প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর ২০২১ , ৬:০৪:৩১ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নে বিগত দিনগুলিতে নৌকা প্রতিক ও আওয়ামীলীগের বিরোধীতাকারিরা নৌকা প্রতিক পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে জামালগঞ্জ উপজেলায় নৌকার বিরোধীতাকারি হিসেবে চিহ্নিত জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছোট ভাই মোঃ এহসানুল করিম পারভেজ এর নাম প্রথম প্রস্তাব করে উপজেলা কমিটির কাছে দিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করা সায়েম পাঠানের নাম দেয়া হয়েছে তিন নম্বরে। আর সু কৌশলে নৌকার বিরোধীতাকারী মোঃ এহসানুল করিমের নাম প্রথমে প্রস্তাব করা হয়েছে। সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এবং প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে বলিষ্ট ভূমিকা পালনকারী মাজহারুল ইসলাম রোকন গত নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের একনিষ্ট কর্মী মকবুল হোসেন আফিন্দির নাম পাটানো হয়নি কেন্দ্রে। অথচ সম্ভাব্য সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম রোকন ও মকবুল হোসেন আফিন্দিই সবচেয়ে বেশী নিবেদিত দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে। তাদের টাকা ফয়সা তেমন না থাকায় এবং ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন কে ঢাকার হোটেলে থাকা খাওয়ার জন্য বিল পরিশোধ না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও তার প্রতিভূ ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক কেন্দ্রে তাদের নাম পাটাননি। এছাড়া ১৫ বছর আগের কথিত ইউনিয়ন কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী জনতার মধ্যে। আবার টাকা নিয়ে ইউনিয়ন কমিটির ঐ বিতর্কিত সভাপতি ও তার ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক রাজাকার পরিবারের ছেলে এবং বিএনপির সভাপতির ভাইকে নৌকার মনোনয়ন প্রদানের সুপারিশ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে কথা না বলে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম.নবী হোসেন নিজের পছন্দ অনুযায়ী তালিকা করায় তৃণমূল নেতা কর্মীদের মধ্যে চলছে চাপা উত্তেজনা। স্থানীয় ও তৃণমূল আ.লীগ নেতা কর্মী সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি নামের তালিকা করা হয়েছে সেখানে বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সায়েম পাঠানের নাম কৌশলে তিন নম্বরে দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রথমে নাম দেয়া হয়েছে নৌকার রিরোধীতাকারি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছোট ভাই মো.এহসানুল করিমের নাম। এর আগেও বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করে রেজাউল করিম শামীম নৌকার প্রার্থী ইউসুফ আল আজাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নৌকার বিরোধীতা করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মোটর সাইকেল প্রতিকে নির্বাচন করেন। সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ ফাঁকা হলে আ.লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করেন সায়েম পাঠান। এ সময় তাকে পরাজিত করতে রেজাউল করিম শামীম ও তার ছোট ভাই বিএনপির প্রার্থী নূরুল হক আফেন্দীর পক্ষে নির্বাচনে ভোট চান এবং সক্রিয় ভাবে কাজ করেন। পরে ইউসুফ আল আজাদ ২০১৯ সালে মারা গেলে নৌকার প্রার্থী হন তার ছেলে ইকবাল আল আজাদ। ঐ সময় রেজাউল করিম শামীম ও তার ছোট ভাই উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এহসানুল করিম পারভেজ সরাসরি ধানের শীষের প্রার্থী নূরুল হক আফেন্দীর পক্ষে কাজ করেন। জামালগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের যুগ্ন-সধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফ বলেন, বিগত নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধীতা করেছে তারা তৎপর রয়েছে নৌকা প্রতিক পাওয়ার জন্য। কিন্তু নাম প্রস্তাবের ব্যাপারে অনেক আগে বৈঠক হলেও নাম প্রস্তাবের ব্যাপারে এখন আর কোনও বৈঠক করা হয়নি। শুনেছি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি নৌকার বিরোধীতাকারি জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতিকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন সেখানে বসেই তারা স্বাধীন ভাবে নাম পাঠাবেন। আমাদের সাথে কোনও পরামর্শ করা হয় নি কাকে নৌকার প্রার্থী দেয়া হবে। এতে নৌকার বিরোধীকারিরা নৌকা পেলে এই ইউনিয়নের ভরাডুবি হতে পারে। জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, যারা নৌকার বিরোধীতা করেছে তাদেরকে যেন নৌকার মনোনয়ন না দেয়া হয় এবং তাদের পরিবারের কাউকেও যেন মনোনয়ন না দেয়া হয়। আমি মূলত ৩০.১১.২০২১ তারিখে চিটির মাধ্যমে কেন্দ্রকে অবহিত করেছি। আমার মনে হয় যারা নৌকার বিরোধীতা করেছে তারা খন্দকার মোশতাকের অনুসারি। যদি নৌকা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্যকারিরা নৌকা পায় তা হলে জাতির জনকের অসম্মান করা হবে এবং আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোক হিসেবে কষ্ট পাবো। এতে করে দলেরও ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে জমালগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন বলেন, আমি মিটিং এ আছি পরে কথা বলি। জেলা আওয়ামীলীগের সধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন বলে, আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়ন কমিটির কাছ থেকে নাম প্রস্তাব পাওয়ার পর যাচাই বাছাই করি এবং যে কোনও অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শাল্লা উপজেলা বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত এমন একজনের নাম এসেছে সেটা আমরা উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির কাছে কৈফত চেয়েছি এ সকল ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। যে কোনও উপজেলার অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হয়। আরও অভিযোগ রয়েছে সেগুলা দেখছি আমরা। কেউ বিদ্রোহী হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবও। এর আগেও অনেককে বহিস্কার করা হয়েছে।