• অনিয়ম / দুর্নীতি

    সুনামগঞ্জে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে আবারও অনিয়মের অভিযোগ: জেলা প্রশাসক বললেন কোন অনিয়ম বরদাশত করা হবেনা

      প্রতিনিধি ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ৭:৩৬:১১ অনলাইন সংস্করণ

    আল-হেলাল: সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে আবারও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১২ নভেম্বর ঘোষিত পরীক্ষার ফলাফল বিররনীতে এ দুর্নীতির বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। এতে দেখা যায় মালি পদে মোট ৬ জনকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। এর মধ্যে রোল ৬০ নং অর্থাৎ ঐ পদের লিখিত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী নিয়োগ প্রার্থী জেলা প্রশাসনের নিয়োগ কমিটির একজন কর্মকর্তার গাড়িচালক পদে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। গতবার জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ,জাল সনদ সরবরাহ করে নিয়োগ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ঐ কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করেছিলেন। এবার বাতিলকৃত উক্ত কর্মচারী কে আবার লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বিবরনীতে রহস্যজনকভাবে উত্তীর্ন দেখানো হয়েছে। উক্ত কর্মচারী নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে আগাম ৫ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কোন এক কর্মকর্তার স্ত্রী,পূর্বের বাতিলকৃত ঐ জুনিয়র মাস্টাররোল কর্মচারীকে নিয়োগ পাইয়ে দিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই তাকে বলে দিয়েছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও বেয়ারার পদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন কর্মচারীর ভাই কে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আফতাবনগর আবাসিক এলাকার আরেক কর্মচারীর ভাইকে কথিত নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।
    জানা যায়, গত বছর জেলা প্রশাসনের ১০ জন মাস্টাররোল কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। এর মধ্যে ৪/৫ জনকে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বিবরনীতে উত্তীর্ণ দেখিয়ে চাকুরী দানের চেষ্টা চালানোর ঘটনায় স্থানীয় দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী মাস্টাররোল কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান থেকে বিরত থাকেন। তারা বর্তমান মালি পদে কথিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রার্থী গাড়ি চালকের সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পান। কিন্তু জালিয়াতির অভিযোগে যে মাস্টাররোল কর্মচারীকে গত বছর নিয়োগ দেয়া হয়নি এবার একই কর্মচারীকে কথিত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছে কে সে প্রশ্ন এখন জেলা প্রশাসনের সাবেক মাস্টাররোল কর্মচারীদের। তাদের অভিযোগ আমরা ১০-১৫ বছর জেলা প্রশাসনে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে চাকুরী করে সুবিধাবঞ্চিত হয়ে বর্তমানে কেউ কেউ চাকুরী ছেড়েই দিয়েছি। কর্মকর্তারা আমাদেরকে কোন সুযোগ দেননি। কিন্তু এখন দেখছি অধিকতর জুনিয়র একজন মাস্টাররোল কর্মচারী যে কিনা স্যারের গাড়ি চালায় এবং যার আদৌ কোন শিক্ষাগত যোগ্যতাই নেই তাকে ভূয়া সনদে চাকরী দেয়া হচ্ছে দেখে আমাদের খুব কষ্ট লাগছে। তারা বলেন,মালি পদসহ বিভিন্ন পদের জন্য অনেক মাস্টার্স পাশ নিয়োগ প্রত্যাশী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভাল করেও পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কিন্তু গাড়িচালক কোন অদৃশ্য আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে যে সে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে বসলো বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত একজন জেষ্ট কর্মচারী বলেন,সকল পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারবনা। তবে মালি পদে কোন একজন গাড়িচালক নিয়োগ হাতিয়ে নিতে বেশী তৎপর এটা ঠিক। তারতো আদৌ কোন লেখাপড়া আছে বলে আমি জানিনা। এছাড়া গতবার স্যাররা তাকে আবেদনে জাল সনদ সংযুক্ত করার কারনেই নিয়োগ দেননি।
    অনুসন্ধানে জানা যায় মাত্র ৫১টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ লাভের জন্য প্রায় ৮ হাজারের অধিক নিয়োগপ্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। এর মধ্যে অনেক প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স পাশ। মালি,কুক,বেয়ারার,নিরাপত্তাপ্রহরী,পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে আবেদন ও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভাল করলেও তাদেরকে ফলাফল বিবরনীতে পরাজিত দেখিয়ে জাল সনদধারীকে উত্তীর্ণ দেখানোর ঘটনায় নিয়োগবঞ্চিত ও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ইব্রাহিমপুর নিবাসী নুরুল আমিন বলেন,আমার মেয়ে অনার্সের ছাত্রী। লিখিত পরীক্ষায় ভাল করলেও তাকে ফলাফল বিরনীতে পরাজিত দেখানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও দৌহিত্রী দৌহিত্ররা প্রতিভা থাকা স্বত্তেও নিয়োগ পাচ্ছেনা। লিখিত পরীক্ষায় তাদেরকে সুকৌশলে পরাজিত দেখানো হচ্ছে। শহরের পশ্চিম তেঘরিয়া আবাসিক এলাকার নিয়োগ প্রত্যাশী সেলিনা বেগম এর অভিভাবক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন,আমার মেয়ে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অধ্যয়নরত মাস্টার্সের ছাত্রী। ভাল ছাত্রী হিসেবে সারা কলেজে তার নাম রয়েছে। পরীক্ষাও ভাল দিয়েছে কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে তার রোল নেই দেখে আমি হতাশ। এবারও কিছু সংখ্যক মাস্টাররোল কর্মচারী ও অপরাপর কর্মচারীদের ভাই ভাতিজা ও সন্তানদেরকে চাকুরী দেয়া হচ্ছে নানা কৌশল ও ছলচাতুরীর আশ্রয়ে।
    অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আল ইমরান রুহুল ইসলাম এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড.মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন,আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি অবশ্যই আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি বলেন,শুধু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিংবা নিয়োগপত্র পেলেও চাকুরী সুনিশ্চিত হয়ে যায়না। চাকুরীর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ আরো বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে একজন নিয়োগ প্রার্থীকে সব জায়গায় যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। কোথায়ও যদি নিয়োগে অনিয়ম জালিয়াতি ধরা পড়ে তাহলে নিয়োগপ্রার্থীর নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ফৌজধারী ব্যবস্থা ও নিয়োগদাতার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থার বিধিবিধান আছে। আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লিখিত পরীক্ষায় রোল নম্বর প্রথমে থাকার মানে প্রথম স্থান অধিকার করা নয়। এটা ক্রমিক নম্বরের সিরিয্যাল মোতাবেক ফলাফল বিবরনীতে লেখা হয়। এছাড়া লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াও নিয়োগ প্রার্থীকে আরো কয়েকটা ধাপে যোগ্যতা ও মেধায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তিনি বলেন,আমি নিয়োগে অনিয়মের পক্ষপাতি নই। নিয়োগ কমিটির কেউ যদি দুর্নীতির আশ্রয় নেন তা মোটেই বরদাশত করা হবেনা। উপযুক্ত মেধা ও যোগ্যতা যাচাই বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করবো। শতভাগ স্বচ্ছতার সাথেই যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় সে ব্যাপারে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

    আরও খবর

    Sponsered content