলেন,বালিজুরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তিনি নিজে সভাপতি ও তুষা মিয়াকে সেক্রেটারী করে তার ব্যক্তিগত সমর্থক ও অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি করেছেন। এ কমিটি এলাকায় দলীয় কর্মকান্ডে কোন ভূমিকা পালন করেনা। বালিজুরী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন,২৬ নভেম্বরের সভায় আতাউর রহমান,বিগত দিনের ভূলত্রæটির জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন অথচ তিনি তার সুদের ব্যবসার জন্য নিজের মোটর সাইকেল চালক জুয়েল আহমদ ও মনসুর আলীসহ অনেক নিরীহ পরিবারকে হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন করে গ্রামছাড়া করেছেন। একবারও তাদের কাছে মাফ চেয়ে ভিটে বাড়ীছাড়া করা পরিবারগুলোকে গ্রামে ফিরিয়ে আনেননি। তাই তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আতাউর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,আমি কখনও বিএনপিতে যোগদান করিনি। গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ১৪৮ ভোট পাওয়া বিএনপির প্রার্থী ফেরদৌস আলম আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্শ্বান্বিত হয়ে আজগুবী গল্প সাজাতে তৎপর রয়েছে। ডাঃ মাফিকের গলায় মাল্যদান করে জাতীয় শোক দিবস পালনের ছবিটাকে মোবাইলে জোড়া লাগানো একটি ছবি বলে উল্লেখক্রমে তিনি বলেন,২৬ নভেম্বরের মত বিনিময় সভাটি ছিল দুই গ্রামের ঐক্যপ্রক্রিয়ার একটি অরাজনৈতিক সভা। যেহেতু এটি দলীয় সভা নয় সেহেতু আমি ঐ সভায় দলীয় নাম পরিচয় পদবী ব্যবহার করিনি এবং জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দেইনি। বিএনপি নেতা ফেরদৌস আলম বলেন,আতাউর রহমানের পিতাকে আমি নিজে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পিডিপির প্রার্থী মাহমুদ আলী সাহেবকে নিয়ে ঘরে ঘরে ছাতা প্রতীকে ভোট চাইতে দেখেছি। ২০০৪ সালে বালিজুরীর কাহার মেম্বারসহ প্রায় ৩৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল সহকারে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নজীর হোসেন এর সংসদীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন আতাউর রহমান। জামালগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন ও আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐ সময়ে তাদের যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তাদেরকে বরন করে নিয়েছিলাম। জামালগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন বলেন,আতাউর রহমানের বিএনপিতে যোগদানের প্রাক্কালে আমি এবং তাহিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম ভাইসহ আরো অনেকেই নজীর হোসেন সাহেবের সংসদীয় কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলাম। বালিজুরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মিলন কুমার তালুকদার,বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আজাদ হোসেন,উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সামায়ূন কবীর এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ জিয়াউদ্দিন বলেন,১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসুচিতে ডাঃ মাফিক মিয়াকে নিয়ে গলায় মাল্যদান করত: ফটোসেশনের ছবিটি একটি ন্যাচারেল ছবি এটি আর্টিফিশিয়েল বা জোড়া লাগানো ছবি বলে আমাদের কাছে মনে হয়না। এ ছবিটি বালিজুরী ইউনিয়নের অনেক নেতাকর্মীদের মোবাইলে সংরক্ষিত আছে। আসলে ঐ ছবিটা নিয়ে দলীয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। যদি এটি সত্যিই আতাউর রহমান হাস্যজ্বলমুখে নিজ উদ্যোগে উত্তোলন করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। তাহিরপুর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন,ফেরদৌস বিএনপির কর্মী। তার উচিত নিজের দল নিয়ে মাথা ঘামানো। আমাদের দলে কে থাকবে আর কে বহিস্কার হবে সেটা সময়মতো আমরা দেখবো। আতাউর রহমানের ভাই মশিউর রহমান তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,গত নির্বাচনের সময় ফেরদৌস আলম জেলে গিয়েছিল। ঘর হতে বের হতে পারেনি। তার ভাই ভাতিজারা তাকে ভোট দেয়নি। এইবার গণবিচ্ছিন্ন ও অসুস্থ হয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আবুল তাবোল বলে বেড়াচ্ছে। এজন্য তাকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারন করেন মশিউর। তাহিরপুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অমল কান্তি কর বলেন,আমি আগে বিষয়টি ভালভাবে অবগত হই। তারপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবো।