প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ , ৭:৩৬:৫০ অনলাইন সংস্করণ
নবীন মাহমুদ, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:- ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর মাঝে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ আগুন লাগার পর প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে চলতে থাকে। যদিও আগুন লাগার কিছু পর তীরের দিকে নিয়ে এসেছিলেন লঞ্চটির চালক, কিন্তু স্রোতের কারণে সেটি আবার মাঝে চলে যায়। এরপর ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়। যাত্রীদের মতে, মাঝ নদীতে চলে যাওয়ার পর আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তখন নদীতেও অনেকে ঝাঁপ দিতে পারেননি।আর একারণেই পুড়ে গেল ৪২ টি প্রান। যদি লঞ্চটি তীরে ভীড়তে পারত, তাহলে এতো প্রাণহানি ঘটত না। যাত্রীরা জানায়, লঞ্চে যাদের সাথে শিশু ছিল তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিল। কারণ নিজেদের জীবন বাঁচাবে না শিশুদের জীবন বাঁচাবে এ নিয়েই চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। এরমধ্যে আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চের স্টিল কাঠামোর আয়তন বেড়ে যায়। এতে কেবিনের প্রায় সব দরজা আটকে যায়। ফলে আগুনের বিষয়টি টের পেলেও অনেকেই লঞ্চের কেবিন থেকে বেড় হতে পারে নাই অনেকেই। যদিও রাত ২টার দিকে বরিশাল নদীবন্দর পার হওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া পয়েন্ট পেরুনোর পরপরই ইঞ্জিন রুমের পাশে প্রথম আগুন জ্বলে উঠে। তখন লঞ্চের স্টাফরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তারা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। এরপরই বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন প্রথমে ডেক ও কেবিনের চারপাশে থাকা পর্দায় লাগে। সেখান থেকে দ্রুত পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাত চারটার দিকে স্রোতের টানে দুলতে দুলতে একেবারে তীরে চলে আসে লঞ্চটি। পরে সামনে যারা ছিল তারা দ্রুত নেমে যায়। এরপরই লঞ্চটিতে বিকট শব্দে আগুন ধরে যায়। যারা তখনও নামতে পারেনি তারা সেখানেই মারা যায়। দূর্ঘটনার খবর শুনেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান আগুনে পোড়া লঞ্চটি পরিদর্শনে আসেন শুক্রবার সকালেই। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান-১০’ নামের লঞ্চে আগুন ক্যানটিন থেকে নয়, ইঞ্জিনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করে এবং লঞ্চটি পরিদর্শন করে কাজ করছে তদন্ত কমিটি।’ ওই সময় নৌ মন্ত্রণালয়ের ৭ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা লঞ্চটি পরিদর্শন করে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চের ছয়টি সিলিন্ডারের মধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’ নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব তোফায়েল হাসান বলেন, ‘যা কিছু দেখছি, সবই প্রাথমিক তদন্ত। চূড়ান্তভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’ তবে ইঞ্জিনরুমের পাশের ক্যানটিনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পুরো লঞ্চে আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছিলেন কেবিন বয় ইয়াসিন। ইয়াসিন বলেন, ‘লঞ্চের নিচ তলার পেছনে ইঞ্জিন রুমের পাশেই ক্যানটিন। সেখানে বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জিনরুমে। সেখানে ১৩ ব্যারেল ডিজেল রাখা ছিল। ডিজেল আগুন আরও বাড়িয়ে দেয়। ‘ইঞ্জিন রুমের পর আগুন চলে যায় ডেকের দিকে। ডেকের জানালার পর্দা থেকে দোতলায়। সেখানে প্রথমে পারটেক্স বোর্ডের সিলিংয়ে আগুন লাগে। দোতলায় একটি চায়ের দোকান ছিল। ওই চায়ের দোকানের সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়ে আগুন আরও বড় হয়ে যায়। এরপর আগুন যায় তিন তলায়।’ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ও একাধিক তদন্তকমিটির প্রাথমিক ধারণা আগুনের অগ্নুৎপাত হয় ইন্জিন রুম থেকে। এদিকে, ‘এমভি অভিযান-১০’ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩০ জনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে এ জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার পর নিহতদের গণকবরে দাফন করা হয়। এখন পর্যন্ত ৪১টি মৃতদেহ মধ্যে চার জনের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। পরে আরও পাঁচ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩২ লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে দুইজনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে অগ্নিকান্ডে ৪১ জনের মৃত দেহ উদ্ধার কারা হয়েছে লঞ্চ ও সুগন্ধা নদী থেকে এবং ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করে একনারী । এছাড়া বরিশাল শেবাচিম এ এখনো ভর্তিহয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭৫ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। এছাড়া লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করছে পোনাবালিয়া গ্রামের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশ।