প্রতিনিধি ২২ নভেম্বর ২০২১ , ৭:৫৬:০৭ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের বহুল আলোচিত শাল্লার সাবরেজিস্টার অফিসের সহায়ক মোহন মিয়ার জাকল সনদে চাকুরী ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ বছরে দিনমজুর থেকে হঠাত কোটিপতি বনে যাওয়া মোহন মিয়ার তনন্তে এবার অনুপস্থিত সাবেক মাদ্রাসা সুপারের স্বাক্ষর জাল করে হাজিরা দেখানোর অভিযোগ ওঠেছে বিচারকের আসনে বসা শাল্লার সাব-রেজিস্টার অফিসার (খন্ডকালীন) আব্দুল বাতেন এর বিরুদ্ধে! এছাড়াও অভিযোগকারী সোহেল মিয়ার আপত্তিতে সদোত্তর না দিতে পেরে প্রমাণ নষ্ট করতে হাজিরা ছিড়ে ফেলেন ডিআর অফিসের রিয়াদ নামের একজন আর এগুলো প্রকাশ্যে তদন্তে বসা বাতের সামনেই
শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভূয়া সনদে চাকুরীতে প্রবেশ ও নানা অপরাধ-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাল্লা সাব-রেজিস্ট্রার (খন্ডকালীন) মোঃ আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রিয়াদের বিরুদ্ধেও তদন্তে অংশগ্রহণকারীদের হাজিরা ছিড়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমাদের হাতে আসা ৪টি ভিডিওতে দেখা যায় গতকাল সোমবার ২২ নভেম্বর তদন্তের নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল বাতেন এজলাসে এসে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।
অভিযোগকারী মোঃ সোহেল মিয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন রাখেন শাল্লা হাসিমিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সাবেক সুপার আব্দুল কুদ্দুছ অফিসে না এসে কিভাবে অংশগ্রহণকারীদের ৫নং ক্রমিকে হাজিরা স্বাক্ষর করেন। তিনি তো আজ শাল্লায় আসেননি। ওইসময় সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুল বাতেন অভিযোগকারী মোঃ সোহেল মিয়ার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে নানা রকমের ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে সাব-রেজিস্ট্রারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর রিয়াদ সংশ্লিষ্ট হাজিরাটি ক্ষোভের সাথে ছিড়ে ফেলেন অথচ এজলাসে বসা সাব-রেজিস্ট্রার কোন ভূমিকাই রাখেননি। পরেই সোহেল মিয়া, সাব-রেজিস্ট্রার, অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়া ও রিয়াদের মধ্যে শুরু হয় বাকবিতন্ডা। সাব-রেজিস্ট্রার বাতেনের পাশে বসেই উনার অভিযুক্ত কর্মচারী মোহন ও জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর রিয়াদ অভিযোগকারীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেও বাতেন ওদেরকে নিবৃত করার চেষ্ঠা করেননি!
তদন্তের বিষয়ে অভিযোগকারী মোঃ সোহেল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,শাল্লা হাসিমিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সাবেক সুপার আব্দুল কুদ্দুছ শাল্লায় না এসেই কিভাবে তাঁর হাজিরা স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে জানতে চাইলেই অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনেই আমার উপর ক্ষিপ্তহন এবং আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদর্শন করে। তিনি আরো বলেন, তদন্তের নামে প্রহসন সৃষ্টি করতেই তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাতেনের ইশারাতেই অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়া আমার সাথে বিরূপ আচরণ করে এবং ডিআর অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রিয়াদ হাজিরা স্বাক্ষরের পাতাটি ছিড়ে ফেলেন। এপ্রতিনিধি বানিচুংয়ের বাসিন্দা সাবেক সুপার আব্দুল কুদ্দুছ এর মুঠোফোনে কল দিলে উনার স্ত্রী কল রিসিভ করে বলে সুপার সাহেব অসুস্থ আর শাল্লা যাওয়ার বিষয়টি কেউ আমাদেরকে জানায়নি।
হাজিরা ছিড়ে ফেলার বিষয়ে ডিআর অফিসের রিয়াদের সাথে সরজমিনে কথা বলতে গেলে অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়া এসে বাঁধা সৃষ্টি করে বলেন এখন আপনার যান,অফিসের পরে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই আর রিয়াদকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে অফিস সহায়ক মোঃ মোহন মিয়ার সাথে কথা বলতে বার বার তার মুঠোফেনে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাতেনের সাথে সরজমিনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আসার পূর্বেই অফিসের লোকেরা হাজিরা নিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। আমি যেহেতু তদন্তকারী কর্মকর্তা সেহেতু তদন্ত সংশ্লিষ্ট লোকজনকে আমার উপস্থিতিতে হাজিরা স্বাক্ষর নেয়া উচিৎ ছিল।
আমার আসার পূর্বে যে হাজিরা নেয়া হয়েছে তা অন্যায় হয়েছে। ডিআর অফিসের রিয়াদ কর্তৃক তদন্তে অংশগ্রহণকারী লোকজনের হাজিরা ছিড়ে ফেলার বিষয়ে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, হাজিরা ছিড়ে ফেলাটা অন্যায় হয়েছে। তিনি আরো বলেন,যেহেতু তদন্ত শুরুতেই একটা বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে, সেহেতু আজকের তদন্ত বিষয়টি স্থগিত করেছি। পর্রবর্তীতে তারিখ ঘোষনা করে তদন্ত করা হবে। ওইসময় ইচ্ছে হলে আপনারাও থাকতে পারেন।
প্রসঙ্গতঃ শাল্লা উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও সদরে অবস্থিত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের বাসিন্দা ভূমিহীন দিনমজুর হানিফ মিয়ার পুত্র অফিস সহায়ক মোহন মিয়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন (মাত্র ৪ বছরের চাকুরী জীবনে কোটি টাকার উপরে জায়গায় জমি ও প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স) সহ অবৈধভাবে জাল সনদ সৃজন করে ৮ম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী গ্রহণ, বেপরোয়া কথাবার্তা ও রূঢ় আচরণ এবং ঘুষ বানিজ্য সহ কাজ করতে আসা সেবা প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগে এনে বিগত ০৭ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মালেকের পুত্র মোঃ সোহেল আহমেদ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফরে অভিযোগ দায়ের করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সুনামগঞ্জ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার (স্মারক নং-/০২১/১৩৮৭) উপর্যুক্ত বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসার (খন্ডকালীন) মোঃ আব্দুল বাতেনকে নির্দেশ প্রদান করেন। জেলা সাব-রেজিস্ট্রার এর নির্দেশ ক্রমে গত ১৫ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসার বিষয়টি তদন্তের জন্য অভিযুক্ত মোহন মিয়াকে গতকাল ২২ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সকাল ১০ ঘটিকার সময় জরুরী ভিত্তিতে অফিসে উপস্থিত থেকে জবাব দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেছিলেন।
দৈনিক ভাটি বাংলা ডটকমকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছিল যার অধিনেই মোহন মিয়া চাকুরী করছে এবং অবৈধ টাকার পাহাড় গোরেছে এমতাবস্থায় টাড় অধীনে নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে গতকাল আমাদের আশংকাওই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।